নিজস্ব প্রতিবেদক: রোজার মাসে বেশি প্রয়োজন হয় এমন পণ্য আমদানি স্বাভাবিক রাখতে ‘কিছু ডলার নির্দিষ্ট করে’ রাখতে বাংলাদেশ ব্যাংককে চিঠি দেয়া হবে বলে জানিয়েছেন বাণিজ্যমন্ত্রী টিপু মুনশি। গতকাল সচিবালয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় আয়োজিত ‘দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি পর্যালোচনা সংক্রান্ত’ টাস্কফোর্স কমিটির পঞ্চম সভা শেষে সাংবাদিকদের তিনি এ কথা বলেন।
সভায় আসছে রোজার মাস সামনে রেখে দ্রব্যমূল্য ও বাজার পরিস্থিতি স্বাভাবিক রাখার বিষয়ে আলোচনা বেশি গুরুত্ব পেয়েছে।
সভা শেষে বাণিজ্য সচিব তপন কান্তি ঘোষ সাংবাদিকদের সামনে বলেন, প্রয়োজনে এলসি (ঋণপত্র) ছাড়াই পণ্য আমদানির কিছু অনুমোদন দেয়ার ক্ষমতা তার আছে। কেউ যদি এলসি নিয়ে জটিলতায় পড়েন, বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের কাছে জানালে বিবেচনা মতো অনুমতি দিয়ে দেয়া হবে।
তিনি বলেন, এপ্রিলের শুরুতে রমজান মাস শুরু হবে। সেই হিসাবে হাতে এখনও তিন মাস সময় আছে। তবে আন্তর্জাতিক বাজার থেকে তেল, চিনিসহ আরও কিছু পণ্যের এলসি খোলার পর সেই পণ্য এনে খোলাবাজারে সরবরাহে দুই থেকে আড়াই মাস সময় লাগে।
ইউক্রেন-রাশিয়া যুদ্ধের বৈশ্বিক পরিস্থিতিকে কারণ হিসেবে দেখিয়ে ২০২২ সালের মাঝামাঝি থেকে বাজারে ঘুরেফিরে বিভিন্ন পণ্যের দাম বাড়ছে। অনেক ভোগ্যপণ্যের দাম এখনও চড়া। মাঝে মধ্যে তেল, চিনিসহ বেশ কয়েকটি পণ্যের সরবরাহ সংকটও তৈরি হয়; তখন সেগুলোর দামও অস্বাভাবিকভাবে বাড়িয়ে দেন ব্যবসায়ীরা বলে অভিযোগও ওঠে।
এমন পরিস্থিতিতে ডলার সংকটের কারণে রোজার পণ্য আমদানিতে কিছুদিন থেকে সমস্যা হওয়ার কথা বলে আসছিলেন ব্যবসায়ীরা। এলসি খুলতে তারা ডলারের ব্যবস্থা করার জন্য বাংলাদেশ ব্যাংকসহ সরকারের বিভিন্ন পর্যায়ে বলে আসছিলেন।
এমন প্রেক্ষাপটে গতকাল বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, ‘ব্যবসায়ীদের কাছ থেকে একটা পরামর্শ এসেছে সেটা হচ্ছে তেল-চিনিসহ রোজায় প্রয়োজন হয় এমন কিছু নিত্যপণ্য আমদানির জন্য কিছু ডলার সংরক্ষণ করে রাখা। এটা একটা ভালো প্রস্তাব, আমরা এটা নিয়ে বাংলাদেশ ব্যাংকের কাছে লিখব।’
আগের বছরের অভিজ্ঞতা তুলে ধরে তিনি বলেন, ‘রোজা শুরুর এক সপ্তাহ আগে ক্রেতাদের বাড়তি কেনাকাটা বাজারে পণ্য সংকট সৃষ্টির অন্যতম কারণ হয়ে দাঁড়ায়। আবার রোজার মাঝামাঝি সময়ে দোকানিরা ক্রেতার অপেক্ষায় বসে থাকেন। আমি সবাইকে আশ্বস্ত করতে চাইÑকোনো পণ্যের সংকট হবে না। আপনারা বাড়তি কিনবেন না, রোজার আগে যতটুকু কিনতেন, রোজায়ও ততটুকু কিনুন।’
সভায় রোজার মাস সামনে রেখে ভোজ্যতেল, চিনি, মসুর ডাল, ছোলা, পেঁয়াজ, খেজুর, চাল-গমের মতো নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যপণ্যের চাহিদা, জোগান ও মূল্য পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়।
টিপু মুনশি বলেন, ‘চলমান বিশ্ব পরিস্থিতিতে আমদানিনির্ভর পণ্যগুলো আমদানির জন্য এলসি খোলার ক্ষেত্রে কিছু সমস্যা হচ্ছে। ডলারের কিছুটা সংকট রয়েছে, সেটা এখন সবাই জানে। বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দিয়ে বাণিজ্য মন্ত্রণালয় কাজ করছে।’
সভায় উপস্থিত প্রধানমন্ত্রীর বেসরকারি শিল্প ও বিনিয়োগ উপদেষ্টা সালমান এফ রহমান বলেন, দেশের মানুষের প্রয়োজনীয় পণ্য ও স্বাভাবিক মূল্য নিশ্চিত করতে সরকার সবধরনের পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। পণ্যের সঠিক মূল্য নির্ধারণের ক্ষেত্রে সতর্ক হতে হবে। যাতে ন্যায়সংগত মূল্য নিশ্চিত করা যায়।
তিনি বলেন, ‘সরকার সার্বিক বিষয়ে অবগত আছে, নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানিতে এলসি খোলাসহ সব ধরনের সহযোগিতা সরকার প্রদান করবে। সব ব্যবসায়ীকে সততার সঙ্গে সঠিক ব্যবসা করতে হবে।’