নিজস্ব প্রতিবেদক: মিয়ানমার থেকে আসা রোহিঙ্গাদের আশ্রয় দিলেও তাদের শরণার্থীর মর্যাদা এখনই দিচ্ছে না বাংলাদেশ সরকার। গতকাল সোমবার সচিবালয়ে জাতিসংঘ শরণার্থীবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের প্রধান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডির সঙ্গে বৈঠকের পর সরকারের পক্ষ থেকে একথা জানানো হয়।
বৈঠক শেষে দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণসচিব শাহ কামাল সাংবাদিকদের বলেন, ‘এখন পর্যন্ত বলা হচ্ছে এরা অনুপ্রবেশকারী। এ নিয়ে একটা দ্বিপক্ষীয় আলোচনা হবে, এই আলোচনার পর যদি এটা দীর্ঘমেয়াদি হওয়ার সম্ভাবনা দেখা যায়, তখনই বিষয়টি বিবেচনায় আসবে। এখন কিন্তু (বিবেচনায়) আসার সময় হয়নি।’
এ সময় দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণমন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া বলেন, মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকে রোহিঙ্গাদের আশ্রয়ের পাশাপাশি থাকা-খাওয়ার ব্যবস্থা করা হয়েছে। রোহিঙ্গাদের শরণার্থী মর্যাদা দেওয়া হবে কি নাÑ এ প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘এটা সময়ের ব্যাপার। এই যে আসছে এতগুলো লোক, আমরা কী করব তা সময়ই বলে দেবে, আমরা আপনাদের সাহায্য-সহযোগিতা চাই।’
মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা পরিষ্কারভাবে বলছি, এরা মিয়ানমারের নাগরিক, এদের মিয়ানমারে ফিরে যেতে হবে। এ সমস্যা মিয়ানমারের, এ সমস্যা তাদের সমাধান করতে হবে। শরণার্থী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হলে কোনো দেশকে উদ্বাস্তুদের বেশ ?কিছু অধিকার দিতে হয়।
উল্লেখ্য, শরণার্থীবিষয়ক ১৯৫১ সালের আন্তর্জাতিক প্রটোকল ও ১৯৬৭ সালের কনভেনশনে বাংলাদেশ এখনও সই করেনি। ফলে কার্যত আগত রোহিঙ্গাদের বাংলাদেশ শরণার্থী হিসেবে আখ্যায়িত করছে না। বরং মিয়ানমারের সঙ্গে রোহিঙ্গা ইস্যুতে বাংলাদেশের এর আগে যে সমঝোতা হয়েছে, তাতে মিয়ানমার তাদের দেশের নাগরিক হিসেবে স্বীকার করেছিল। বাংলাদেশ সেই বিষয়টিকেই গুরুত্ব দিচ্ছে। এ প্রসঙ্গে সম্প্রতি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সূত্র জানিয়েছে, বাংলাদেশ এখনও এসব আন্তর্জাতিক প্রটোকল ও কনভেনশনে সই করতে প্রস্তুত নয়। আশপাশের এলাকার উদ্বাস্তুদের গন্তব্য হিসেবে বাংলাদেশ একটি ঝুঁকিপূর্ণ দেশ। তাই এ বিষয়ে বাংলাদেশকে ধীরে সুস্থে ভাবতে হবে। রোহিঙ্গা ইস্যুকে তাই বিশেষ পরিস্থিতি হিসেবেই বিবেচনা করতে হচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশে আশ্রয় নেওয়া রোহিঙ্গা নারীদের গর্ভ থেকে জন্ম নেওয়া শিশুদের মিয়ানমারের নাগরিক হিসেবে জন্ম সনদ দেওয়া হচ্ছে বলে জানিয়েছেন ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের সচিব। সাংবাদিকদের প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তাদের কোনো নাগরিকত্ব বাংলাদেশ দিচ্ছে না। শুধু বার্থ রেজিস্ট্রেশনটা দিচ্ছে, ওখানে লেখা হচ্ছে এরা মিয়ানমারের নাগরিক। এছাড়া মন্ত্রী মোফাজ্জল হোসেন মায়া আরও জানান, গত এক মাসে সাড়ে চার লাখেরও বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশে এসেছে। বন্যা না যেতে এ ধরনের সমস্যা আমাদের ঝুঁকির সামনে দাঁড় করিয়ে দিয়েছে বলে তিনি মত দেন। বর্তমানে কক্সবাজারের উখিয়ায় তারা থাকলেও প্রত্যাবর্তনে দেরি হলে তাদের ভাসান চরে নিয়ে যাওয়া হবে বলে জানান তিনি। আর সেক্ষেত্রে ইউএনএইচসিআর সহযোগিতা দিতে প্রস্তুত রয়েছে বলেও জানান তিনি। এরই মধ্যে কক্সবাজারের ক্যাম্প এলাকায় রাস্তা নির্মাণ করতে ৩৫ কোটি টাকা ইউএনএইচসিআর দেবে বলে আশ্বাস পাওয়া গেছে। আগামীকালই এ টাকা সরকার পেয়ে যাবে বলে জানান মন্ত্রী। তারপরই সেনাবাহিনী ওই রাস্তা নির্মাণে উদ্যোগ নেবে।
এদিকে ইউএনএইচসিআর প্রধান ফিলিপ্পো গ্র্যান্ডি গতকাল সোমবার সাংবাদিকদের বলেন, রোহিঙ্গা সংকট নিরসনে বাংলাদেশের প্রস্তাবে তারা একমত। তবে মিয়ানমারের ভেতরে রোহিঙ্গাদের জন্য সেইফ জোন প্রতিষ্ঠার বিষয়ে সংশয় রয়েছে। এ সিদ্ধান্ত মিয়ানমার সরকারকেই নিতে হবে উল্লেখ করে তিনি বলেন, একটি দেশ রাজি না থাকলে সেখানে হস্তক্ষেপ করে সেইফ জোন প্রতিষ্ঠা করতে হলে আপনাকে বলপ্রয়োগের মাধ্যমে করতে হবে এবং এর জন্য যে প্রক্রিয়া অবলম্বন করতে হবে তা অনেক সময়ের ব্যাপার। এটার জন্য নিরাপত্তা পরিষদে প্রস্তাব পাস হতে হবে, যা অনেক জটিল বিষয়। আমরা রাখাইন প্রদেশে স্বাভাবিক নিরাপত্তা চাই। এটা ছাড়া মানুষ সেখানে ফিরবে না। তারা সব হারিয়েছে। যদি নিরাপত্তার বিষয়ে ওই ধরনের কোনো নিশ্চয়তা না থাকে, তারা ফিরে যাবে না। গ্র্যান্ডি আরও বলেন, রোহিঙ্গাদের নিরাপত্তা নিশ্চিতের বিষয়টি একটি রাজনৈতিক ও সামরিক বিষয় এবং এটা করার দায়িত্ব মিয়ানমার সরকারের।