কক্সবাজার, প্রতিনিধি:কক্সবাজারের উখিয়া উপজেলার বালুখালী রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-১১) গত রোববারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা নিয়ে বিভিন্ন রকম আলোচনা চলছে। এ ঘটনার জন্য রোহিঙ্গাদের অনেকে মিয়ানমারের সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান স্যালভেশন আর্মিকে (আরসা) দায়ী করছেন।
অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা তদন্তে কক্সবাজারের অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট (এডিএম) মো. আবু সুফিয়ানকে প্রধান করে সাত সদস্যের তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটির সদস্যরা গত সোম ও মঙ্গলবার আশ্রয়শিবিরে গিয়ে ধ্বংসস্তূপ পরিদর্শন, নমুনা সংগ্রহ ও ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী রোহিঙ্গাসহ সংশ্লিষ্ট বিভিন্ন বাহিনী ও সংস্থার অন্তত ৪০ জনের সঙ্গে কথা বলেন। আজ বৃহস্পতিবার তদন্ত শেষ করে ডিসি বরাবর তদন্ত প্রতিবেদন দাখিল করার কথা রয়েছে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, তদন্ত কমিটির কাছে ইতোমধ্যে ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শী অন্তত ১৫ জন রোহিঙ্গা নারী ও পুরুষ জবানবন্দি দিয়েছেন। তারা আশ্রয়শিবিরে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনাকে নাশকতা দাবি করে এর নেপথ্যে আরসাকে অভিযুক্ত করেছেন।
রোববার বিকালে বালুখালীর আশ্রয়শিবিরের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় দুই হাজারের বেশি রোহিঙ্গার ঘর পুড়ে যায়। স্থানীয় রোহিঙ্গাদের দাবি, আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১১) এ, বি ও ডি ব্লকে একযোগে আগুন লাগায় কয়েকজন রোহিঙ্গা কিশোর। আরসার অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা এ সময় ওই কিশোরদের নিরাপত্তা দেয়। আগুন নেভাতে সাধারণ রোহিঙ্গারা ঘটনাস্থলে ছুটে গেলে আরসার ক্যাম্প কমান্ডার নুর হাবির নেতৃত্বে আরসার কয়েকজন গুলি ছুড়ে সাধারণ রোহিঙ্গাদের হটিয়ে দেন।
এদিকে সোমবার দিবাগত রাত সাড়ে ১২টার দিকে বালুখালী রোহিঙ্গা আশ্রয়শিবিরে (ক্যাম্প-৯) নুর হাবিকে গুলি করে ও কুপিয়ে হত্যা করা হয়। নিহত নুর হাবি আরসার বালুখালী ক্যাম্প কমান্ডার ছিলেন বলে জানিয়েছে পুলিশ। তিনি ডাক্তার (পল্লি চিকিৎসক) ওয়াক্কাস নামেও পরিচিত ছিলেন। স্থানীয় রোহিঙ্গাদের দাবি, আগুনের ঘটনায় নুর হাবিসহ আরসার বেশ কয়েকজন সন্ত্রাসী জড়িত ছিলেন। এ কারণে গভীর রাতে নুর হাবিকে তুলে নিয়ে মিয়ানমারের আরেক সশস্ত্র গোষ্ঠী আরাকান রোহিঙ্গা সলিডারিটি অর্গানাইজেশন (আরএসও) অথবা মাদক চোরাচালানের অন্যতম হোতা নবী হোসেন বাহিনীর সন্ত্রাসীরা হত্যা করতে পারেন।
জাতিসংঘের উদ্বাস্তুবিষয়ক সংস্থা ইউএনএইচসিআরের তথ্য অনুযায়ী, রোববারের অগ্নিকাণ্ডের ঘটনায় আশ্রয়শিবিরের (ক্যাম্প-১১) দুই হাজারের বেশি রোহিঙ্গাদের ঘর পুড়ে গেছে। এ ঘটনায় ক্ষতিগ্রস্ত রোহিঙ্গার সংখ্যা ১২ হাজারের বেশি। অগ্নিকাণ্ডে ৯০টির বেশি বেসরকারি হাসপাতাল, স্বাস্থ্যকেন্দ্র, লার্নিংসেন্টার, ত্রাণকেন্দ্রসহ বিভিন্ন অবকাঠামো ধ্বংস হয়েছে। ক্যাম্প-১১ আশ্রয়শিবিরে ৩২ হাজার ২০০ জন রোহিঙ্গার বাস।