নিজস্ব প্রতিবেদক: সৌদি আরব ৪২ হাজার রোহিঙ্গাকে বাংলাদেশে ফেরত পাঠাতে চাপ দিচ্ছে বলে যে খবর এসেছে, তা নাকচ করে দিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন। তিনি বলেন, সৌদি সরকার রোহিঙ্গা নিয়ে এখনও কিছু বলেনি।
সম্প্রতি এক সংবাদপত্রে খবর প্রকাশ হয়, বাংলাদেশের পাসপোর্ট নিয়ে সৌদি আরব গিয়ে ধরা পড়া ৪২ হাজার রোহিঙ্গাকে ফেরত নিতে চাপ দিচ্ছে দেশটির সরকার। গতকাল ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে এ বিষয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী বলেন, ‘এটা আসলে ঠিক নয়। এটা পেপার লিখেছে, আমাদের কাছে সৌদি আরব এ সম্পর্কে কিছুই বলেনি। সুতরাং এটা আমরা যদি সরকারিভাবে না পাই, তাহলে এ সম্পর্কে আমাদের কমেন্ট করার কোনো কারণ নেই।’
তিনি বলেন, ‘রোহিঙ্গা যদি হয়, তারা তাদের দেশে যাবে, আমাদের এখানে কেন? বাংলাদেশি হলে আমরা নিশ্চয় দেখব।’ যৌথ কমিশনের সভায় সৌদি আরব বিষয়টি তুলেছে বলে প্রকাশিত সংবাদ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে।
এ বিষয়ে মোমেন বলেন, ‘তাহলে তারা (বাংলাদেশ মিশন) আমাদের জানাবে। আমাদের যদি জানায়, তখন আমরা কথা বলব। হঠাৎ করে এসব আসছে পত্রিকায়। আমাদের সরকারিভাবে যদি জানায়, তখন এগুলো নিয়ে আলাপ করব, তার আগে নয়।’
আন্তর্জাতিক কনভেনশন সিটি বসুন্ধরায় ‘বিমসটেক ট্যাডিশনাল হেলথকেয়ার এক্সপো’র উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শেষে সাংবাদিকদের প্রশ্নের উত্তর দেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী। বাংলাদেশ আয়ুর্বেদ ফাউন্ডেশন ও ইন্ডিয়ান চেম্বার অব কমার্স (আইসিসি) যৌথভাবে তিন দিনব্যাপী ওই প্রদর্শনীর আয়োজন করেছে।
উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে অন্যদের মধ্যে বিমসটেক মহাসচিব শহীদুল ইসলাম, ঢাকাস্থ ভারতীয় হাইকমিশনার রীভা গাঙ্গুলী দাশ ও বাংলাদেশ আয়ুর্বেদ ফাউন্ডেশনের সভাপতি এবিএম গোলাম মোস্তফা বক্তব্য দেন।
এদিকে পররাষ্ট্র সচিব মাসুদ বিন মোমেন বলেন, রোহিঙ্গা সমস্যা যত বেশি দীর্ঘায়িত হবে, মানবপাচারের ঝুঁকি তত বাড়বে। গতকাল রাষ্ট্রীয় অতিথি ভবন পদ্মায় এক অনুষ্ঠান শেষে তিনি সাংবাদিকদের এ কথা বলেন।
পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘রোহিঙ্গারা যে পাচার হচ্ছে বা হবে, এই ঝুঁকির কথা আমরা সব সময় বলেছি। আমরা জানি যে, এ সমস্যা যত বেশি দীর্ঘায়িত হবে, মানবপাচারের বিষয়গুলো থাকবে। এখানে শুধু মানবপাচার নয়, মাদক ব্যবসারও ঝুঁকি আছে। এসব বিষয় বিবেচনা করেই কাঁটাতারের বেড়া দেওয়ার জন্য চিন্তা করা হয়েছে। তাদের নিরাপত্তা ও বাংলাদেশের অন্য জায়গায় রোহিঙ্গারা যেন যেতে না পারে, সেটি বিবেচনা করে কাঁটাতারের বেড়া দেওয়া হচ্ছে।’
রোহিঙ্গাদের হাতে বেশি অর্থ থাকার বিষয়ে সতর্ক করে তিনি বলেন, ‘যে মুহূর্তে তাদের হাতে বাড়তি অর্থ থাকবে, তারা মানবপাচারকারীদের শিকার হবে। অতীতে আমরা দেখেছি শুধু বাংলাদেশ থেকে নয়, রাখাইন থেকেও তারা পাচারের শিকার হয়েছে।’
মাসুদ বিন মোমেন বলেন, ‘তারা বিভিন্ন সময়ে বাংলাদেশের পাসপোর্ট বা অন্য জিনিস পাওয়ার চেষ্টা করেছে এবং অনেক সময়ে ধরাও পড়েছে। সুতরাং এ বিষয়গুলো নিয়ে বেশি সাবধান থাকতে হবে। এসব কারণে ভাসানচরের যে বিষয়টি সেটি গুরুত্বপূর্ণ। তারা সেখানে ভালো থাকবে এবং এই ঝুঁকিগুলো কম থাকবে।’
সৌদি আরবে থাকা রোহিঙ্গা ইস্যুতে তিনি বলেন, ‘এটি নিয়ে আলোচনা চলছে। আজকে সৌদি আরবের সঙ্গে যৌথ কমিশনের বৈঠক আছে।’
জঙ্গি গ্রুপের উপস্থিতির বিষয়ে ট্রান্সপারেন্সি ইন্টারন্যাশনালের রিপোর্টের বিষয়ে পররাষ্ট্র সচিব বলেন, ‘জঙ্গি গ্রুপের বিষয়ে আমাদের জানা নেই। কীসের ওপর ভিত্তি করে টিআইবি এ তথ্য দিয়েছে সেটি আমরা জানি না। আমাদের নিরাপত্তা বাহিনী যথেষ্ট তৎপর। কিন্তু রাতের অন্ধকারে হয়তো মাদক চোরাচালান হয়। এছাড়া ছোট আগ্নেয়াস্ত্র এক-দুবার পাওয়া গেছে এবং সেগুলো আমরা গুরুত্বের সঙ্গে নিয়েছি। আমাদের তথ্য অনুযায়ী জঙ্গি গ্রুপ কাজ করছে, এমন কিছু জানা নেই।’