রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে কূটনৈতিক উদ্যোগ বাড়ান

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, প্রত্যাবাসনের দীর্ঘস্থায়ী অনিশ্চয়তায় রোহিঙ্গারা হতাশ হয়ে পড়ছে, যার একটি সম্ভাব্য ঝুঁকি রয়েছে। কারণ, এটি তাদের অনেককে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে প্ররোচিত করছে। জাতিসংঘের সফররত শরণার্থীবিষয়ক হাইকমিশনার (ইউএনএইচসিআর) মঙ্গলবার প্রধানমন্ত্রীর সরকারি বাসভবন গণভবনে তার সঙ্গে সৌজন্য সাক্ষাৎকালে প্রধানমন্ত্রী এ কথা বলেন।

রোহিঙ্গাদের মানবিক সাহায্যই দেয়নি। তাদের জীবনমান উন্নয়নেও সাধ্যমতো চেষ্টা করছে। রাখাইন রাজ্যের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মিয়ানমারের পাঠ্যক্রম ও ভাষার পাশাপাশি দক্ষতা উন্নয়ন কার্যক্রম অনুসরণ করে অনানুষ্ঠানিক শিক্ষার সুবিধা দিচ্ছে। ১১ লাখের বেশি জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিক বাংলাদেশে আশ্রয় নেয়ায় কক্সবাজারের পরিবেশসহ নানা ধরনের ক্ষতি হয়েছে। নির্বিচারে গাছ কাটায় বনভ‚মি হ্রাসে পরিবেশগত বিপর্যয় সৃষ্টি করছে।

২০১৭ সালে মিয়ানমারে সেনাবাহিনীর নির্যাতনের শিকার হয়ে অন্তত ১১ লাখ রোহিঙ্গা বাংলাদেশে আসে। সেই থেকে তাদের আশ্রয়, খাওয়া-পরাসহ মানবিক সহায়তা দেয়া হচ্ছে। কিন্তু দীর্ঘদিনের জন্য বিপুল জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করা অসম্ভব। আশ্রিত রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ক্রমেই বাড়ছে। প্রতি বছর ৪৫ হাজার রোহিঙ্গা শিশুর জš§ হচ্ছে।

বাংলাদেশ রোহিঙ্গাদের জীবনমান উন্নয়নে সাধ্যমতো প্রচেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে। জোরপূর্বক বাস্তুচ্যুত রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠী নিজ দেশে প্রত্যাবর্তনের পর যাতে হাতে-কলমে কাজ করে জীবিকা নির্বাহ করতে পারে, সে লক্ষ্যে তাদের কারিগরি ও অন্যান্য বিষয়ে লেখাপড়ার ওপর গুরুত্ব দিয়ে সরকার কাজ করছে। বাংলাদেশ কর্তৃক রোহিঙ্গাদের কারিগরিসহ শিক্ষার ব্যবস্থা নেয়ায় সরকারের প্রশংসা করেছে জাতিসংঘ।

সরকার সব ধরনের সুযোগ-সুবিধাসহ নোয়াখালীর ভাষানচর দ্বীপে রোহিঙ্গাদের জন্য অস্থায়ী আশ্রয়ের ব্যবস্থা করেছে। সেখানে এ পর্যন্ত ৩০ হাজার রোহিঙ্গাকে অস্থায়ী আশ্রয়ে স্থানান্তর করা হয়েছে।

আমাদের দেশ বিশ্বের অন্যতম ঘনবসতির দেশ। আর্থিকভাবে এগিয়ে চললেও বিপুল জনগোষ্ঠীকে সহায়তা করা দুঃসাধ্য। ২০১৭ সালের নভেম্বরে মিয়ানমার সরকারের সঙ্গে রোহিঙ্গা প্রত্যাবাসনের চুক্তি করা হলেও এ পর্যন্ত একজনকেও নিজ দেশে ফেরত পাঠানো যায়নি। ২০১৮ সালের সেপ্টেম্বরে চীনের সহায়তা নেয় বাংলাদেশ। এরপর তিনটি দেশের প্রতিনিধিরা কয়েক দফা বৈঠকও করেন। ২০২১ সালের ফেব্রæয়ারিতে মিয়ানমারে ঘটে সামরিক অভ্যুত্থান। কভিডকালেও ক‚টনৈতিক প্রচেষ্টায় সময়ক্ষেপণ হয়েছে কিছুটা।

অনেকে মনে করেন, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ায় চীন যুক্ত হওয়ায় আন্তর্জাতিকভাবে চীনবিরোধী শিবির এ প্রক্রিয়া থেকে অনেকটাই মুখ ফিরিয়ে রেখেছে। বিশ্ব সম্প্রদায়কে বোঝাতে হবে সমস্যাটি বাংলাদেশের। এ সমস্যা সমাধানে যেকোনো দেশের সহায়তা নিতে পারি আমরা। আমরা সবার সহায়তা নিয়েই সমস্যার সমাধান করতে চাই। অবশ্য নানা কারণে রোহিঙ্গারা মিয়ানমারে ফিরে যেতে অসম্মতি জানায়। তাদের দাবিগুলো হলোÑমিয়ানমারের নাগরিকত্ব দেয়া, রাখাইনে তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা, ভিটেমাটি ফিরিয়ে দেয়া, ক্ষতিপূরণ দেয়া এবং নির্যাতনকারীদের আন্তর্জাতিক আদালতে বিচার। কিন্তু এসব দাবি পূরণ বাংলাদেশের একার পক্ষে সম্ভব নয় এবং তা সময়সাপেক্ষ ব্যাপার। বিশ্ব সম্প্রদায়কে বুঝতে হবে, রোহিঙ্গাদের দীর্ঘ অবস্থান তাদের অপরাধমূলক কর্মকাণ্ডে জড়িত হতে প্ররোচিত করবে। তাই রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনে ক‚টনৈতিক তৎপরতা বাড়েতে হবে। বিশ্ব সম্প্রদায় যাতে রোহিঙ্গাদের নাগরিক অধিকার নিশ্চিত তাদের প্রত্যাবাসনে সহায়তা করে, সে জন্য সর্বাত্মক উদ্যোগ নিতে হবে আমাদের।

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০