Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 12:01 am

রোগীরা রাস্তায় ঘুরছে কেন: হাইকোর্ট

নিজস্ব প্রতিবেদক : করোনা দুর্যোগে দেশের হাসপাতালগুলোর ইনটেনসিভ কেয়ার ইউনিটের (আইসিইউ) বেড ব্যবস্থাপনার স্বচ্ছতা নিয়ে প্রশ্ন তুলে রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশ করে হাইকোর্ট বলেছেন, সবকিছু যদি ঠিকভাবে মনিটরিং করা হয় তাহলে রোগীরা কেন এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালের রাস্তায় ঘুরছে?

এ-সংক্রান্ত এক রিট আবেদনের শুনানি নিয়ে গতকাল হাইকোর্টের বিচারপতি এম. ইনায়েতুর রহিমের নেতৃত্বাধীন ভার্চুয়াল বেঞ্চ এমন মন্তব্য করেন। এরপর আদালত এ রিটের পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ১৪ জুন দিন নির্ধারণ করেন।

আদালতে রিটের পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট ইয়াদিয়া জামান। অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মুরাদ রেজা ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল অমিত তালুকদার।

রিটকারী আইনজীবী শুনানিতে আদালতকে বলেন, করোনার মধ্যে রোগীরা আইসিইউ বেড পাওয়ার আশায় একে হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে ঘুরে হয়রান হচ্ছেন। করোনাকালে স্বাস্থ্যসেবা পাওয়ার জন্য যেসব হটলাইন নাম্বার রয়েছে সেগুলোতে আমি নিজেও চেষ্টা করেছি। কিন্তু প্রথম চারটি নাম্বার কল রিসিভ করেনি। তবে পঞ্চম নাম্বারে কল দেওয়া হলে তা রিসিভ করা হয়। কিন্তু রোগী ভর্তির জন্য কোনো আইসিইউ বেড খালি রয়েছে কিনা তা জানতে চাওয়া হলে তারা কোনো তথ্য না দিয়ে কয়েকটি বেসরকারি হাসপাতালের সঙ্গে যোগাযোগ করতে বলেন। সুতরাং এর দ্বারা বিষয়টি স্পষ্ট যে, সাধারণ রোগীরা ওইসব হটলাইনে কল করে দেশের কোনো হাসপাতালে আইসিইউ বেড খালি রয়েছে কিনা, তা তারা জানতে না পেরে হাসপাতাল ঘুরে ঘুরে হয়রান হচ্ছেন।

এরপর রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীরা সারা দেশে সরকারি হাসপাতালে ৭৩৩টি আইসিইউ বেডের তথ্য আদালতের সামনে তুলে ধরেন। রাষ্ট্রপক্ষের শুনানিকালে তারা আদালতকে জানান, আইসিইউ বেড সংখ্যা বৃদ্ধি করতে সরকার বিভিন্ন উদ্যোগ নিয়েছে। কিন্তু এটি সময়সাপেক্ষ বিষয়। কেননা আইসিইউ বেড তৈরি করলেই হবে না, এর পরিচালনার জন্য দক্ষ লোকবলেরও প্রয়োজন রয়েছে। এছাড়াও বর্তমানে আইসিইউ বেডগুলোর বিষয়ে স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের কন্ট্রোলরুম থেকে সরকারিভাবে সবকিছুই মনিটরিং করা হচ্ছে।

এরপর আদালত রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবীদের উদ্দেশ করে বলেন, যদি সবকিছু মনিটরিং করা হয়েই থাকে তাহলে রোগীদের এক হাসপাতাল থেকে আরেক হাসপাতালে রাস্তায় রাস্তায় ঘুরতে হচ্ছে কেন?

আদালত আরও বলেন, শুধু আইসিইউ ব্যবস্থাপনা নয়, অক্সিজেন ব্যবস্থাপনা নিয়ে সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে। পত্রিকায় প্রকাশিত প্রতিবেদনের বরাত দিয়ে হাইকোর্ট বলেন, ১০ হাজার টাকার অক্সিজেন ২৪ হাজার টাকা কেন? এ বিষয়ে আরও পৃথক দুটি রিট দায়ের হয়েছে। আমরা রিটগুলো একসঙ্গে শুনতে চাই। তাই মামলার পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী রোববার (১৪ জুন) দিন ধার্য রাখা হলো।

এর আগে গত ৭ জুন করোনাকালীন দেশের সব বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ সরকারের তত্ত্বাবধানে অধিগ্রহণের প্রয়োজনীয় নির্দেশনা চেয়ে হাইকোর্টে রিট দায়ের করা হয়। একই সঙ্গে রিটে আইসিইউ বেডগুলো পর্যালোচনায় রাখতে অনলাইনের মাধ্যমে ‘সেন্ট্রাল বেড ব্যুরো’ চালুরও নির্দেশনা চাওয়া হয়। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ডেপুটি রেজিস্ট্রার ডা. আবদুল্লাহ আল মামুনের পক্ষে অ্যাডভোকেট ইয়াদিয়া জামান এ রিট দায়ের করেন।

স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয় এবং পরিকল্পনা মন্ত্রণালয়ের সচিব, ঢাকা ও চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকসহ সংশ্লিষ্ট ছয়জনকে এ রিটে বিবাদী করা হয়।

এরপর গত ৮ জুন এ রিটের প্রাথমিক শুনানি নিয়ে দেশের সব হাসপাতালের আইসিইউ বেড সংখ্যা, করোনা আক্রান্ত রোগীদের জন্য হাসপাতালের নির্ধারিত আইসিইউ বেড সংখ্যা এবং আইসিইউগুলোর সেন্ট্রাল মনিটরিং ব্যবস্থা রয়েছে কিনা, তা জানাতে নির্দেশ দেন হাইকোর্ট।