নিজস্ব প্রতিবেদক: রোজার আগে আরেক দফা বাড়ানো হয়েছে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম। তিন সপ্তাহ আগে ২০ টাকায় এক কেজি পেঁয়াজ পাওয়া যেত। এখন সেই পেঁয়াজের কেজি ৬০ টাকায় পৌঁছেছে। সরকারি হিসাবে, গত এক সপ্তাহে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে ৫ শতাংশের বেশি। এছাড়া নতুন করে বেড়েছে গরিবের মোটা চালের দাম। ৫০ টাকার নিচে এখন আর কোনো চাল পাওয়া যায় না। আর চিকন চালের দাম গিয়ে ঠেকেছে ৭৫ টাকা কেজি।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য অনুযায়ী, গত এক সপ্তাহে চিকন চালের দাম বেড়েছে কেজিতে তিন শতাংশের বেশি। অর্থাৎ গত সপ্তাহে খুচরা বাজারে চালের দাম কেজিতে ২ থেকে ৪ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। আর ২০২১ সালে একই সময়ের তুলনায় কেজিতে চালের দাম বেড়েছে ৫ টাকা থেকে ১৫ টাকা পর্যন্ত। এছাড়া মসুর ডালের দাম গত বছরের তুলনায় বেড়েছে ৩৫ টাকা পর্যন্ত। গত বছর এ সময় ফার্মের মুরগির ডিম পাওয়া যেত ৩৩ টাকা হালি, এখন তা বিক্রি হচ্ছে ৪০ টাকা হালি দরে।
ভোক্তাদের অনেকেই বলছেন, তেল, পেঁয়াজ, চাল-ডালসহ দ্রব্যমূল্যের ঊর্ধ্বগতির ফলে সংসার চালাতে হিমশিম খাচ্ছেন নি¤œ ও মধ্য আয়ের মানুষ।
গতকাল রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে দেখা গেছে, মোটা চাল গুটি স্বর্ণা বিক্রি হচ্ছে ৫০-৫২ টাকা কেজি দরে। ২০২১ সালের একই সময়ে এই চালের দাম ছিল ৪৩ থেকে ৪৫ টাকা কেজি। অর্থাৎ কেজিপ্রতি দাম বেড়েছে ৫ থেকে ৭ টাকা। বাজারে পাইজাম ২৮ এবং ২৯ চাল বিক্রি হচ্ছে ৫৫-৫৮ টাকা কেজিতে। গত বছরের একই সময়ে এই চাল বিক্রি হয়েছে ৪৫-৪৮ টাকা কেজি।
বাজারে ভালো মিনিকেট চাল খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৭০ থেকে ৭৪ টাকা কেজি। পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৬২ টাকা কেজি। মাঝারি মানের মিনিকেট বিক্রি হচ্ছে ৬২ থেকে ৬৫ টাকায়, যা পাইকারি বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজি। এ ছাড়া নি¤œমানের মিনিকেট চাল বিক্রি হচ্ছে ৬০ টাকা কেজিতে। গত বছর এই চাল সর্বোচ্চ ৫৪ থেকে ৫৮ টাকা কেজিতে বিক্রি হয়েছে। ভালো মানের নাজিরশাইল খুচরা বিক্রি হচ্ছে ৭৫ টাকা কেজিতে। মাঝারি মানের নাজির বিক্রি হচ্ছে ৭২ টাকা এবং নি¤œমানের নাজির বিক্রি হচ্ছে ৬৮ থেকে ৭০ টাকা কেজি। গত বছর এই চাল বিক্রি হয়েছিল ৫৮-৬৫ টাকা কেজিতে। অবশ্য কাটারি ভোগ ১০০ টাকা এবং চিনিগুঁড়া চাল বিক্রি হচ্ছে ৯০ থেকে ৯৫ টাকা কেজি।
গত সপ্তাহে ৫০ থেকে ৫৫ টাকা কেজি বিক্রি হওয়া দেশি পেঁয়াজের দাম আরও বেড়েছে। এখন এক কেজি পেঁয়াজ বিক্রি হচ্ছে ৬০-৬৩ টাকায়। সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবি বলছে, গত এক সপ্তাহে কেজিতে পেঁয়াজের দাম বেড়েছে সাড়ে ৫ শতাংশের বেশি। টিসিবির তথ্য বলছে, শুক্রবার দেশি পেঁয়াজ বিক্রি হয় ৬০ টাকায়।
এদিকে রাজধানীর বাজারে বড় দানার মসুর ডালের কেজি বিক্রি হয়েছে ৯৫ থেকে ১০০ টাকা। ২০২১ সালে একই সময়ে মসুর ডাল বিক্রি হয়েছে কেজিপ্রতি ৬৫ টাকা ৭০ টাকা। একইভাবে মাঝারি মানের মসুর ডাল কেজিপ্রতি বিক্রি হচ্ছে ১০৫ থেকে ১১০ টাকা, যা গত বছরে বিক্রি হয়েছিল ৭৫ থেকে ৮৫ টাকা। আর ছোট দানার ডাল বিক্রি হচ্ছে ১১৫ থেকে ১২০ টাকা কেজিতে, যা এক বছর আগে বিক্রি হয়েছিল ১০০ থেকে ১১০ টাকা কেজিতে।
শুক্রবার মুগ ডাল বিক্রি হয়েছে ১৩৫ টাকা কেজিতে। ২০২১ সালের একই সময় যা বিক্রি হয়েছিল ১০০ থেকে ১৪০ টাকা কেজিতে। এ ছাড়া অ্যাংকর ডাল কেজিপ্রতি বিক্রি হয়েছে ৪৮ থেকে ৫০ টাকায়। যা এক বছর আগে ছিল ৩৮ থেকে ৪৫ টাকা দরে। ছোলা ৭০-৮০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
এগুলোর বাইরে নতুন করে বেড়েছে ডিমের দাম। ফার্মের মুরগির ডিমের দাম এখন হালিপ্রতি ৪০ টাকায় গিয়ে ঠেকেছে, গত সপ্তাহে যা ছিল ৩৮ টাকা হালি। সরকারের হিসাবে গত এক সপ্তাহে ডিমের দাম বেড়েছে তিন শতাংশের বেশি। আর ফার্মের মুরগির এই ডিমের দাম গত এক বছরে বেড়েছে ৩১ দশমিক শতাংশ। গত বছরের এই সময়ে প্রতি হালি ২৮ টাকা বা তার কমে পাওয়া যেত।
গত সপ্তাহের তুলনায় খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে লিটারে ৫ টাকার মতো। ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম বেড়েছে ১০ টাকার মতো। আর এক লিটার বোতলজাত সয়াবিনের দাম বেড়েছে লিটারে ২ টাকার মতো।
টিসিবির তথ্য বলছে, গত বছরের এই সময়ে প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন ১১৬ টাকায় পাওয়া গেছে। এখন সেই সয়াবিন ১৬৭ টাকায় কিনতে হচ্ছে। অর্থাৎ ক্রেতাদের এক লিটার সয়াবিন কিনতে ৫০ টাকা বেশি লাগছে। সাধারণত, খোলা সয়াবিন তেল খায় নি¤œ মধ্যবিত্ত শ্রেণির মানুষেরা। সরকারের হিসাবে গত এক বছরে খোলা সয়াবিন তেলের দাম বেড়েছে প্রায় ৩৬ শতাংশ। ৫ লিটার বোতলজাত সয়াবিন কিনতে লাগছে ৭৯০ টাকা। গত সপ্তাহে যা ৭৮০ টাকায় পাওয়া যাচ্ছিল।
এদিকে শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজারের ব্যবসায়ীরা ব্রয়লার মুরগির কেজি বিক্রি করছেন ১৬০ থেকে ১৬৫ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৭০ থেকে ১৭৫ টাকা। আর সোনালি মুরগির কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৯০ থেকে ৩২০ টাকা, যা গত সপ্তাহে ছিল ২৬০ থেকে ২৯০ টাকা।
শীত বিদায় নিতে শুরু করলেও আর কমেনি সবজির দাম। সবজির বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের মতো এ সপ্তাহেও বেশি দামে সবজি বিক্রি হচ্ছে। ব্যবসায়ীরা ছোট ফুলকপির পিস বিক্রি করছেন ৩৫ থেকে ৪০ টাকা। আর বড় ফুলকপি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। পাকা টমেটোর কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৫০ টাকা। শিমের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৬০ থেকে ৭০ টাকা। শালগমের (ওল কপি) কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। বেগুনের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৭০ টাকা। গাজরের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২০ থেকে ৩০ টাকা। মুলার কেজি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৪০ টাকা। লাউ প্রতি পিস বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকা। লাল শাকের আঁটি ১০ থেকে ১৫ টাকা, পালং শাকের আঁটি বিক্রি হচ্ছে ১০ থেকে ১৫ টাকা। কাঁচকলার হালি বিক্রি হচ্ছে ৩০ থেকে ৩৫ টাকা।
মাছের বাজার ঘুরে দেখা গেছে, গত সপ্তাহের মতো শোল মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৪০০ থেকে ৬৫০ টাকা। তেলাপিয়া ও পাঙাশ মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১৫০ থেকে ১৭০ টাকা। রুই মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৮০ থেকে ৪৫০ টাকা। একই দামে বিক্রি হচ্ছে কাতল মাছ। শিং ও টাকি মাছের কেজি বিক্রি হচ্ছে ২৫০ থেকে ৩৫০ টাকা। এক কেজি ওজনের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে এক হাজার থেকে ১২০০ টাকা। ছোট ইলিশের কেজি বিক্রি হচ্ছে ৫০০ থেকে ৬০০ টাকা। নলা মাছ বিক্রি হচ্ছে ১৭০ থেকে ২০০ টাকা কেজি। চিংড়ি বিক্রি হচ্ছে ৬০০ থেকে ৬৫০ টাকা কেজি।