রোগের নাম ডায়াবেটিস

আমাদের শরীরে ইনসুলিন হরমোনের সম্পূর্ণ বা আপেক্ষিক ঘাটতির কারণে বিপাকজনিত গোলযোগ সৃষ্টি হয়ে রক্তে গ্লুকোজের পরিমাণ বৃদ্ধি পায় এবং এক সময় তা পস্রাবের সঙ্গে বেরিয়ে আসে। এই সামগ্রিক অবস্থাই ডায়াবেটিস। রোগটি ছোঁয়াচে বা সংক্রামক নয়। ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে তাড়াতাড়ি শরীর ভেঙে পড়ে। হার্ট, কিডনি, চোখ, দাঁত, নার্ভ সিস্টেমের গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গগুলো সম্পূর্ণ বা আংশিক ধ্বংস হতে পারে অনিয়ন্ত্রিত ডায়াবেটিসের কারণে।

স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা বলেছেন, কোনো অজানা কারণে প্যানক্রিয়াসের বেটা সেল ধ্বংসপ্রাপ্ত হয়। ফলে ইনসুলিন তৈরিতে প্যানক্রিয়াস সম্পূর্ণ অথবা আংশিক অক্ষম হয়ে পড়ে। ইনসুলিনের অভাবের কারণে রক্তের গ্লুকোজ দেহের বিপাক ক্রিয়ায় অংশ নিতে পারে না; ফলে রক্তে গ্লুকোজের মাত্রা বেড়ে যায় এবং সংশ্লিষ্ট ব্যক্তি ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন।

 

প্রকারভেদ

স্বাস্থ্যবিজ্ঞানীরা ডায়াবেটিসকে মূলত ৩ ভাগে ভাগ করেছেন। টাইপ-১, টাইপ-২ ও গর্ভকালীন ডায়াবেটিস।

টাইপ-১

ডায়াবেটিস রোগীর পাঁচ থেকে ১০ ভাগ টাইপ-১ ভুক্ত। সাধারণত ৩০ বছরের কম বয়সের লোক, ছোট ছেলে মেয়ে ও যুবক-যুবমহিলাদের মধ্যে টাইপ-১ ডায়াবেটিস দৃষ্ট হয়। তবে যে কোনো বয়সে টাইপ-১ ডায়াবেটিস হতে পারে। তীব্র পিপাসা, ঘন ঘন প্রস্রাব, ক্ষুধার আধিক্য, ওজন কমে যাওয়া, দৃষ্টিশক্তি হ্রাস ও চরম দুর্বলতা। টাইপ-১ ডায়াবেটিস শনাক্ত করা না গেলে কিংবা ইনসুলিনের মাধ্যমে চিকিৎসা শুরু না করা হলে রোগী ডায়াবেটিক কোমায় উপনীত হতে পারে।

টাইপ-২

ডায়াবেটিকদের প্রায় ৯০ ভাগই টাইপ-২ ডায়াবেটিসভুক্ত। বার্ধক্য, স্থূলতা, কর্মহীনতা, মা-বাবার ডায়াবেটিস থাকা এর কারণ। প্রায় ৮০ ভাগ রোগী স্থূল। বর্তমানে ৩০ বছরের নিচে এ ধরনের ডায়াবেটিস দেখা যাচ্ছে এবং তা দিন দিন বেড়েই চলেছে।

প্যানক্রিয়াসে যথেষ্ট ইনসুলিন উৎপাদিত হওয়া সত্তেও অজ্ঞাত কারণে আমরা ইনসুলিনের পরিপূর্ণ ব্যবহার করতে পারি না। এ ধরনের অবস্থা সৃষ্টি হওয়ার কয়েক বছর পরই ইনসুলিন উৎপাদন কমে যায় এবং টাইপ-১-এ রূপান্তরিত হয়। অনেক ক্ষেত্রে টাইপ-২ ভুক্ত রোগী শারীরিক কোনো অসুবিধা অনুভব করেন না; ফলে চিকিৎসকের পরামর্শ নেন না। বিনা চিকিৎসায় বছরের পর বছর পার করেন এবং বিভিন্ন জটিলতায় আক্রান্ত হয়ে চিকিৎসকের শরণাপন্ন হন।

টাইপ-৩

গর্ভকালীন ডায়াবেটিস: কিছু নারীর গর্ভধারণের শেষদিকে এ  রোগ হয় এবং বাচ্চা জন্মের পরপরই প্রসূতি সাধারণত মুক্ত হয়ে যান। যেসব গর্ভবতী এ ধরনের ডায়াবেটিস হয়, তাদের ২০ থেকে ৫০ ভাগ সাধারণত পাঁচ থেকে ১০ বছরের মধ্যে টাইপ-২ ধরনের ডায়াবেটিসে আক্রান্ত হন। এক তথ্য বিবরণীতে দেখা গেছে, যুক্তরাষ্ট্রের তিন থেকে পাঁচ ভাগ গর্ভবতী গর্ভকালীন ডায়াবেটিসের রোগী। গর্ভকালীন ডায়াবেটিস প্রসূতি, ভ্রƒণ ও সদ্যপ্রসূত শিশু সবার জন্য বিপজ্জনক হতে পারে। এজন্য প্রয়োজনে ইনসুলিন নিয়ে এ ডায়াবেটিস নিয়ন্ত্রণে রাখা আবশ্যক।

 

কীভাবে বুঝবেন

ডায়াবেটিস হলে সাধারণত যেসব লক্ষণ ও উপসর্গ দেখা দেয়:

ঘন ঘন প্রস্রাব

খুব বেশি পিপাসা লাগা

বেশি ক্ষুধা পাওয়া

যথেষ্ট খাওয়া সত্তে¡ও ওজন কমে যাওয়া

ক্লান্তি ও দুর্বলতা বোধ করা

ক্ষত শুকাতে দেরি হওয়া

খোশ-পাঁচড়া, ফোঁড়া প্রভৃতি চর্মরোগ দেখা দেওয়া

চোখে কম দেখা

 

ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত থাকলে কী হবে

ডায়াবেটিস অনিয়ন্ত্রিত রাখার বিপদ অনেক। স্নায়ুতন্ত্রের জটিলতা, হƒদরোগ, দৃষ্টিশক্তিহীনতা, কিডনির কার্যক্ষমতা লোপ পাওয়া, মাড়ির প্রদাহ, চুলকানি, পাঁচড়া, যৌনতা লোপ প্রভৃতির সঙ্গে ডায়াবেটিসের সম্পর্ক গভীর। ডায়াবেটিক প্রসূতিদের ক্ষেত্রে মৃত শিশুর জš§দান, অকালে সন্তান প্রসব, অধিক ওজনের শিশুর জš§দান হতে পারে। এসব রোগীর উচ্চরক্তচাপ থাকলে জটিলতা আরও বেড়ে যেতে পারে। ধূমপান এ  ক্ষেত্রে জটিলতাকে ত্বরান্বিত করে।

 

প্রফেসর ডা. এমএ হাসানাথ

এনডোক্রাইনোলজি বিভাগ        বিএসএমএমইউ, ঢাকা

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০