শিক্ষাজীবনের শেষ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে আয়োজন করা হয় র্যাগ ডে। কয়েক বছর আগেও দেশের স্কুল-কলেজগুলোড বিদায় অনুষ্ঠান বা দোয়া মাহফিলের আয়োজন করা হতো, অত্যন্ত সুন্দর ও মনোরম পরিবেশে বক্তৃতাদান এবং বিভিন্ন আয়োজনের মাধ্যমে সমাপ্তি হতো বিদায় অনুষ্ঠানের। শিক্ষকদের মূল্যবান বাণী আর দিকনির্দেশনা হƒদয়ে লালন করে শিক্ষার্থীরা পরবর্তী জীবনে বড় হওয়ার স্বপ্ন দেখত। ভুলভ্রান্তি করলে শিক্ষকদের কাছে ক্ষমা চেয়ে নিত। শিক্ষকরা খুশি হয়ে ক্ষমার পাশাপাশি শুভকামনাও করতেন। আহা! কতই না সুন্দর ছিল সেই দিনগুলো, মনে হলেই যেন এখনও অজান্তেই চোখের দুফোঁটা জল ঝরে পড়ে, আর পুরোনো দিনে ফিরে যেতে ইচ্ছা করে। দীর্ঘদিনের সহপাঠী ও শিক্ষকদের সঙ্গে কখনোই একই শ্রেণিকক্ষে শিক্ষালাভ করা হবে না একথা ভাবতেই যেন সবার হƒদয়ে রক্তক্ষরণ ঘটত। বন্ধুদের জড়িয়ে ধরে কান্নার মধ্য দিয়ে ফুটে উঠত বিদায়ের করুণ মুহূর্তগুলো। কখনও শিক্ষকরাও কান্নায় ভেঙে পড়তেন। ছাত্র-শিক্ষক, সমাজ-সংস্কৃতি সব পরিবেশের সঙ্গেই সামঞ্জস্য ছিল বিদায় অনুষ্ঠান। বেদনাময় ও নিস্তব্ধ পরিবেশের করুণ চিত্র ফুটে উঠত বিদায়বেলায়। এভাবেই সমাপ্তি ঘটত স্কুল-কলেজজীবনের শেষ দিনটির।
দুঃখজনক হলেও সত্যি, পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ছাত্রজীবনের শেষ দিনটিকে স্মরণ রাখার জন্য র্যাগ ডের আয়োজন করে। এ নিয়েও যেন আলোচনা-সমালোচনার শেষ নেই। যুগের সঙ্গে তাল মিলিয়ে চলতে হবে, তা না হলে আবার সাংস্কৃতিক ব্যবধান তৈরি হবে। আমরা সাংস্কৃতিকভাবে অনেক ‘আধুনিক’ হয়েছি, আমাদেরও আধুনিক হয়ে চলতে হবে।
সম্প্রতি সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে ভিডিও চোখে পড়ল। এক ডিজে পার্টিতে সাদা টি-শার্ট পরিহিত কয়েকজন ছেলেমেয়ে একসঙ্গে নাচানাচি করছে। টি-শার্টের পেছনে বিভিন্ন অশ্লীল শব্দ লেখা। শব্দগুলো পড়তে খুব বেশি কষ্ট হয়নি। ভাবলাম দেশের বাইরের কোনো ইউনিভার্সিটির র্যাগ ডে হবে। ভালো করে লক্ষ করে আবিষ্কার করলাম, এরা এদেশের প্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থী। নিজ শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে ডিজে পার্টি ভাড়া করে বন্ধুবান্ধবীসহ একসঙ্গে নাচানাচি করছে। পোশাকে কুরুচিপূর্ণ শব্দ লিখে কলেজজীবনের শেষ দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখার আপ্রাণ চেষ্টা করছে! এটিকে আমরা পৃথিবীর কোন সংস্কৃতির সঙ্গে তুলনা করতে পারি?
দেশের সাধারণ মানুষ সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমের ভিডিওতে শিক্ষার্থীদের গায়ে লেখা এমন কুরুচিপূর্ণ শব্দ বা বাক্য দেখে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিবেশ সম্পর্কে কী ধারণা অর্জন করবে? গ্রামীণ সহজ-সরল কোনো অভিভাবক এসব ভিডিও দেখলে কি মেয়েকে শহরে পড়াশোনার জন্য পাঠাতে চাইবেন?
র্যাগ ডে যদি পালন করতেই হয় তাহলে সব দায়িত্ব কলেজ কর্তৃপক্ষকে নিতে হবে, শিক্ষার্থীরা যাতে কোনোভাবেই অশ্লীলতা ধারণ করার সাহস না পায়। এতে শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের সম্মান নষ্ট হয় না এবং সাধারণ জনগণের মনে স্কুল-কলেজের পরিবেশ সম্বন্ধে নেতিবাচক ধারণার জš§ নেয়। অভিভাবক ও শিক্ষার্থীদের সচেতন হতে হবে।
ইমরান হোসাইন ইমন
শিক্ষার্থী, হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়, দিনাজপুর