নিজস্ব প্রতিবেদক: তিন দিন পরই শুরু হবে মুসলমানদের সিয়াম সাধনার মাস রমজান। আর এ রমজানকে ঘিরে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী বেশি লাভের আশায় অত্যাবশ্যকীয় কিছু পণ্যের সরবরাহে ঘাটতি বলে দাম বাড়িয়ে দিয়েছেন। দাম বাড়া পণ্যের তালিকায় রয়েছে চিনি, পেঁয়াজ, আদা, রসুন, আলু। সপ্তাহের ব্যবধানে পণ্যগুলোর দাম পাঁচ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২০ টাকা পর্যন্ত দাম বেড়েছে। প্রতি কেজি চিনি, পেঁয়াজ, আলুতে পাঁচ টাকা, আদা, রসুনে ২০ টাকা দাম বেড়েছে।
একই সঙ্গে বেড়েছে সব ধরনের মাছের দাম। প্রতি কেজিতে ৩০ থেকে সর্বোচ্চ ১০০ টাকা বেড়েছে। তবে এতদিন অস্বস্তি দেওয়া ডিম, তেল, সবজি ও মাংসের দাম কমেছে। মাংসের দাম কেজিতে ১০ থেকে ৫০ টাকা কমেছে। রোজা সামনে রেখে মুরগি ও ডিমের দাম কমলেও শাকসবজি ও মাছের দাম আগের মতো চড়া রয়েছে। তবে চলতি সপ্তাহে নতুন করে বাড়েনি পেঁয়াজের দাম। গতকাল বাজার ঘুরে এ তথ্য জানা গেছে।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, বাজারে মানভেদে দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৩৫ থেকে ৩৬ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৮ থেকে ৩২ টাকা। সে হিসেবে প্রতি কেজি পেঁয়াজের দাম বেড়েছে গড়ে পাঁচ টাকা। আর প্রতি কেজি আলুর বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ২২ টাকা, যা আগে ছিল ১৫ টাকা। আর বাজার ও মানভেদে আমদানি করা চায়না রসুন ও আদা বিক্রি হচ্ছে প্রতি কেজি ১২০ টাকা; যা গত সপ্তাহে ছিল ১০০ টাকা। দেশি রসুন ও আদা প্রতি কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৩০ টাকা, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ১১০ টাকায়। সে হিসেবে প্রতি কেজি আদা-রসুনের দাম বেড়েছে ২০ টাকা। তবে চিনির দাম খুচরা বাজারে বাড়লেও মিলগেটে কমেছে দাম। বর্তমানে প্রতিকেজি চিনি বিক্রি করা হচ্ছে ৫৫ থেকে ৫৬ টাকা, যা গত সপ্তাহে বিক্রি হয়েছিল ৫০ থেকে ৫১ টাকায়। সে হিসেবে দাম গড়ে পাঁচ টাকা বেড়েছে।
পেঁয়াজের দামের বিষয়ে ব্যবসায়ীরা জানান, গত সপ্তাহে পেঁয়াজের দাম একটু বেড়েছিল। তবে এ সপ্তাহে নতুন করে পেঁয়াজের দাম বাড়েনি। রোজায় পেঁয়াজের দাম খুব বেশি বাড়বে না। কারণ এবার পেঁয়াজের ফলন খুব ভালো হয়েছে। বাজারে পেঁয়াজের কোনো ঘাটতি নেই। এদিকে গত ২৮ এপ্রিল থেকে কেজিতে দুই টাকা কমেছে তেলের দাম। এখন থেকে বোতলজাত এক লিটার সয়াবিন তেলের দাম ১০২ টাকা, দুই লিটার ২০২ টাকা এবং পাঁচ লিটার ৫০০ টাকা; যা আগে ছিল যথাক্রমে ১০৪, ২০৬ এবং ৫১০ টাকা। বর্তমানে তেলের ইনভয়েস মূল্য এক লিটার ৯০ টাকা, দুই লিটার ১৭৮ ও পাঁচ লিটার ৪৪৫ টাকা; যা আগে ছিল যথাক্রমে ৯২ টাকা, ১৮২ টাকা ও ৪৫৫ টাকা।
বাজার ঘুরে দেখা যায়, ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৫০-১৫৫ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬০-১৬৫ টাকা। গত সপ্তাহে ২১০-২২০ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া লাল লেয়ার মুরগির দাম কমে ১৮০-১৯০ টাকা বিক্রি হচ্ছে। আর পাকিস্তানি কক বিক্রি হচ্ছে ২৪০-২৫০ টাকা কেজি, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৭০-২৮০ টাকা কেজি। এ হিসাবে সপ্তাহের ব্যবধানে ব্রয়লার মুরগির দাম কেজিতে ১০ টাকা এবং পাকিস্তানি কক ও লাল লেয়ার মুরগির দাম ৩০ টাকা কমেছে। মুরগির দাম কমলেও অপরিবর্তিত রয়েছে গরু ও খাসির মাংসের দাম। বাজারভেদে গরুর মাংস বিক্রি হচ্ছে ৫৩০-৫৫০ টাকা কেজি। আর খাসির মাংস বিক্রি হচ্ছে ৭৫০-৮৫০ টাকা কেজি।
মুরগির দামের বিষয়ে ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতি বছরের মার্চ-এপ্রিলে ব্রয়লার মুরগির দাম বেড়ে যায়। এবারও বেড়েছে। তবে এবারের দাম বাড়ার প্রবণতা আগের থেকে বেশি ছিল। এখন দাম কমতে শুরু করেছে। সামনে আরও কমবে। কারণ রোজার সময় ব্রয়লার মুরগির চাহিদা কম থাকে।
আরও জানান, মানুষের মধ্যে ধারণা ব্রয়লার মুরগি গরম খাবার। রোজার সময় ব্রয়লার মুরগি খেলে পেট খারাপ করতে পারে। এ কারণে রোজার সময় ব্রয়লার মুরগির চাহিদা কম থাকে। ফলে দাম কমে যায়। আমাদের ধারণা, রোজায় ব্রয়লার মুরগির দাম কমে ১২০ টাকায় চলে আসতে পারে। এদিকে টানা দুই সপ্তাহ দাম কমার পর ডিমের দাম কিছুটা স্থিতিশীল রয়েছে। শুধু ডিম বিক্রি করেন এমন ব্যবসায়ী গত সপ্তাহের মতো ডিমের ডজন বিক্রি করছেন ৮০-৮৫ টাকায়। খুচরা বিক্রেতারা প্রতি পিস ডিম বিক্রি করছেন সাত-আট টাকায়।
কাঁচাবাজার ঘুরে দেখা গেছে, আগের মতোই চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে সব ধরনের সবজি। বাজার ও মানভেদে কাঁচা পেঁপে বিক্রি হচ্ছে ৫০-৭০ টাকা কেজি। শসা ৫০-৬০, বেগুন ৬০-৭০, পাকা টমেটো ৩০-৪০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে। দাম অপরিবর্তিত থাকা অন্য সবজির মধ্যে পটোল ৪০-৫০, সজনে ডাটা ৬০-৮০, বরবটি ৬০-৭০, কচুর লতি ৭০-৮০, করলা ৬০-৭০, ধুন্দল ৭০-৮০, গাজর ৩০-৪০, ঢেঁড়স ৪০-৫০ টাকা কেজি বিক্রি হচ্ছে।
মাংসের দাম কমলেও সপ্তাহের ব্যবধানে কেজিতে ৩০ থেকে ১০০ টাকা বেড়েছে মাছের দাম। বাজারে তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি, পাঙাশ ১৮০ থেকে ২০০ টাকা কেজি, রুই ৩৫০ থেকে ৬০০ টাকা কেজি, বাইলা ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, আইড় ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা, পাবদা ৬০০ থেকে ৭০০ টাকা কেজি, টেংরা কেজি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, চিংড়ি ৭০০ থেকে ৮০০ টাকা, শিং ৬০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি, বোয়াল ৫০০ থেকে ৮০০ টাকা কেজি, চিতল ৮০০ থেকে ১০০০ টাকা কেজি।
এছাড়া এখনও চড়া দামে বিক্রি হচ্ছে ইলিশ। বাজারে ৮০০ থেকে ৯০০ গ্রাম ওজনের প্রতিটি ইলিশের দাম দুই হাজার টাকা। নদীর ৯০০ থেকে এক কেজি ওজনের প্রতি কেজি ইলিশ তিন হাজার টাকা চাওয়া হচ্ছে। এক কেজি ১০০ গ্রাম থেকে এক কেজি ২০০ গ্রাম ওজনের বড় ইলিশও কিছু বাজারে দেখা গেছে। দাম চাওয়া হচ্ছে প্রতি কেজি চার হাজার টাকা। আর দেড় কেজি বা দুই কেজির কাছাকাছি ওজনের ইলিশের প্রতি কেজির দাম চাওয়া হচ্ছে সাড়ে পাঁচ হাজার টাকা। তবে ৫০০ গ্রামের নিচে এক হালি ইলিশের দাম তিন হাজার টাকা। তবে বার্মিচ ও সাগরের ইলিশের দাম তুলনামূলকভাবে কম।