রোহিঙ্গা পুনর্বাসনে ২৩১২ কোটি টাকার প্রকল্প

নিজস্ব প্রতিবেদক: মিয়ানমার থেকে বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত হয়ে বাংলাদেশে আসা রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর মানুষদের পুনর্বাসনে দুই হাজার ৩১২ কোটি টাকার প্রকল্প নিচ্ছে সরকার। আশ্রয়ন প্রকল্পটির আওতায় এক লাখ রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীকে নোয়াখালীর ভাসানচরে থাকার ব্যবস্থা করা হবে। এ প্রকল্পটিসহ মোট ১৪টি উন্নয়ন প্রকল্প গতকাল জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটিতে (একনেক) অনুমোদন দেওয়া হয়। এসব প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ১০ হাজার ১০০ কোটি টাকা। এর মধ্যে সরকারের নিজস্ব তহবিল থেকে ১০ হাজার ৪৮ কোটি টাকা এবং ৫১ কোটি টাকা সংশ্লিষ্ট সংস্থার নিজস্ব তহবিল থেকে জোগানো হবে।

প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের অধীনে রোহিঙ্গাদের জন্য নেওয়া আশ্রয়ন প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করা হবে। প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ নৌবাহিনী। পুরোপুরি সরকারি অর্থায়নের এ প্রকল্পের কাজ ২০১৯ সালের নভেম্বরের মধ্যে শেষ করার লক্ষ্য ঠিক করা হয়েছে।

রাজধানীর আগারগাঁওয়ে এনইসি সম্মেলন কক্ষে গতকাল প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সভাপতিত্বে একনেক সভায় ‘আশ্রয়ন-৩ (নোয়াখালী জেলার হাতিয়া থানাধীন চর ঈশ্বর ইউনিয়নস্থ ভাসানচরে এক লাখ বলপূর্বক বাস্তুচ্যুত মিয়ানমারের নাগরিকদের আবাসন এবং দ্বীপের নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় অবকাঠামো নির্মাণ)’ শীর্ষক প্রকল্প অনুমোদন পায়।

পরে পরিকল্পনামন্ত্রী আ হ ম মুস্তফা কামাল এক সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘রোহিঙ্গাদের ফেরত পাঠাতে এরই মধ্যে মিয়ানমারের সঙ্গে একটি চুক্তি হয়েছে। কিন্তু এত মানুষ ফিরিয়ে নিতে সময় দরকার। বর্তমানে অনেক রোহিঙ্গা খোলা আকাশের নিচে অমানবিক পরিবেশে বসবাস করছে। এ পরিস্থিতিতে তাদের আশ্রয় দিতে প্রকল্প নেওয়া হয়েছে।’

নোয়াখালী জেলার চর ঈশ্বর ইউনিয়নে ভাসানচরের অবস্থান। নোয়াখালী থেকে এর দূরত্ব ২১ নটিক্যাল মাইল।

টেকনাফ ও উখিয়ায় স্থানীয় অধিবাসীদের সংখ্যা যেখানে পাঁচ লাখ সাত হাজার, সেখানে নতুন-পুরোনো মিলিয়ে দশ থেকে ১২ লাখ রোহিঙ্গা ওই এলাকায় আশ্রয় নেওয়ায় নানা সমস্যার সৃষ্টি হচ্ছে এবং পর্যটন এলাকা কক্সাজারের পরিবেশ নষ্ট হচ্ছে বলে উদ্বেগ প্রকাশ করা হয় প্রকল্পের কার্যপত্রে।

এ প্রকল্পের মাধ্যমে মূলত ভাসানচরের ভূমি উন্নয়ন ও সমুদ্রতীরের নিরাপত্তা কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। এক লাখের বেশি মানুষের বসবাসের জন্য সেখানে ১২০টি গুচ্ছ গ্রামে এক হাজার ৪৪০টি ব্যারাক হাউজ ও ১২০টি আশ্রয় কেন্দ্র নির্মাণ করা হবে। এছাড়া থাকবে উপাসনালয়, নিরাপত্তার জন্য নৌবাহিনীর অফিস ও বাসভবন, অভ্যন্তরীণ সড়ক, পানি নিষ্কাশন অবকাঠামো, নলকূপ ও পানি সরবরাহ অবকাঠামো এবং ওয়াচ টাওয়ার।

কয়েক দশক ধরে কক্সাজারের শরণার্থী শিবির ও তার বাইরে অবস্থান নেওয়া চার লাখের বেশি রোহিঙ্গাকে নিয়ে সামাজিক নানা সমস্যা সৃষ্টির প্রেক্ষাপটে তাদের নোয়াখালীর দ্বীপ উপজেলা হাতিয়ার কাছে মেঘনার মোহনার বিরান দ্বীপ ভাসানচরে সরিয়ে নেওয়ার পরিকল্পনা করে সরকার।

ভাসানচরের আয়তন জোয়ারের সময় ১০ হাজার এবং ভাটার সময় ১৫ হাজার একর। জনমানবহীন চরটি মূলত গরু-মহিষের চারণভূমি হিসেবে ব্যবহƒত হতো। ২০১৩ সালে এ চরকে সংরক্ষিত বনাঞ্চল এলাকা বলে ঘোষণা করা হয়।  ইঞ্জিনচালিত নৌযান ছাড়া সেখানে যাতায়াতের সুযোগ নেই। হাতিয়া থেকে যেতেও তিন থেকে সাড়ে ৩ ঘণ্টা সময় লাগে।

এক দশক আগে জেগে ওঠা এই চরকে ‘ঘূর্ণিঝড় ও বন্যাপ্রবণ’ এবং জলদস্যুর উৎপাতের কারণে বসবাসের জন্য বিশেষভাবে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে বর্ণনা করে চলতি বছরের শুরুতে একটি প্রতিবেদন প্রকাশ করে বার্তা সংস্থা রয়টার্স। গত ফেব্রুয়ারিতে বাংলাদেশ বন বিভাগের এক প্রতিবেদনেও দ্বীপটিকে মানুষ বসবাসের অনুপযোগী বলা হয়।

তবে এর মাসখানেক পরে নোয়াখালী জেলা প্রশাসনের আরেক প্রতিবেদনে বলা হয়, ভাসানচরের পরিবেশ অন্যান্য চরের মতোই। আনুষঙ্গিক অবকাঠামো তৈরি করা হলে সেখানে জনবসতি স্থাপনে সমস্যা হবে না।

এর মধ্যে আগস্টের শেষে মিয়ানমারের রাখাইনে নতুন করে সেনা অভিযান শুরু হলে আবারও রোহিঙ্গার ঢল নামে। এ দফায় প্রায় সোয়া ছয় লাখ রোহিঙ্গা সীমান্ত পেরিয়ে কক্সবাজারে আশ্রয় নেওয়ায় ভাসানচরকে দ্রুত বসবাসের উপযোগী করার উদ্যোগ নেয় সরকার।

এক প্রশ্নের জবাবে পরিকল্পনামন্ত্রী বলেন, প্রকল্পটির বিষয়ে দাতাদের সঙ্গেও কথা হয়েছে। তারা এগিয়ে এলে সরকার তাদের স্বাগত জানাবে। সরকার সর্বোচ্চ সক্ষমতা দিয়ে মন উজার করে মানবিক সহায়তার উদ্দেশ্যে এ কার্যক্রম হাতে নিয়েছে বলে উল্লেখ করেন পরিকল্পনামন্ত্রী।

গতকাল অনুমোদন হওয়া অন্য প্রকল্পগুলোর মধ্যে ময়মনসিংহ জোনের বিদ্যুৎ বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় প্রাক্কলন করা হয়েছে এক হাজার ৫৭৫ কোটি টাকা; মাদারিপুর, শরিয়তপুর ও রাজবাড়ী জেলা গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় এক হাজার ৫৬০ কোটি টাকা; বরিশাল, ঝালকাঠি ও পিরোজপুরে গুরুত্বপূর্ণ পল্লী অবকাঠামো উন্নয়নে ব্যয় ৯৫০ কোটি টাকা; সিরাজগঞ্জ জেলার গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় ৪৪৬ কোটি টাকা; গুরুত্বপূর্ণ গ্রামীণ অবকাঠামো উন্নয়ন প্রকল্পে (দ্বিতীয় পর্য়ায়) ব্যয় ৩৫৩ কোটি টাকা; নোয়াখালী ফেনী ও লক্ষ্মীপুর জেলায় ক্ষুদ্র সেচ উন্নয়ন প্রকল্পে ব্যয় ১৪৩ কোটি টাকা; আজিমপুর সরকারি কলোনিতে সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য বহুতল আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণে ব্যয় ৯৯০ কোটি টাকা; ঢাকার জিগাতলায় সরকারি কর্মকর্তা কর্মচারীদের (গণপূর্ত ও স্থাপত্য অধিদফতর) জন্য ২৮৮টি আবাসিক ফ্ল্যাট নির্মাণে ৩০৪ কোটি টাকা; ঢাকার মতিঝিল সরকারি কলোনিতে (হাসপাতাল জোন-স্টোর-কম্পাউন্ড) বহুতল আবাসিক ভবন নির্মাণে ব্যয় হবে ২৫৭ কোটি টাকা; কুমিল্লা শহরের শাসনগাছা রেলওয়ে ওভারপাস নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় ৯৪ কোটি টাকা; শেরপুর (আখের বাজার লঙ্গরপাড়া শ্রীবর্দী সড়ক প্রশস্তকরণ ও মজবুতিকরণে ব্যয় ৮২ কোটি টাকা; উচ্চ মাধ্যমিক উপবৃত্তি প্রকল্পে ব্যয় হবে ৭৯৮ কোটি টাকা এবং চট্টগ্রাম মুসলিম ইনস্টিটিউট সাংস্কৃতিক কমপ্লেক্স নির্মাণ প্রকল্পে ব্যয় হবে ২৩৩ কোটি টাকা।

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০