শেয়ার বিজ ডেস্ক: পবিত্র রমজান সিয়াম সাধনার মাস। পরকালীন পাথেয় অর্জনের অভাবনীয় মৌসুম এ মাস। সিয়াম-সাধনা, ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আসকার এবং তাজকিয়া ও আত্মশুদ্ধির ভরা বসন্ত এ সময়।
দীর্ঘ ১১ মাসের পাপ থেকে মুক্ত হওয়ার অপূর্ব সুযোগ এনে দেয় এ মাস। রোজা ইসলাম ধর্মের পাঁচ স্তম্ভের অন্যতম। রোজা ইসলামের মৌলিক ইবাদতের মধ্যে অন্যতম।
রোজায় সুস্থ থাকার জন্য সুষম খাদ্য খাওয়া উচিত। একজন মানুষের স্বাভাবিক জীবনযাপনের জন্য যে পরিমাণ খাবার প্রয়োজন হয় তা-ই সুষম খাবার। সাধারণত একজন প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের দৈনিক প্রায় ২০০০ থেকে ২৫০০ ক্যালরি সমপরিমাণ খাবার খেতে হয়। তবে রোজায় ১০০০ থেকে ১৫০০ ক্যালরি খাবার যথেষ্ট। কারণ রোজায় অল্প খাবার গ্রহণ করলেই অটোফ্যাজি প্রক্রিয়ার মাধ্যমে শরীরের ক্ষতিকর সব কোষ পরিষ্কার হয়। তাই অন্য সময় যে পরিমাণ খাবার খাওয়া যায় রোজায় তার চেয়ে এক তৃতীয়াংশ কম খেতে হবে।
এ সময় কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা জাতীয় খাবার যেমন চাল, আটা, ময়দা, আলু, ছোলা বুট, খেজুর, ফলমূল প্রভৃতি এক গ্রাম শর্করা থেকে চার ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়।
প্রোটিন তথা আমিষজাত খাবার যেমন মাছ, মাংস, ডিম, ডাল প্রভৃতি। এক গ্রাম প্রোটিন থেকে চার ক্যালরি শক্তি পাওয়া যায়।
ফ্যাট বা চর্বি জাতীয় খাবার বা তৈলাক্ত খাবার। এক গ্রাম ফ্যাট থেকে ৯ ক্যালরি পাওয়া যায়।
দৈনিক খাবারের ৬৫ শতাংশ হবে কার্বোহাইড্রেট বা শর্করা (ভাত, মুড়ি, রুটি, আলু, খেজুর, কলা, ছোলা বুট ও অন্য ফলমূল)। ২৫ শতাংশ হবে প্রোটিন বা আমিষ (মাছ, মাংস ও ডিম)। ১০ শতাংশ ফ্যাট (তেল)।
ইফতারি ও ডিনার মিলিয়ে ৬০০ থেকে ৭০০ গ্রাম ক্যালরি খেতে হবে আর সেহরিতেও একই পরিমাণ। যারা ওজন কমাতে চান, তারা ইফতারিতে ৩০০ ক্যালরি খাবেন, সেহরিতে ৩০০ ক্যালরি পরিমাণ, সঙ্গে ভিটামিন এবং মিনারেল সমৃদ্ধ খাবার ও পর্যাপ্ত আঁশ জাতীয় খাবার।
ইফতারি ও সেহরিতে যা খেতে পারেন। ইফতারিতে ৬০০ ক্যালরি পেতে হলে যা খেতে হবে:
# খেজুর শর্করা জাতীয় খাবারের মধ্যে অন্যতম। খেজুরের মধ্যে শর্করা ছাড়াও প্রায় সব ধরনের ভিটামিন ও খনিজ উপাদান রয়েছে চারটা মাঝারি (৩৫ গ্রাম) খেজুরের মধ্যে প্রায় ১০০ ক্যালরি রয়েছে। তাই ইফতারিতে চার থেকে পাঁচটা খেজুর খাওয়া যেতে পারে।
# ফলমূলের মধ্যে ইফতারিতে কলা অন্যতম। একটা কলায় প্রায় ১০৫ ক্যালরি রয়েছে। তাই ইফতারির তালিকায় একটা করে কলা খাওয়া যেতে পারে।
# অন্য ফলমূল খাওয়া যেতে পারে। যেমন তরমুজ, আপেল ও কমলা প্রভৃতি ফল পানিশূন্যতা রোধে অনেক উপকারী।
# ছোলা বুট খাওয়া যেতে পারে। ৫০ গ্রাম ছোলা বুটের মধ্যে প্রায় ১৮০ ক্যালরি রয়েছে। ছোলা বুট ২০-২৫ গ্রামের চেয়ে বেশি না খাওয়াই ভালো। কারণ এটা পরিপাক হতে দীর্ঘ সময় লাগে।
# একটা ডিম খাওয়া যেতে পারে। একটা ডিমের মধ্যে ৮০ ক্যালরি রয়েছে।
# ডাবের পানি, ইসপগুলের ভুসি, লেবুর শরবত প্রভৃতি খেতে পারেন। পানিশূন্যতা রোধে অনেক উপকারী।
ইফতারিতে যা পরিহার করা উচিত:
# ইফতারিতে অতিরিক্ত তৈলাক্ত খাবার কিংবা তেলে ডুবিয়ে যায়, যেসব খাবার তৈরি করা হয় যেমন পেঁয়াজু, আলুর চপ, বেগুনি, চিকেন ফ্রাই, জিলাপি প্রভৃতি যতটুকু সম্ভব পরিহার করতে হবে। কারণ এই খাবারগুলো গ্যাস্ট্রিকের সমস্যা তৈরি করে।
# একসঙ্গে বেশি খাবার না খাওয়া উত্তম।
# টক জাতীয় ফলে যদিও প্রচুর পরিমাণ ভিটামিন-সি থাকে, তথাপি টক জাতীয় ফলে সাইট্রিক অ্যাসিডও থাকে। তাই রোজার সময় টক ফল সাবধানতার সঙ্গে খেতে হবে। ভালো হয় রাতের খাবার শেষ করে খেলে। কারণ সাইট্রিক অ্যাসিড সমৃদ্ধ খাবারগুলো এসিডিটির পরিমাণ বৃদ্ধি করে। তাই সতর্কতা অবলম্বন দরকার।
# টমেটো ইফতারির সময় অনেকের প্রিয় খাবার। তবে টমেটোতে প্রচুর পরিমাণ সাইট্রিক অ্যাসিড ও ম্যালিক অ্যাসিড থাকে, যা পাকস্থলীতে ইরিটেশন করে। তাই টমেটো বেশি পরিমাণ না খাওয়াই উত্তম।
# ঝালজাতীয় খাবার পাকস্থলীতে এসিডিটির পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই কাঁচামরিচ কিংবা অতিরিক্ত ঝাল খাবার পরিহার করে চলতে হবে।
# গরম পানীয় যেমন চা ও কফি পাকস্থলীতে হাইড্রোক্লোরিক অ্যাসিড ক্ষরণের পরিমাণ বাড়িয়ে দেয়। তাই রোজার সময় চা, কফি প্রভৃতি পরিহার করা উচিত।
ডিনার কিংবা রাতের খাবারে যা খাবেন:
প্রথমত ইফতারিতে যে খাবারগুলোর কথা বলা হয়েছে, সেগুলো খেলে পরে ডিনার করা প্রয়োজন হয় না। তারপরও যদি কারও বেশি ক্ষিধে লাগে, তবে সে এক কাপ পরিমাণ ভাত, সঙ্গে মাছ, ডিম আর ডাল-সবজি খেতে পারেন। অবশ্যই একটা লাইট মিল হতে হবে। অতিরিক্ত খাবার বর্জনীয়। ইফতার করলে পরে তারাবির নামাজের পর একটু ক্ষিধে লাগা স্বাভাবিক। তখন অনেক বেশি খেতে মন চায় কিন্তু তখন হালকা দুই থেকে তিনটা খেজুর খেলেই ক্ষিধে চলে যাবে। তাই তখন অনেক ভারী খাবারের কোনো দরকার নেই। কারণ এই ক্ষুধা বেশিক্ষণ থাকবে না। ৩০ মিনিট সহ্য করলে এমনিতে ক্ষুধা চলে যাবে।
সেহরির খাবার: ভাত, মাছ বা মুরগি-ডাল, সবজি প্রভৃতি পরিমাণমতো।