রোজার প্রথম দিনেই সব পণ্যের দাম বেড়েছে ২০-৫০ টাকা

নিজস্ব প্রতিবেদক: রোজার প্রথম দিনেই সব ধরনের সবজির দাম বেড়েছে। ছোলা, খেজুর, চিনি, ডাল, গরু ও মুরগির মাংস, গুঁড়োদুধ, শসা, লেবুসহ সব পণ্য বাড়তি দামে বিক্রি হচ্ছে। শুধু তাই নয়, রোজাকে কেন্দ্র করে ফল ব্যবসায়ীরাও অতি মুনাফায় মেতেছেন বলেও অভিযোগ ক্রেতাদের।

বাজারে প্রতি কেজি ছোলা বিক্রি হচ্ছে ৮০-৯০ টাকা। ইফতারির অন্যতম অনুষঙ্গ ছোলার দাম বাড়া নিয়ে অসন্তোষ প্রকাশ করেছেন ক্রেতারা। দাম বাড়ার জন্য খুচরা বিক্রেতারা দুষছেন পাইকারি বাজারকে। বাজারে খোলা চিনি বিক্রি হচ্ছে ৮৫ টাকায়, যা এক সপ্তাহ আগেও ছিল ৮০ টাকা। ১০-১৫ টাকা বেড়ে দেশি মসুরের ডাল বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১২৫-১৩০ টাকায়। মাঝারি দানার মসুর ডালের কেজি বিক্রি হচ্ছে ১০০-১১০ টাকায়, যা কিছুদিন আগেও ছিল ৮০-৯০ টাকা। মানভেদে প্রতি কেজি খেজুরের দাম ৫০ থেকে ১০০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে। লেবুর হালি ভালো মানের বিক্রি হচ্ছে ৫০ থেকে ৬০ টাকায়, যা গত সপ্তাহেও ছিল ৩০-৪০ টাকা। শসা বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৮০ থেকে ১০০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ৫০-৬০ টাকায় বিক্রি হয়েছে। একই অবস্থা বেগুনের বেলায়ও। বেগুন বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ৮০-১০০ টাকায়, যা গত সপ্তাহে ছিল ৪০ থেকে ৫০ টাকা।

বাজারে বুটের ডালের বেসন বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৩০ টাকায়, যা কিছুদিন আগে ছিল ৮০-৯০ টাকার মধ্যে। আর খেসারির ডালের বেসন বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১০০-১১০ টাকায়, যা কিছুদিন আগে ছিল ৮০-৯০ টাকার মধ্যে।

এদিকে রমজানের প্রভাব পড়েছে মাংসের বাজারেও। ব্রয়লার মুরগি বিক্রি হচ্ছে কেজিপ্রতি ১৭৫ থেকে ১৮০ টাকা দরে, যা গত সপ্তাহে ছিল ১৬৫ টাকা। সোনালি মুরগি ৩১০ টাকা থেকে ৩২০ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহের তুলনায় গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৫০ টাকা বেড়ে ৭০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। মাংস ব্যবসায়ীরা জানিয়েছেন, রোজা উপলক্ষে হাটে গরুর দাম বাড়ায় তারাও দাম বাড়িয়েছেন।

খিলগাঁওয়ের মাংস ব্যবসায়ী মোস্তাক মিয়া বলেন, হাটে গরুর দাম বেড়ে যাওয়ায় বাধ্য হয়েই আমরা মাংসের দাম বাড়িয়েছে। রমজান উপলক্ষে প্রতি গরু পাঁচ থেকে সাত হাজার টাকা বাড়তি দাম দিয়ে কিনতে হচ্ছে। দাম না বাড়িয়ে উপায় নেই বলে তিনি উল্লেখ করেন।

অন্যদিকে বরাবরের মতো দাম বাড়ানোর ক্ষেত্রে পিছিয়ে নেই ফল বাজারও। আপেল, কমলা, নাসপাতি, আঙ্গুর, পেঁপে, তরমুজসহ সব ফল রমজান উপলক্ষে কেজিতে ২০ থেকে ৫০ টাকা বেড়েছে।

ক্রেতাদের অভিযোগ, বিক্রেতারা অতি মুনাফার আশায় প্রতিবছর রোজা এলেই পণ্যের দাম অতিরিক্ত বাড়িয়ে দেন। এটা শুধু এদেশেই হয়। বহির্বিশ্বে রোজা এলেই প্রত্যেক পণ্যের দাম কমে, কিন্তু আমাদের দেশে পণ্যের পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও দাম বেড়ে যায়।

তবে প্রতিবছরের মতো এবারও সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, রোজায় নিত্যপণ্যের দাম স্বাভাবিক থাকবে। এজন্য সব ধরনের ব্যবস্থা আগে থেকে নেয়া হয়েছে। কিন্তু বাস্তব চিত্র উল্টো। প্রতিবছরের মতো এবারও সব পণ্যের দাম বাড়লেও কোনো মনিটরিং ব্যবস্থা নেই বলে অভিযোগ করেছেন ভোক্তাসাধারণ।

গরম বাজার আরও গরম করে দিয়ে রোজার শুরুতেই বেগুনের দাম এক লাফে পৌঁছে গেছে ১০০ টাকায়। মুখরোচক বেগুনি বাঙালির ইফতার আয়োজনের অন্যতম অনুষঙ্গ। ফলে রোজা এলে বেগুনের কদর প্রতিবছরই বেড়ে যায়, ব্যবসায়ীরাও সে সুযোগ নিতে সংযম দেখান না খুব একটা।

গতকাল রোববার প্রথম রোজার সকালে মালিবাগ রেলগেট, শান্তিনগর ও সেগুনবাগিচার বাজার ঘুরে দেখা গেল খুচরা বিক্রেতারা প্রতি কেজি বেগুন ১০০ টাকায় বিক্রি করছেন। দুদিন আগেও বেগুন বিক্রি হয়েছে ৬০-৭০ টাকায়। আর এক সপ্তাহ আগে ছিল ৫০ টাকা।

কারওয়ান বাজারের পাইকারি বিক্রেতা হামিদুল্লাহ বললেন, ‘রমজানে বেগুনের চাহিদা বেশি থাকে, তাই দামও বেশি পাওয়া যায়। চাহিদার কারণে এ সময়ে প্রচুর বেগুন আসে মফস্বল থেকে।’

ব্যবসায়ীদের সঙ্গে কথা বলে জানা গেল, শনিবার রাতে উত্তরবঙ্গের কয়েকটি জেলা এবং ময়মনসিংহ থেকে বেগুন নিয়ে কারওয়ান বাজারে এসেছে অন্তত আটটি ট্রাক। সকালে রাজধানীর বিভিন্ন বাজারে সরবরাহ করা হয়েছে সেই বেগুন।

বাসাবাড়ির পাশাপাশি রেস্তোরাঁ ও খাবারের দোকানেও প্রচুর বেগুন দরকার হয় এ সময়। বিকাল থেকে দোকানের সামনে টেবিল বসিয়ে বিক্রি হবে হরেক রকমের ইফতার সামগ্রী। এর মধ্যে বেগুনিও থাকবে। বেইলি রোডের একটি রেস্তোরাঁর সহকারী ব্যবস্থাপক মোত্তালেব হোসেন বলেন, ‘বিভিন্ন জায়গায় আমরা অর্ডার সরবরাহ করি। চারটি প্রতিষ্ঠানে আমাদের ইফতার সামগ্রীর প্যাকেট যাবে। অন্যান্য খাবারের সঙ্গে দুটো করে বেগুনিও থাকবে।

বাজারে বেগুনের পাশাপাশি কলার দামও বাড়তি। সবরি, সাগর, চাঁপাÑসব কলারই দাম হালিতে পাঁচ থেকে ১০ টাকা বেড়েছে। মালিবাগ বাজারের বিক্রেতা হাফিজ মিয়া জানান, রোজায় কলার চাহিদা বেশি থাকে বলে  দাম ‘একটু’ বাড়তি। তবে তিন-চার দিন পর এটা কমে যাবে।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০