নিজস্ব প্রতিবেদক: করোনায় আক্রান্ত হয়ে জটিল রোগীর সংখ্যা বাড়ছে। রাজধানী ঢাকার করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতালগুলোর শূন্য আইসিইউ বেডের সংখ্যা কমছে। গতকাল স্বাস্থ্য অধিদপ্তর থেকে পাঠানো করোনাবিষয়ক নিয়মিত সংবাদ বিজ্ঞপ্তি বিশ্লেষণ করে এ তথ্য পাওয়া যায়।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার তথ্য অনুযায়ী, করোনা রোগীদের ৮০ শতাংশের মধ্যে মৃদু লক্ষণ দেখা দেয়। তাদের হাসপাতালে যেতে হয় না। বাকি ২০ শতাংশের মধ্যে ১৫ শতাংশের উপসর্গ তীব্র হয় এবং হাসপাতালে যেতে হয়। বাকি পাঁচ শতাংশের অবস্থা থাকে জটিল, তাদের আইসিইউ বেডের পাশাপাশি দরকার হয় ভেন্টিলেটর।
দেশে গত ৮ মার্চ প্রথম তিনজন করোনা রোগী শনাক্ত হওয়ার পর মে মাসের মাঝামাঝি থেকে পরিস্থিতির অবনতি হতে শুরু করে। মে মাসের শেষ সপ্তাহ থেকেই রোগী শনাক্তের হার চলে যায় ২০ শতাংশের ওপরে। এ অবস্থা চলতে থাকে আগস্টের তৃতীয় সপ্তাহ পর্যন্ত। তবে এরপর থেকে শনাক্তের হার কমতে থাক। প্রায় এক মাসের বেশি সময় থেকেই শনাক্তের হার ১০ থেকে ১২ শতাংশের মধ্যে ছিল। তবে গত ২ নভেম্বর রোগী শনাক্তের হার বেড়ে দাঁড়ায় ১৩ দশমিক ৪৭ শতাংশে।
সংক্রমণের মাঝের সময় জুন-জুলাইয়ের দিকে আইসিইউ না পেয়ে মারা যাওয়ার ঘটনাও গণমাধ্যমে এসেছে। তারপর থেকে সংক্রমণের হার কমার সঙ্গে সঙ্গে হাসপাতালের আইসিইউ শয্যা এবং সাধারণ শয্যা ফাঁকা হতে শুরু করে। শয্যা ফাঁকা থাকায় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় করোনা ডেডিকেটেড হাসপাতাল কমিয়ে আনে। তবে গত কয়েক সপ্তাহ ধরে রাজধানী ঢাকার হাসপাতালগুলোর আইসিইউতে রোগীর সংখ্যা আবার বাড়তে শুরু করেছে।
আইসিইউতে রোগী কেন বাড়ছে জানতে চাইলে রাজধানীর কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউ বিভাগের প্রধান সহকারী অধ্যাপক ডা. শাহজাদ হোসেন মাসুম বলেন, ভাইরাস আগের চেয়ে আরও বেশি তীব্রতা নিয়ে আক্রমণ করছে বলে অনুমান করা হচ্ছে। আবার ঢাকার বাইরে থেকেও জটিল রোগীদের এখানে রেফার করা হচ্ছে। কারণ, ঢাকার বাইরে আইসিইউ ব্যবস্থাপনা তত উন্নত না। আবার বেসরকারি হাসপাতালের আইসিইউ সবার পক্ষে এফোর্ট করাও সম্ভব হয় না।
অধিদপ্তরের বিজ্ঞপ্তি জানাচ্ছে, রাজধানী ঢাকার কুয়েত বাংলাদেশ মৈত্রী সরকারি হাসপাতাল, কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল এবং মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আইসিইউ বেড রয়েছে যথাক্রম ১৬, ১০ এবং ১৪টি। এ তিন হাসপাতালের একটি বেডও বর্তমানে ফাঁকা নেই।
অপরদিকে, আরেক বড় হাসপাতাল ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের নতুন ভবন করোনা রোগীদের জন্য নির্ধারিত হয়েছে। ওই ভবনে আইসিইউ বেড রয়েছে ২১টি, ফাঁকা আছে মাত্র তিনটি। রাজারবাগ পুলিশ হাসপাতালে থাকা ১৫টি আইসিইউ বেডের মধ্যে রোগী রয়েছে আটটিতে, ফাঁকা রয়েছে সাতটি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিকেল বিশ্ববিদ্যালয়ের ১৬টি আইসিইউ বেডে রোগী রয়েছেন ১০ বেডে, ফাঁকা রয়েছে ছয়টি। ২৫০ শয্যার শেখ রাসেল গ্যাস্ট্রোলিভার হাসপাতালে আইসিইউ বেড রয়েছে ১৬টি, রোগী আছেন চারটিতে, ফাঁকা রয়েছে ১২টি।
আনোয়ার খান মডার্ন মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১০টি বেডের মধ্যে রোগী আছেন পাঁচটিতে, ফাঁকা রয়েছে বাকি পাঁচটি। সরকারি কর্মচারী হাসপাতালে আইসিইউ বেড রয়েছে ছয়টি, রোগী আছেন পাঁচজন, ফাঁকা রয়েছে একটি। আসগর আলী হাসপাতালে থাকা ৩৬টি আইসিইউ বেডের
মধ্যে রোগী আছেন ২৫টিতে, বাকি ১১টি ফাঁকা। স্কয়ার হাসপাতালে বেড রয়েছে ২৫টি, রোগী আছেন আটজন, ফাঁকা রয়েছে ১৭টি। ইবনে সিনা হাসপাতালে থাকা ছয়টি বেডের সবগুলোতে রোগী ভর্তি আছেন। ইউনাইটেড হাসপাতালের ২২ বেডে রোগী আছেন ১৫ জন, বাকি সাতটি বেড এখনও শূন্য রয়েছে। এভার কেয়ার হাসপাতালে রয়েছে ২০টি আইসিইউ বেড, রোগী আছেন ১৮ জন, শূন্য আছে দুটি। ইম্পালস হাসপাতালে আইসিইউ বেড রয়েছে ৫৬টি, রোগী আছেন ১০ জন, ফাঁকা রয়েছে ৪৬টি। এএমজেড হাসপাতালে ১০টি বেডের মধ্যে রোগী আছেন সাতজন, বাকি তিনটি ফাঁকা। আর বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের ১২টি বেডের সবগুলোতে রোগী ভর্তি আছেন।
অর্থাৎ রাজধানী ঢাকার ৩১৪টি আইসিইউ বেডের মধ্যে রোগী আছেন ১৯৪ জন আর ফাঁকা রয়েছে ১২০টি। তবে কিছু দিন আগেও রোগীর তুলনায় শূন্য বেডের সংখ্যাই বেশি ছিল।
চট্টগ্রামে করোনার জন্য ডেডিকেটেড থাকা ১০টি হাসপাতালে এখনও শূন্য বেডের সংখ্যাই বেশি। সেখানে আইসিইউ বেড রয়েছে ৩৯টি, রোগী আছেন ১১ জন। ফাঁকা রয়েছে ২৮টি । সারা দেশে করোনা রোগীদের জন্য আইসিইউ রয়েছে ৫৬৪টি। রোগী ভর্তি আছেন ২৭৪ জন, আর ফাঁকা রয়েছে ২৯০টি।