নিজস্ব প্রতিবেদক : দমন অভিযানের মুখে পালিয়ে আসা রোহিঙ্গাদের ফিরিয়ে নেওয়ার বিষয়ে বাংলাদেশকে ‘প্রস্তাব’ দিয়েছে মিয়ানমার। গতকাল দেশটির এক মন্ত্রী ঢাকায় বাংলাদেশের পররাষ্ট্রমন্ত্রীর সঙ্গে বৈঠকে এ প্রস্তাব দেন। পরে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে রোহিঙ্গাদের প্রত্যাবাসনের জন্য একটি ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠনের বিষয়ে দুই দেশ একমত হয়েছে।
রোহিঙ্গা সংকট নিয়ে আন্তর্জাতিক চাপের মধ্যে ঢাকা সফরে আসা মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের বৈঠকে গতকাল সোমবার এ সিদ্ধান্ত হয়। রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় দেড় ঘণ্টার এই বৈঠকে মিয়ানমার প্রতিনিধিদলের নেতৃত্ব দেন দেশটির স্টেট কাউন্সিলর অং সান সু চির দফতরের মন্ত্রী কিয়া তিন্ত সোয়ে। বাংলাদেশ প্রতিনিধিদলে ছিলেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এএইচ মাহমুদ আলী, স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল, পররাষ্ট্র প্রতিমন্ত্রী শাহরিয়ার আলম, প্রধানমন্ত্রীর মুখ্য সচিব কামাল আবদুল নাসের চৌধুরী ও পররাষ্ট্র সচিব শহিদুল হক।
বৈঠকশেষে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মাহমুদ আলী সাংবাদিকদের বলেন, ‘অত্যন্ত সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশে’ আলোচনা হয়েছে এবং সেখানে রোহিঙ্গা শরণার্থীদের ফিরিয়ে নেওয়ার কথা বলেছে মিয়ানমার। এই প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার সার্বিক তত্ত¡াবধানে দুই দেশ একটি ‘জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ’ গঠনের প্রস্তাবে সম্মত হয়েছে। মন্ত্রী বলেন, ‘আমরা উভয়ে সম্মত হয়েছি। এই জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপের কম্পোজিশন কী হবে সেটা আমরা বাংলাদেশও ঠিক করব, ওরাও ঠিক করবে। সম্মতিটা হয়েছে এই আলোচনায়। খুব শিগগিরই এ জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ গঠিত হবে।’
পররাষ্ট্রমন্ত্রী জানান, প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়ার জন্য বৈঠকে একটি দ্বিপক্ষীয় চুক্তির প্রস্তাব করেছে বাংলাদেশ। মিয়ানমারের প্রতিনিধিদলকে ওই চুক্তির খসড়াও হস্তান্তর করা হয়েছে। বৈঠকে দুই দেশের মধ্যে ‘নিরাপত্তা সহযোগিতার’ বিষয়েও ‘অত্যন্ত ফলপ্রসূ’ আলোচনা হয়েছে এবং বাংলাদেশ সন্ত্রাসের বিরুদ্ধে ‘জিরো টলারেন্স নীতি’ পুনর্ব্যক্ত করেছে বলে মাহমুদ আলী জানান।
তিনি বলেন, এ বিষয়ে আরও আলোচনার জন্য স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল শিগগিরই মিয়ানমার সফরে যাবেন। আমরা প্রথম থেকে বলে আসছি, শান্তিপূর্ণ উপায়ে আমরা এই সমস্যার সমাধান করতে চাই। দুই পক্ষই তাতে একমত হয়েছে। এছাড়া বর্ডার ব্যবস্থাপনার বিষয়ে তিনটি সমঝোতা স্মারক প্রস্তুতির পর্যায়ে রয়েছে বলে জানান পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ এইচ মাহমুদ আলী।
উল্লেখ্য, মিয়ানমারের রাখাইনে সেনাবাহিনীর দমন অভিযানের মুখে গত ২৫ আগস্ট থেকে পাঁচ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নিয়েছে। মিয়ানমারের নেত্রী সু চি সেনাবাহিনীর এই অভিযানকে ‘সন্ত্রাসীদের বিরুদ্ধে লড়াই’ হিসেবে বর্ণনা করলেও জাতিসংঘ একে চিহ্নিত করেছে ‘জাতিগত নির্মূল অভিযান’ হিসেবে। এর আগে গত বৃহস্পতিবার জাতিসংঘের নিরাপত্তা পরিষদে মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা হয়। এর আগে জাতিসংঘে বাংলাদেশের প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রোহিঙ্গা সমস্যা সমাধানে পাঁচটি প্রস্তাব দিয়েছিলেন। আন্তর্জাতিক মহলে তুলে ধরা ওই পাঁচ দফা প্রস্তাব দেওয়া হলেও দ্বিপক্ষীয় আলোচনা ও সমাধানকে বরাবরই গুরুত্ব দিয়ে আসছে বাংলাদেশ।