নিজস্ব প্রতিবেদক: পবিত্র মাহে রমজান শুরুর আগ মুহূর্তে অনেকটা লাগামহীন মাছ-মাংসের বাজার। নিন্ম মধ্যবিত্ত থেকে শুরু করে মধ্যবিত্তরাও নাগাল পাচ্ছেন না নিত্যপণ্যের। হাড়ছাড়া গরুর মাংস কেজিপ্রতি ৮০০ টাকা, আর হাড়সহ ৭০০-৭৫০ টাকা। খাসির মাংসের কেজি ৯৫০ থেকে এক হাজার টাকা। পিছিয়ে নেই মুরগির বাজারও। ব্রয়লার ১৮০, লেয়ার ২৬৫ ও কক মুরগি ৩৬০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। বড় দেশি মুরগি বিক্রি হচ্ছে প্রতিটি ৫০০, মাঝারি ৪৫০ ও ছোট মুরগি ৪০০ টাকায়। অথচ গত সপ্তাহেও গরুর মাংস ৬০০-৬৫০ টাকা, খাসির মাংস ৯০০ টাকা ও ব্রয়লার ১৭০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হয়েছে।
গতকাল শুক্রবার রাজধানীর নিউমার্কেট বাজার ঘুরে এমন চিত্রই দেখা গেছে। তবে ঠিক কী কারণে হঠাৎ করেই নিত্যপণ্যের দাম বাড়ল, তা বলতে রাজি হননি কোনো মাংস বিক্রেতা। নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একাধিক বিক্রেতা বলেন, রোজার সময় একটু দাম বাড়েই। রোজার মাঝামাঝি সময়ে মাংসের দাম কিছুটা কমবে। আবার শেষ মুহূর্তে বাড়বে।
মাছের বাজারের অবস্থাও একই রকম। সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, বড় মাছের তুলনায় ছোট মাছের দোকানেই ভিড় বেশি। ছোট পাবদা মাছ ৪৫০, বড় পাবদা মাছ ৬০০, গোলশা ৭০০, পোয়া ৬০০, মেনি ৬০০, বাইম ৯০০, বাতাসি ৮০০, মলা ৫০০, কাচকি ৫০০-৬০০, শিং ৪৫০-৫০০ এবং গুঁড়ামাছ বিক্রি হচ্ছে ৪০০ টাকা কেজি দরে।
এছাড়া বড় রুই ৩৫০-৪০০, মাঝারি রুই ৩০০-৩৫০, কাতলা ২৮০-৩০০, বড় পাঙাশ ২০০-২৫০ ও গলদা চিংড়ি আকারভেদে ৬৫০-৭৫০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। ছোট, মাঝারি ও বড় ইলিশ মাছ যথাক্রমে ৯০০, এক হাজার ১০০ ও এক হাজার ৩০০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বাজারে পর্যাপ্ত সরবরাহ থাকার পরও বেগুনের কেজি পৌঁছেছে ১০০ টাকায়। ব্যবসায়ীরা বলছেন, সাধারণত রোজার সময় বাজারে বেগুনের চাহিদা বেড়ে যায়, এবারও তেমনটি হয়েছে।
এ প্রসঙ্গে রাজধানীর গোপীবাগের সবজি বিক্রেতা আল আমিন বলেন, বাজারে এখন বেগুনের চাহিদা বেড়ে গেছে, কিন্তু সেই তুলনায় সরবরাহ কম। এ কারণে বেগুনের দাম বেড়েছে।
তবে কিছুটা স্বস্তি এসেছে পেঁয়াজের বাজারে। দেশি পেঁয়াজ ৩৫-৩৬ ও ভারতীয় পেঁয়াজ ৩০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে। গোলআলু ২০, দেশি আদা ৯০-১০০, চায়না আদা ৮৫, চায়না রসুন ১০০, দেশি রসুন ৬০-৭০ ও শুকনা মরিচ ২০০ টাকা দরে বিক্রি হচ্ছে। রোজায় শরবতে লেবুর চাহিদা থাকায় হালিপ্রতি লেবু বিক্রি হচ্ছে ৪০ থেকে ৮০ টাকায়।
অন্যান্য সবজি, যেমন করলা, পটোল, লাউ, কাঁচা পেঁপে, শসা, গাজর, ফুলকপি, বরবটি, চিচিঙ্গা, মিষ্টিকুমড়া, ঝিঙ্গা, কচুর লতি, ঢেঁড়স, লাউশাক, পালংশাক, লালশাক, কলমিশাক, কচুশাক-সহ সব ধরনের শাকসবজির বাজার আগের মতোই অপরিবর্তিত রয়েছে।
মুদিপণ্যের মধ্যে মুগডাল ১২৫, বুটের ডাল ৮০, অ্যাংকর ডাল ৫৫, মসুর ডাল ১২৮, ছোলা ৭৫-৮০, সয়াবিন তেল ১৬৫, খোলা চিনিগুঁড়া চাল ১০৫, মিনিকেট চাল ৫৫, নাজিরশাইল চাল ৭০ ও চিনি ৭৮ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
ছোট দানা মসুর ডালের দাম বেড়েছে কেজিতে পাঁচ টাকা। গত সপ্তাহে এই ডাল বিক্রি হয়েছে ১১৫ টাকা
কেজি দরে। গতকাল শুক্রবার সেই একই মসুর ডাল ১২০ টাকার নিচে বিক্রি করছেন না ব্যবসায়ীরা। গত তিন সপ্তাহ ধরে টানা এই পণ্যটির দাম বাড়ছে।
মসলার বাজারে আগের তুলনায় বেড়েছে জিরার দাম। ৩১০ টাকা কেজি দরের জিরা হয়েছে ৩৮০ টাকায়। তাছাড়া বড় এলাচ দুই হাজার ৬২০, ছোট এলাচ দুই হাজার ২৮০, দারুচিনি ৪০০, লবঙ্গ এক হাজার ১০, কালো মরিচ ৭১০, সাদা মরিচ ৮৬০, কালোজিরা ১২০, সরষে ১১০, আলুবোখারা ৪২০, কিসমিস ৩৩০ ও মেথি ১২০ টাকা কেজি দরে বিক্রি হচ্ছে।
বোতলজাত সয়াবিন তেলের দাম সামান্য কিছু কমলেও ভোক্তার জন্য তেমন কোনো সুখবর নেই সয়াবিন তেলের বাজারে। যদিও সয়াবিন তেলের উৎপাদন, খুচরা ও সর্বশেষ আমদানি পর্যায়ে সরকার মোট ৩০ শতাংশ কর ছাড় দিয়েছে ব্যবসায়ীদের। কিন্তু বাজারে তেমন এর প্রভাব এখনও দেখা যায়নি।
সরকারি বিপণন সংস্থা টিসিবির তথ্য বলছে, প্রতি লিটার খোলা সয়াবিন বিক্রি হচ্ছে ১৫৪ টাকায়। গত সপ্তাহে এই সয়াবিন তেল বিক্রি হয়েছে লিটারপ্রতি ১৫৩ টাকা। আর পাম অয়েল (খোলা) ১৪৫ টাকায় বিক্রি হচ্ছে। গত সপ্তাহে খোলা পাম অয়েল বিক্রি হয়েছে ১৩৫ থেকে ১৩৬ টাকায়। খুচরা ব্যবসায়ীরা পাঁচ লিটার বোতলজাত সয়াবিন বিক্রি করেছেন ৭৪০ থেকে ৭৬০ টাকায়।