নিজস্ব প্রতিবেদক: রোহিঙ্গা জনগোষ্ঠীর বিপুল জনসংখ্যা বাংলাদেশের আশ্রয় নেওয়ায় দেশের সার্বিক অর্থনীতিতে চাপ সৃষ্টি হয়েছে। বিশেষ করে চট্টগ্রাম বন্দর ও তার আশপাশে বাস্তবায়নাধীন বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো এ কারণে চাপের মুখে পড়বে। সানেমের সাম্প্রতিক অর্থনৈতিক পর্যালোচনায় তুলে ধরা হয়েছে এ বিষয়টি।
বুধবার রাজধানীর ওয়েস্টিন হোটেলে গবেষণা প্রতিষ্ঠান সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক অন ইকোনমিক মডেলিংয়ের (সানেম) অয়োজনে ‘বাংলাদেশের অর্থনীতির ত্রৈমাসিক পর্যালোচনা’ শীর্ষক আলোচনা অনুষ্ঠিত হয়। এতে মূল প্রবন্ধ উপস্থাপন করেন সানেমের নির্বাহী পরিচালক এবং ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. সেলিম রায়হান। এতে সভাপতিত্ব করেন সানেমের চেয়ারম্যান ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতির বিভাগের অধ্যাপক ড. বজলুল হক খন্দকার।
পর্যালোচনায় বলা হয়, চারটি বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে বাংলাদেশে বিশেষ অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলোর (এসইজেড) অগ্রগতি বিশ্লেষণ করা যায়। এগুলো হলো ভ‚মি অধিগ্রহণ, সম্ভাব্যতা যাচাই, অবকাঠামো উন্নয়ন ও চ‚ড়ান্ত বিনিয়োগ কার্যক্রম। এ চারটি বিষয়ের অগ্রগতির হিসাব করে দেখা গেছে, দেশের ৭৯টি অর্থনৈতিক অঞ্চলের মধ্যে ৩৯টিরই সূচক মান শূন্য। চারটি অঞ্চলের সূচক মান ৭৫। আটটির সূচক মান ৬৮ দশমিক ৭৫।
সানেমের মতে, অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে এখন পর্যন্ত স্পষ্ট কোনো রোডম্যাপ নেই। এ অস্পষ্টতা বেসরকারি খাতের বিনিয়োগকারীদের মধ্যে অনিশ্চয়তা সৃষ্টি করেছে বলেও মনে করে সংস্থাটি।
ড. রায়হান মত প্রকাশ করেন, অর্থনৈতিক অঞ্চলগুলো ঢাকা ও চট্টগ্রামকেন্দ্রিক হয়ে গেছে। ইউটিলিটি ও যোগাযোগ সুবিধার কারণে এমনটি হয়েছে। কিন্তু দেশের সার্বিক অন্তর্ভুক্তিমূলক প্রবৃদ্ধির জন্য উত্তরাঞ্চল ও দক্ষিণাঞ্চলকেও গুরুত্ব দিতে হবে।
এদিকে সাম্প্রতিক সময়ে সৃষ্টি হওয়া চালের বাজারে অস্থিরতার বিষয়টি উঠে এসেছে সানেমের পর্যালোচনায়। এতে বলা হয়, গত বছরের বর্তমান সময়ের তুলনায় এখন চালের দাম ৪৪ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। এফএও ও ইউএসডিএর অনুমানের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, ২০১৭-১৮ সালে দেশে চালের উৎপাদন কমবে। এ অবস্থায় স্থানীয় বাজারে চালের সরবরাহ বৃদ্ধি করতে চাল আমদানির প্রচেষ্টা আরও জোরদার করা উচিত বলে মত দেওয়া হয়। ভারত, কম্বোডিয়া এবং মিয়ানমার থেকে এসব চাল আমদানি করা যেতে পারে বলে পর্যবেক্ষণে বলা হয়, যদিও সম্প্রতি মিয়ানমার থেকে চাল আমদানি নিয়ে সমালোচনার সৃষ্টি হয়েছে।
তবে চালের মূল্যবৃদ্ধি আন্তর্জাতিক বাজারের সঙ্গে তুলনা করলে তা এখনও আশঙ্কাজনক পর্যায়ে পৌঁছায়নি বলে উল্লেখ করেন ড. সেলিম রায়হান।
এছাড়া পর্যালোচনায় বলা হয়, প্রবৃদ্ধির সঙ্গে কর্মসংস্থান নিশ্চিত করার বিষয়টি জরুরি। কর্মসংস্থানহীন প্রবৃদ্ধি অর্থনীতির জন্য কোনো ইতিবাচক বিষয় নয়। কিন্তু সাম্প্রতিক বছরগুলোয় বাংলাদেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি এক ধরনের ‘কর্মসংস্থান বিমুখ প্রবৃদ্ধি’র অবস্থা সৃষ্টি করছে। তথ্য মতে, ২০১৩ থেকে ২০১৬ সালের মধ্যে বাংলাদেশে প্রথমবারের মতো মোট কর্মসংস্থানে শিল্প খাতের অবস্থান কমেছে। শিল্পে নারীর কর্মসংস্থান কমেছে, অন্যদিকে এই সংখ্যা বেড়েছে কৃষিতে। এ অবস্থায় রফতানি-বাণিজ্যের সূচক এবং কর্মসংস্থানের হার নি¤œমুখী হওয়ার পরও প্রবৃদ্ধির উচ্চহার দেশের পরিসংখ্যানগত তথ্যের দিকে প্রশ্ন সৃষ্টি করতে পারে বলে মন্তব্য করেন ড. রায়হান।
এছাড়া এসজিডি বাস্তবায়নে বাংলাদেশকে দেশীয় সম্পদের ওপর অনেকাংশে নির্ভর করতে হবে, যা একটি বড় চ্যালেঞ্জ। এজন্য রাজনৈতিক অঙ্গীকার আবশ্যক বলে মনে করা হয়।
সভায় বক্তারা ব্যাংক খাতের খেলাপি ঋণের সংকট, বন্যা-পরবর্তী প্রভাব ও মূল্যস্ফীতির কথা তুলে ধরেন। মূল্যস্ফীতির সঠিক তথ্য সরকার দিচ্ছে না বলে অভিযোগ করে ড. বজলুল হক খন্দকার বলেন, ‘বাজেটের ঘাটতি অর্থায়নের সময় এখনই। সরকার এ বিষয়টি ভেবে দেখতে পারে। কেননা এখন তহবিল ব্যয় (কস্ট অব ফান্ড) অনেক কম।’
Add Comment