রোজায় চিনির দাম কমতে পারে সয়াবিনে ‘সুযোগ নেই’

নিজস্ব প্রতিবেদক : রমজান সামনে রেখে প্রয়োজনের তুলনায় বেশি পরিমাণে নিত্যপণ্য মজুত রয়েছে বলে জানিয়ে রোজার শুরুতে চিনির দাম কমার আভাস দিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি।

গতকাল রোববার বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা-সংক্রান্ত সভায় তিনি বলেন, ‘রোজার প্রথম দিকে অধিক হারে কেনাকাটা করে মজুত করেন ভোক্তারা। এতে অনেক সময় সাময়িকভাবে দাম বেড়ে যায়। পুরোনো অভ্যাসশবত এমন কেনাকাটা না করলে দাম বাড়বে না।

‘এমনকি ব্যবসায়ীদের প্রতিশ্রুতি অনুযায়ী কিছু কিছু পণ্যের দাম রোজায় কমতেও পারে। বিশেষ করে রোজার প্রথম সপ্তাহে চিনির দাম কমতে পারে।’

চিনির নতুন দাম প্রসঙ্গে মন্ত্রী বলেন, ‘চিনিতে ভ্যাট-ট্যাক্সে সুবিধা দেয়া হয়েছে। এই সুবিধার আওতায় পণ্য এখনও পুরোপুরি বাজারে আসেনি। তারা কয়েকটা দিন সময় চেয়েছে। রমজানের প্রথম সপ্তাহে নতুন দাম চলে আসবে।’

দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা-সংক্রান্ত টাস্কফোর্সের ষষ্ঠ সভায় বক্তব্য দিচ্ছিলেন বাণিজ্যমন্ত্রী। সেখানে চিনি ছাড়াও ভোজ্যতেল, মসুর ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ, খেজুর, ডিম ও ব্রয়লার মুরগি নিয়ে আলোচনা হয়।

রোজার শুরুতে চিনির দাম কমার আভাস দিলেও সয়াবিন তেলে দাম কমানোর ‘সুযোগ দেখছেন না’ টিপু মুনশি।

দেশে প্রচুর পরিমাণ তেল মজুত রয়েছে বলে জানিয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা যে দাম নির্ধারণ করেছি (সয়াবিন তেল), অনেক হিসাব করে দেখেছি, দাম কমানোর সুযোগ আমরা পাচ্ছি না। আন্তর্জাতিক বাজারে কমলে দেশে আবার ডলারের দাম বেড়ে গিয়ে সেবা সমন্বয় হয়ে যায়। তবে বাড়ার কোনো কারণও এই সময়ের মধ্যে তৈরি হয়নি।’

রোজায় এবার অধিকাংশ ব্যবসায়ী বাজারে নিত্যপণ্যের দাম নিয়ন্ত্রণে রাখতে ভূমিকা রাখবে বলে প্রত্যাশা করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।

‘তবে এর পরেও কিছু অসাধু ব্যবসায়ী যে থাকবে না, সেই নিশ্চয়তা দেয়া যায় না। এক্ষেত্রে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীও বসে থাকবে না। সেভাবেই বলে দেয়া হয়েছে।’

দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে গণমাধ্যমের ‘দায়িত্বশীল ভূমিকা’ প্রত্যাশা করে মন্ত্রী বলেন, ‘অনেক সময় অসাধু ব্যবসায়ীদের কারণে কারওয়ান বাজারের তুলনায় উত্তরা বা অন্য কোনো কিচেন মার্কেটে পণ্যের দামে কেজিতে ৩০-৪০ টাকা ব্যবধান হয়ে যায়। এই ক্ষেত্রে কারওয়ান বাজারের দাম উল্লেখ না করে কেবল উত্তরার দাম উল্লেখ করলে বাজারে ভুল মেসেজ যাবে।

‘অন্য ব্যবসায়ীরাও সেই দাম শুনে প্রভাবিত হয়ে দাম বাড়ানোর চিন্তা করবে। সুতরাং সাংবাদিকদেরও বাজার নিয়ন্ত্রণে ভূমিকা আছে। কোনো প্যানিক যাতে সৃষ্টি না হয়, সেই দিকটি মাথায় রেখে প্রতিবেদন করতে হবে।’

রাজধানীতে পণ্য পরিবহনের ক্ষেত্রে চাঁদাবাজি বন্ধে স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে এরই মধ্যে অবহিত করার কথা জানান বাণিজ্যমন্ত্রী।

তিনি বলেন, ‘রোজায় বেগুন, টমেটো, শসা ও মুরগির চাহিদা বাড়ে। আমরা স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে বলেছি, এসব শাকসবজি নিয়ে যেসব গাড়ি আসবে, সেগুলো পথে যাতে কোথাও চাঁদাবাজির কবলে না পড়ে। আমরা অত্যন্ত শক্তভাবে এটা পর্যবেক্ষণ করব। খাদ্যসামগ্রী নিয়ে আসা ট্রাক হাইওয়েতে কোথাও কেউ থামাতে পারবে না।’

এদিকে বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অত্যাবশ্যকীয় দ্রব্যমূল্য মনিটরিং সেলের লিখিত পরামর্শে বলা হয়, দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতি বিবেচনায় গতবারের তুলনায় এবার রোজায় ভোগ্যপণ্যের চাহিদা ১৫ থেকে ২০ শতাংশ কম থাকবে।

দেশে ভোজ্যতেলের (সয়াবিন, পাম ও সরিষা) বার্ষিক চাহিদা ২০ লাখ টন, স্থানীয় উৎপাদন দুই লাখ তিন হাজার টন। বছরে ২০ লাখ টন অপরিশোধিত সয়াবিন তেল ও পাম তেল আমদানি করা হয়। এই খাতে কয়েক ধাপে শুল্ক প্রত্যাহারের পর বর্তমানে পাঁচ শতাংশ ভ্যাট আরোপিত আছে।

প্রতি মাসে এক লাখ ৪০ হাজার টন থেকে এক লাখ ৫০ হাজার টন ভোজ্যতেলের চাহিদা থাকলেও রোজায় তা দ্বিগুণ বেড়ে তিন লাখ টনের চাহিদা তৈরি হয়। সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, আদানি গ্রুপের বাংলাদেশ এডিবল অয়েল ও বসুন্ধরা গ্রুপ মিলিয়ে ভোজ্যতেলের মজুত রয়েছে তিন লাখ দুই হাজার ১৬৩ টন, পাইপলাইনে আছে দুই লাখ ৭৫ হাজার ৮৪৫ টন।

দেশে বছরে ২০ লাখ টন চিনির চাহিদার বিপরীতে দেশের আখ থেকে আসে ৩০ হাজার টন। প্রতি বছর ২০ লাখ থেকে ২২ লাখ টন অপরিশোধিত চিনি আমদানি করা হয়। সেখান থেকে পরিশোধনকালে ৬ দশমিক ৫ শতাংশ ‘সিস্টেম লস’ হয়।

চিনি আমদানিতে প্রতি টনে তিন হাজার টাকা সিডি, ৩০ শতাংশ আরডি, ১৫ শতাংশ ভ্যাট ও চার শতাংশ এটি রয়েছে। সব মিলিয়ে চিনিতে ৬১ শতাংশ শুল্ক ছিল। সর্বশেষ এসআরও মাধ্যমে সিডি শূন্য ও আরডি ২৫ শতাংশে নামিয়ে আনা হয়েছে।

সিটি গ্রুপ, মেঘনা গ্রুপ, এস আলম গ্রুপ, বসুন্ধরা গ্রুপ, আব্দুল মোনেম গ্রুপ ও দেশবন্ধু গ্রুপ মিলিয়ে চিনির মজুত আছে দুই লাখ ২৫ হাজার ৫৬৩ টন; পাইপলাইনে আছে পাঁচ লাখ ৯৯ হাজার ৫০ টন।

দেশে মসুর ডালের চাহিদা আছে ছয় লাখ টন, স্থানীয়ভাবে উৎপাদিত হয় দুই লাখ ২০ হাজার টন, আমদানি হয় প্রায় চার লাখ টন। মাসিক চাহিদা ৪০ হাজার টন হলেও রোজার মাসে চাহিদা হয় এক লাখ টন। মশুর ডাল আমদানিতে কোনো শুল্ক নেই।

দেশে পেঁয়াজের চাহিদা বছরে ২৫ লাখ টন। স্থানীয়ভাবে উৎপাদন হয় ২৭ লাখ টন। সেখান থেকে ২৫ শতাংশ বার্ষিক সংরক্ষণজনিত ক্ষতি বিবেচনা করা হয়। প্রতি মাসে দুই লাখ টন পেঁয়াজের চাহিদা থাকলেও রোজার মাসে তা চার লাখ টন ধরা হচ্ছে। পেঁয়াজ আমদানিতেও বর্তমানে চার শতাংশ হারে সিডি কার্যকর আছে।

ছোলার বার্ষিক চাহিদা দেড় লাখ টন, এর মধ্যে কেবল রোজার মাসেই এক লাখ টনের চাহিদা তৈরি হয়। প্রতিবছর প্রায় দুই লাখ টন করে ছোলা আমদানি হয়ে থাকে। স্থানীয়ভাবে বছরে প্রায় পাঁচ হাজার টন ছোলা উৎপাদিত হয়।

খেজুরের বার্ষিক চাহিদা এক লাখ টন; এর মধ্যে রোজার মাসে চাহিদা ৫০ হাজার টন।

২০২১-২২ অর্থবছরে দুই হাজার ৩৩৫ কোটি ৩৫ লাখ ডিম উৎপাদিত হয়েছিল। জনপ্রতি ১০৪টি ডিমের চাহিদা বিবেচনায় ডিমের বার্ষিক চাহিদা এক হাজার ৭৮৫ কোটি ৬৮ লাখ। ডিম আমদানিতে ৩৩ শতাংশ শুল্ক আরোপিত আছে।

বছরে মুরগির মাংসের চাহিদা ৪০ লাখ টন। স্থানীয়ভাবে ২০২১-২২ অর্থবছরে ৩১ কোটি ১৮ লাখ মুরগি উৎপাদন হয়েছে। মুরগির মাংস আমদানিতে ৮১ দশমিক ৬৪ শতাংশ শুল্ক আরোপিত আছে। পোলট্রি ফিড আমদানিতে বিশেষ এসআরও এর মাধ্যমে শুল্ক অব্যাহতি দেয়া হয়েছে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০