নিজস্ব প্রতিবেদক: রোজার আগে গতকাল শেষ শুক্রবার। তাই বাজারে ক্রেতাদের উপস্থিতি ছিল তুলনামূলক বেশি। বাজারে আলু, দেশি রসুন, বেগুন, সব ধরনের মুরগির মাংস, গরুর মাংস এবং প্রায় সব ধরনের ডাল বিক্রি হচ্ছে বেশি দামে। নিত্যপণ্যের এমন উচ্চ মূল্যে ক্রেতাদের মধ্যে অসন্তোষ দেখা যায়।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ঘুরে এমন চিত্র দেখা গেছে। বাজার করতে আসা ক্রেতারা বলছেন, সরকার রোজায় দ্রব্যমূল্য নিয়ন্ত্রণে থাকবে বললেও সেটা হচ্ছে না। সবকিছুর দামই বেড়েছে। অন্যদিকে বিক্রেতারা বলছেন, ক্রেতারা বেশি চাহিদা দেখাচ্ছে বলেই সবকিছুর দাম বাড়তি।
গতকাল বাজারে বেশ কিছু সবজির দাম উল্লেখ করার মতো কমেছে। এসব সবজির মধ্যে রয়েছে মটরশুঁটি, ঢ্যাঁড়স, পটোল, উচ্ছে। এগুলোর দাম কমেছে ২০ থেকে ৬০ টাকা পর্যন্ত। আবার রোজায় চাহিদা বেশি থাকে এমন সবজির দাম বেড়েছে। এর মধ্যে রয়েছে আলু ও সব ধরনের বেগুন। এই দুই সবজির দাম বেড়েছে যথাক্রমে ৫ টাকা ও ২০ টাকা। এসব সবজি ছাড়া অন্যান্য সবজির দাম কিছুটা বাড়া-কমা বা অপরিবর্তিত রয়েছে।
গতকাল বাজারে শিম ৬০ টাকা, টমেটো ৫০ টাকা, পেঁয়াজ কলি ৪০ টাকা, মটরশুঁটি ৬০ টাকা, সাদা মুলা ৬০ টাকা, দেশি গাজর ৪০ টাকা, লম্বা বেগুন ৮০ টাকা, সাদা গোল বেগুন ৮০ টাকা, কালো গোল বেগুন ৮০ টাকা, শসা ৬০-৮০ টাকা, খিরাই ৪০ টাকা, উচ্ছে ১০০ টাকা, করলা ১৬০ টাকা, পেঁপে ৪০ টাকা, মিষ্টিকুমড়া ৩০ টাকা, ঢ্যাঁড়স ১০০ টাকা, পটোল ১০০ টাকা, চিচিঙ্গা ৬০ টাকা, ধুন্দল ৬০ টাকা, বরবটি ১২০ টাকা, কচুর লতি ১০০ টাকা, সজনে ২০০ টাকা, কচুরমুখি ১২০, কাঁচা মরিচ ১০০ টাকা, ধনেপাতা ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। আর প্রতিটি লাউ ১০০ টাকা, ফুলকপি ৫০ টাকা, বাঁধাকপি ৫০ টাকা করে বিক্রি হচ্ছে।
বাজার করতে আসা এক চাকরিজীবী বলেন, সরকার বলেছিল রোজার বাজারে জিনিসপত্রের দাম কম থাকবে। সেরকম কিছু তো দেখছি না। উল্টো বেগুনের দাম বেড়ে গেছে। রোজায় চাহিদা বাড়লেই কী ব্যবসায়ীরা বেশি নেবে, ক্ষোভ নিয়ে বলেন তিনি।
বাজার করতে আসা আরেক ক্রেতা বলেন, যখন যেটা বেশি লাগে তখন সেটারই দাম বেড়ে যায়। অদ্ভুত এক পরিস্থিতির মধ্য দিয়ে আমরা যাচ্ছি।
এদিকে সবজি বিক্রেতারা বলছেন ভিন্ন কথা। তারা বলছেন, ক্রেতারা এক দিনে সব কিনতে চায়। এতে বাজারে নির্দিষ্ট কিছু পণ্যের চাহিদা বেড়ে যায়। আর এটা আগে বুঝতে পেরেই জিনিসপত্রের দাম বাড়িয়ে দেয় পাইকারি ব্যবসায়ীরা। তখন বাজারে এসে কাস্টমাররা বলেন দাম বেশি। তারা আগে-পরে কিনলেই কিন্তু এমন হয় না।
এছাড়া বাজারে মানভেদে দেশি পেঁয়াজ ৯০-১১০ টাকা, লাল ও সাদা আলু ৩৫ টাকা, নতুন দেশি রসুন ১৫০ টাকা, চায়না রসুন ২০০ টাকা, ভারতীয় আদা ২২০, চায়না আদা ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এক্ষেত্রে গত সপ্তাহের তুলনায় দেশি রসুনের দাম ১০ টাকা এবং আলুর দাম ৫ টাকা বেড়েছে। আর পেঁয়াজের দাম ২০-৩০ টাকা কমেছে।
আলু কিনতে আসা আকাশ বলেন, কয়েক দিন আগেই ৪ কেজি আলু ১০০ টাকায় কিনেছি ভ্যানগাড়ি থেকে। আজকে কিনতে হচ্ছে ৩৫ টাকা কেজি। রোজা আসতেই দাম বেড়ে গেছে। ছোট মসুর ডাল ১৪০ টাকা, মোটা মসুর ডাল ১১০ টাকা, বড় মুগ ডাল ১৫০ থেকে ১৬০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ১৬০ থেকে ১৮০ টাকা, খেসারি ডাল ১১০ থেকে ১১৫ টাকা, বুটের ডাল ১১০ থেকে ১১৫ টাকা, ছোলা ১১০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। এ ক্ষেত্রে দেখা যায়, বড় মুগ ডাল ১০ টাকা, ছোট মুগ ডাল ২০ টাকা, খেসারি ডাল ৫ টাকা, বুটের ডাল ৫ টাকা বেশি দামে বিক্রি হচ্ছে।
এছাড়া মুদি দোকানের অন্যান্য পণ্যের দাম রয়েছে অপরিবর্তিত। শুক্রবার প্রতি লিটার বোতলজাত সয়াবিন তেল ১৬৩ টাকা, খোলা সয়াবিন তেল ১৪৯ টাকা, প্যাকেটজাত চিনি ১৪৫ টাকা, খোলা চিনি ১৪০ টাকা, দুই কেজি প্যাকেট ময়দা ১৫০ টাকা, আটা দুই কেজির প্যাকেট ১৩০
টাকা, খোলা সরিষার তেল প্রতি লিটার ১৯০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। এক্ষেত্রে বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম কমেছে প্রতি লিটারে ১০ টাকা করে।
এছাড়া বাজারে ইলিশ মাছ ওজন অনুযায়ী ১৪০০-২২০০ টাকা, রুই মাছ ৩৮০-৫৫০ টাকা, কাতল মাছ ৪০০-৭০০ টাকা, কালিবাউশ ৫০০-১০০০ টাকা, চিংড়ি মাছ ৬০০-১২০০ টাকা, কাঁচকি মাছ ৪০০ টাকা, কৈ মাছ ৬০০-১২০০ টাকা, পাবদা মাছ ৫০০-৮০০ টাকা, শিং মাছ ৪০০-১২০০ টাকা, টেংরা মাছ ৬০০-১০০০ টাকা, মেনি মাছ ৫০০-৮০০ টাকা, বেলে মাছ ১২০০ টাকা, বোয়াল মাছ ৭০০-১৪০০ টাকা, রূপচাঁদা মাছ ১০০০-১২০০ টাকা, শোল মাছ ৭০০-১২০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
ব্রয়লার মুরগি ২১৫-২২৫ টাকা, কক মুরগি ৩১৫-৩২৫ টাকা, লেয়ার মুরগি ৩২০ টাকা, দেশি মুরগি ৫০০ থেকে ৬৮০ টাকা, গরুর মাংস ৭৫০ থেকে ৭৮০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে। মুরগির লাল ডিম ১৩৫ টাকা এবং সাদা ডিম ১২৫ টাকা প্রতি ডজন বিক্রি হয়েছে।
অন্যান্য সময় ব্রয়লার মুরগি ২০০ টাকার মধ্যে থাকলেও গতকাল বিক্রি হয়েছে বেশি দামে। কক মুরগির ক্ষেত্রেও একই চিত্র, ৩০০ টাকার মধ্যে বিক্রি হলেও গতকাল বেশি দামে বিক্রি হয়েছে। দেশি মুরগির দাম ৫০০ থাকলেও গতকাল ৬৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। একইভাবে গরুর মাংস ৩০ টাকা বেশিতে ৭৮০ টাকায় বিক্রি হয়েছে।