Print Date & Time : 17 June 2025 Tuesday 1:11 am

রোহিঙ্গা ক্যাম্প হয়ে উঠছে অপরাধের কেন্দ্র

রোহিঙ্গারা মূলত মিয়ানমারের সংখ্যালঘু মুসলিম সম্প্রদায় বিশেষ। যাদের নিজ দেশে নাগরিকত্ব প্রত্যাখ্যান করা হয়েছে। নির্যাতিত নিপীড়িত এ সম্প্রদায়কে যখন দমন করার জন্য আগ্রাসন চালানো হয় তখন তারা জীবন রক্ষার্থে পার্শ্ববর্তী দেশ হিসেবে বাংলাদেশে আশ্রয় নিতে শুরু করে। সময়টা তখন ২০১৭ সাল। বাংলাদেশ সরকার তখন মানবিকতার প্রদর্শনস্বরূপ তাদের বাংলাদেশে আশ্রয়ের সুযোগ দিয়েছিলেন। তাই তো প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাকে ‘মাদার অব হিউম্যানিটি’ উপাধি দেয়া হয়েছে। মিয়ানমার থেকে আগত রোহিঙ্গাদের সংখ্যাগরিষ্ঠরা বাংলাদেশের কক্সবাজার, টেকনাফ ও উখিয়ায় আশ্রয় নেয়। এসব জায়গা আশ্রয় নেয়া রোহিঙ্গাদের সংখ্যা ১১ লাখের বেশি। এরা বর্তমানে ৩৪টির মতো ক্যাম্পে আশ্রয় নিয়েছেন। সরকারিভাবে এসব রোহিঙ্গাদের ব্যাপক সুবিধা দেয়া হলেও এরা সম্পূর্ণ বিপরীতে অবস্থান করছে। প্রতিনিয়ত অনৈতিক, অবৈধ ও অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছেন। প্রায়ই গুম, খুন, ছিনতাই, ধর্ষণের মতো ঘটনা, মাদকের চোরাচালানে সম্পৃক্ততা, মানব পাচারসহ আরও কিছু অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে অতি মাত্রায়।

বিভিন্ন গণমাধ্যমে এসব অপকর্ম দৈনিক চিত্রিত হচ্ছে। তবে মাদকের চোরাচালান, মাদকাসক্ত, খুন আর অভ্যন্তরীণ কোন্দলেও নিয়মিত জড়িয়ে পড়ছে। ক্যাম্পে অবস্থানরত রোহিঙ্গাদের মধ্যে অধিকাংশই পরিবার পরিকল্পনা সম্পর্কে ব্যাপক অসচেতন। জš§হার বাড়ছেই। এটা আসলেই বাংলাদেশের মতো একটি জনবহুল দেশের জন্য বড়ই অশনিসংকেত বটে। বাংলাদেশ আয়তনের দিকে বিশ্বে ৯৪তম স্থানে রয়েছে; অন্যদিকে জনসংখ্যার দিক থেকে নবম স্থানে অবস্থান করছে। এবার ভেবে দেখি, আমাদের দেশে জনসংখ্যার আধিক্য কতটুকু? তাও আবার রোহিঙ্গাদের বসবাস। ১১ লাখের বেশি রোহিঙ্গা বাংলাদেশের মতো জনবহুল দেশের জন্য সত্যিই সমস্যা সৃষ্টি করছে, ভবিষ্যতেও সংকটের মধ্যে পতিত হওয়ার আশঙ্কা।

রোহিঙ্গা ক্যাম্পে আধিপত্য বিস্তার, আন্তঃকলহ সৃষ্টি, সংঘর্ষ, মানব পাচারের মতো অনৈতিক কর্মকাণ্ড এখন নিত্যদিনের ঘটনা। রোহিঙ্গারা আশ্রয়ের সুবিধা নিয়ে নানান কুকর্মে নিয়োজিত হচ্ছে। রোহিঙ্গাদের অপরাধমূলক কাজের মধ্যে একটি হলো অস্ত্র কেনাবেচা, অস্ত্রের অপব্যবহার করা। নিয়মিত ক্যাম্পে হত্যার ঘটনা ঘটছে। এসব ঘটনার পেছনে কারা ইন্ধন জোগাচ্ছে, সেটা বের করা উচিত।

রোহিঙ্গাদের অপরাধ থেকে বাংলাদেশকে কীভাবে রক্ষা করা যায় সেটা নিয়ে সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে। তবে এসব অপকর্মের প্রধান কারণ বিদ্যমান। তারম মধ্যে অন্যতম হচ্ছে রোহিঙ্গাদের নিজ দেশে স্থায়ী প্রত্যাবাসনের নিশ্চয়তা না থাকা। এসব রোহিঙ্গাদের মধ্যে এক শ্রেণি অবৈধ চক্রের যোগসাজশে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব পেয়ে যাচ্ছে। অবৈধ ভিসার মাধ্যমে বিভিন্ন দেশে পাড়ি জমাচ্ছে। মানব পাচারের মতো ভয়ংকর কাজেও লিপ্ত হচ্ছে। তবে অধিকাংশ নারীকে দালালের মাধ্যমে বিদেশে পাচার করা হচ্ছে। রোহিঙ্গারা যেভাবে অপরাধে জড়িয়ে পড়ছে, তা ভবিষ্যৎ বাংলাদেশের জন্য বড়ই বিষাদময় বার্তা বটে।

রোহিঙ্গাদের এসব অপরাধ থেকে এদেশকে রক্ষার অন্যতম পন্থা হচ্ছে তাদের নিজ দেশে প্রত্যাবাসনের জন্য স্থায়ী ব্যবস্থা করা। এ সমস্যা থেকে চূড়ান্ত উত্তরণের জন্য প্রয়োজন বৈশ্বিক রাজনৈতিক কূটনীতি। জাতিসংঘ এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে হবে। তাছাড়া বিভিন্ন আঞ্চলিক সংগঠনগুলোও ব্যাপক ভূমিকা পালন করতে হবে। প্রত্যাবাসন প্রক্রিয়া নিশ্চিত না করা যায় তাহলে বাংলাদেশ অচিরেই মারাত্মক সংকটের দ্বারপ্রান্তে পৌঁছবে।

দিনের পর দিন অব্যাহত থাকা রোহিঙ্গাদের অনৈতিক কর্মকাণ্ডের বন্ধ করতে প্রশাসনকে কঠোর পদক্ষেপ নিতে হবে। ক্যাম্পে যেন অস্থিতিশীল পরিবেশ সৃষ্টি না হয় সেদিকেও খেয়াল রাখতে হবে। তাদের অপরাধ যেন কোনোভাবেই বাংলাদেশকে প্রভাবিত না করতে পারে, সেদিকে দৃষ্টি আকর্ষণ করা জরুরি।

আকিব হোসাইন

শিক্ষার্থী, রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগ

ঢাকা কলেজ