রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বন্ধ

নিজস্ব প্রতিবেদক: রোহিঙ্গা ইস্যুতে মিয়ানমারকে চাপে রেখেছে বলে জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত। রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর প্রত্যাবাসন বিষয়ে মিয়ানমারের ওপর বিশ্বব্যাংকের কোনো চাপ আছে কিনা এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, চাপ বলতে বিশ্বব্যাংক মিয়ানমারে নতুন কোনো প্রকল্পে অর্থ সহায়তার অনুমোদন দেওয়া বন্ধ রেখেছে।
সচিবালয়ে গতকাল সকালে অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম। বিকালে সংবাদ সম্মেলনে এ কথা বলেন অর্থমন্ত্রী।
সংবাদ সম্মেলনের শুরুতে তিনি জানান, রাহিঙ্গা সংকট নিরসনের প্রশ্নে জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের বাংলাদেশ সফর খুবই ইতিবাচক।
প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ সরকারের বেশ কয়েকজন মন্ত্রীর সঙ্গে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট ও জাতিসংঘ মহাসচিবের একাধিক বৈঠক হয়েছে। এর প্রতিক্রিয়ায় অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘আমি বলতে পারি আজকের দিন বাংলাদেশ সরকারের জন্য গুড ডে।’
আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, ‘জাতিসংঘ মহাসচিব আন্তোনিও গুতেরেস ও বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিমের এ সফর মূলত রোহিঙ্গা সমস্যা সরেজমিন দেখার জন্য। এ জন্য আমরা এ দুই সংস্থার প্রতি কৃতজ্ঞ। গুতেরেস ও কিমের সফরের মধ্য দিয়ে বিশ্বকে বোঝানো গেছে বাংলাদেশের রোহিঙ্গা সমস্যা কতটা প্রকট। কত বড় দায় আমাদের ঘাড়ে এ কথা আমরা বিশ্ববাসীকে বোঝাতে সক্ষম হয়েছি তাদের সফরের কারণে।’
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা সমস্যা নিরসনে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদ্যোগ নেওয়া উচিত ছিল। রোহিঙ্গাদের দায় নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানিয়েছেন গুতেরেস ও কিম।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এ দুই নেতাকে বাংলাদেশ বলেছে, রোহিঙ্গাদের মিয়ানমারকে ফিরিয়ে নিতে হবে পুরো নিরাপত্তা নিশ্চিত করে। এ জন্য রাখাইনে একটি ‘সেফ জোন’ করা যেতে পারে। যদি জাতিসংঘ দেখভাল করে, তা সম্ভব। বাংলাদেশের তরফে এমন কথা বলা হয়েছে।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এ দুজনের বাংলাদেশ সফর মিয়ানমারের ওপর বড় ধরনের চাপ সৃষ্টি করবে। এরই মধ্যে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়নে মিয়ানমারে সব প্রকল্প স্থগিত করেছে বিশ্বব্যাংক।’
তিনি বলেন, ‘মিয়ানমার অনেক আগে থেকেই রোহিঙ্গাদের ওপর অত্যাচার-নির্যাতন করেছে। তারা খাদ্য পায় না। শিক্ষা পায় না। তারা চিকিৎসা পায় না। অথচ সম্পদের দিক দিয়ে বিচার করলে মিয়ানমার একটি ধনী দেশ।’
গুতেরেস ও কিমের এ সফরের মধ্য দিয়ে কি বাংলাদেশ আশা করতে পারে রোহিঙ্গারা শিগগিরই মিয়ানমারে ফেরত যাবে? সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফেরত নেওয়ার ব্যাপারে মিয়ানমার সরকারের প্রতিশ্রুতি টোটালি রাবিশ। তাদের কথার ওপর বিশ্বাস রাখা যায় না। ওরা বিশ্বকে দেখাতে সামান্য কিছু লোক নিয়ে যেতেও পারে। তাতে মূল সমস্যার সমাধান হবে না।’
অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘বিশ্বব্যাংক রোহিঙ্গাদের জন্য ৪৮ কোটি ডলার অনুদান দেবে। এ অর্থ তাদের স্বাস্থ্য, শিক্ষা, খাদ্য ও স্যানিটেশনে ব্যয় করা হবে। আর ২০১৮-১৯ অর্থবছরের বাজেটে রোহিঙ্গাদের জন্য ৪০০ কোটি টাকা বরাদ্দ রাখা হয়েছে।’
অর্থমন্ত্রী জানান, এ পর্যন্ত বাংলাদেশ সরকারের কোনো অর্থ ব্যয় হয়নি। রোহিঙ্গাদের জন্য যা ব্যয় হয়েছে তার সবই পাওয়া গেছে অনুদান হিসেবে, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান, সংস্থা ও ব্যক্তির কাছ থেকে। রোহিঙ্গাদের জন্য আরও অনুদান প্রয়োজন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
তিনি বলেন, ‘সকালে প্রধানমন্ত্রীর দফতরেও সরকারের পাঁচ মন্ত্রীসহ শীর্ষ কর্মকর্তাদের সঙ্গে লম্বা মিটিং হয়েছে বিশ্বব্যাংক প্রেসিডেন্ট ও জাতিসংঘ মহাসচিবের। সে কারণে আমি বলতে পারি আজকের দিন বাংলাদেশ সরকারের জন্য গুড ডে।’
বিশ্বব্যাংকের ৪৮ কোটি ডলার পাওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে অর্থমন্ত্রী বলেন, ‘এ ৪৮ কোটি ডলার শতভাগ অনুদান। যে কোনো সময় ৫০ ছাড় করবে তারা। বাকিটা আগামী দুই বছরের মধ্যে দেবে।’
বিশ্ব সম্প্রদায়ের আরও অনেক কাজ বাকি: রোহিঙ্গা সংকটে ভূমিকার জন্য বাংলাদেশের মানুষকে ধন্যবাদ জানিয়ে বিশ্বব্যাংকের প্রেসিডেন্ট জিম ইয়ং কিম বলেছেন, এ সংকট উত্তরণে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের আরও অনেক কাজ বাকি, আর সে জন্যই তিনি ও জাতিসংঘ মহাসচিব বাংলাদেশে এসেছেন।
সচিবালয়ে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিতের সঙ্গে বৈঠক করার পর এক যৌথ ব্রিফিংয়ে জিম ইয়ং কিম এ কথা বলেন। তিনি বলেন, ‘আমরা জানি, আমাদের আরও অনেক কিছু করতে হবে, আরও অনেক কাজ বাকি, তাদের জন্য আরও অনেক কিছু করা দরকার। আর সেই কারণেই আমরা এখানে এসেছি।’
কিম বলেন, তিনি এবং জাতিসংঘ মহাসচিব গুতেরেস রোহিঙ্গাদের পরিস্থিত নিয়ে খুবই উদ্বিগ্ন। আজ তারা কক্সাজারে গিয়ে রোহিঙ্গা ক্যাম্প পরিদর্শন করবেন।
‘মহাসচিব ও আমি এখানে এসেছি বাংলাদেশের মানুষ ও সরকারের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানাতে, কারণ তারা এত বিপুল সংখ্যক শরণার্থীকে আশ্রয় দিয়েছেন। আর তারা এটা করেছেন খুবই মানবিক এবং শান্তিপূর্ণ উপায়ে।’

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০