নিজস্ব প্রতিবেদক: মিয়ানমার থেকে বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের জন্য বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ খরচ করেছে সরকার। কিন্তু আন্তর্জাতিক মহল থেকে রোহিঙ্গাদের জন্য প্রত্যাশিত সহযোগিতা মিলছে না বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম। এছাড়া কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ও আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার স্বার্থে রোহিঙ্গাদের অপরাধমূলক কার্যক্রম শক্ত হাতে দমনের বার্তা দিয়েছেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে আমরা রোহিঙ্গাদের সঙ্গে মানবিক আচরণ করে যাচ্ছি। তবে নিরাপত্তার স্বার্থে রোহিঙ্গাদের যে কোনো অপরাধমূলক কার্যক্রম শক্ত হাতে দমন করা হবে। আমরা দেখছি, রোহিঙ্গাদের নিয়ে কাজ করা আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কার্যক্রম নিয়ে সম্প্রতি সমালোচনা করছে মানবাধিকার সংস্থা হিউম্যান রাইটস ওয়াচ।’
গতকাল শনিবার রাজধানীর একটি হোটেলে ‘বাংলাদেশ ও ইন্দো-প্যাসিফিক সহযোগিতা: অগ্রাধিকারমূলক সমস্যা ও উদ্বেগ’ শীর্ষক এক সংলাপে এ অভিযোগ করেন তিনি। এ সংলাপের আয়োজন করে বাংলাদেশ সেন্টার ফর ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যাফেয়ার্স।
রোহিঙ্গা প্রসঙ্গে প্রতিমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারের সঙ্গে আনুষ্ঠানিক ও অনানুষ্ঠানিক আলোচনার জন্য বাংলাদেশের দ্বার উম্মুক্ত। রোহিঙ্গা ক্যাম্পগুলোয় অত্যন্ত ঝুঁকি নিয়ে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা কাজ করছেন। গত বৃহস্পতিবার রোহিঙ্গা স্যালভেশন আর্মি (আরসা) ও রোহিঙ্গা সলিডারিটি অরগানাইজেশনের (আরএসও) সদস্যদের মধ্যে সংঘর্ষ হয়েছে। বাংলাদেশ-মিয়ানমার জিরো লাইনের ক্যাম্পগুলো পুড়ে ছাই হয়ে গেছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী যে চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করছে, সেটার অবমূল্যায়ন হচ্ছে।’
বিদেশি কূটনীতিকদের উদ্দেশে তিনি বলেন, ‘আমি আশা করব, আমাদের আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা সেখানে ঝুঁকি নিয়ে যেভাবে কাজ করছে, সেটা তুলে ধরবেন।’
তিনি বলেন, ‘সরকার রোহিঙ্গাদের জন্য বিলিয়ন ডলারের বেশি অর্থ খরচ করছে। ২০২১ সালে আমরা ১ দশমিক ২ বিলিয়ন ডলার খরচ করেছি। দাতা সংস্থাগুলো এর অর্ধেক সংগ্রহ করতে পারছে না। রোহিঙ্গাদের ফেরত নিতে আমরা আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের সহায়তা চাই।’
অনুষ্ঠানে উপস্থিত বিদেশি কূটনীতিকদের উদ্দেশে প্রতিমন্ত্রী বলেন, কক্সবাজারে রোহিঙ্গা ও আশ্রয়দাতা সম্প্রদায়ের নিরাপত্তার ক্ষেত্রে আইন প্রয়োগকারী সংস্থার ভূমিকা খর্ব করা যাবে না। আমরা আশা করব, আইন প্রয়োগকারীরা ক্যাম্পে ঝুঁকি নিয়ে যেভাবে কাজ করছে, সেটা আপনারা তুলে ধরবেন।’
শাহরিয়ার আলম বলেন, আমরা শিগগির ২০২৩ সালের জয়েন্ট রেসপন্স প্ল্যানের (জেআরপি) ঘোষণা করতে যাচ্ছি। রোহিঙ্গা সমস্যার একমাত্র সমাধান প্রত্যাবাসন বলে উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, রোহিঙ্গা সংকটের সমাধানের জন্য দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও বহুপক্ষীয় প্রচেষ্টার সমন্বয় করে যাচ্ছে সরকার। সরকারের অব্যাহত কূটনৈতিক প্রচেষ্টা রোহিঙ্গা ইস্যুকে বাঁচিয়ে রাখতে সাহায্য করেছে। রোহিঙ্গা সংকটের উৎস মিয়ানমার, সমাধানও সেখানে।
বাংলাদেশ সেন্টার ফর ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যাফেয়ার্স ও জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ডিপার্টমেন্ট অব ইন্টারন্যাশনাল রিলেশন্স আয়োজিত সংলাপটি পরিচালনা করেন বাংলাদেশ সেন্টার ফর ইন্দো-প্যাসিফিক অ্যাফেয়ার্সের নির্বাহী পরিচালক অধ্যাপক শাহাব এনাম খান।
পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মেরিটাইম অ্যাফেয়ার্স ইউনিটের সচিব (এমএইউ) রিয়ার অ্যাডমিরাল (অব.) মো. খুরশেদ আলম, ব্রিগেডিয়ার জেনারেল (অব.) এম সাখাওয়াত হুসাইন ও বাংলাদেশে জাতিসংঘের আবাসিক সমন্বয়কারী গুয়েন লুইস অনুষ্ঠানে বক্তব্য দেন।
আইপিইএফ বাংলাদেশ যুক্ত হবে কি না, সেই সিদ্ধান্ত এখনও চূড়ান্ত হয়নি বলে জানিয়েছেন পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী। শাহরিয়ার আলম বলেন, বড় দেশগুলোর মধ্যে ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চল নিয়ে প্রতিযোগিতা রয়েছে। জাতীয় সার্বভৌমত্ব ও আন্তর্জাতিক আইনের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকবে বাংলাদেশ।