Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 11:41 pm

র‌্যাবে নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত ‘পর্যালোচনার’ সুযোগ আছে: ব্লিংকেনকে মোমেন

নিজস্ব প্রতিবেদক: বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র‌্যাব ও এর সাবেক-বর্তমান কর্মকর্তাদের ওপর যুক্তরাষ্ট্রের নিষেধাজ্ঞার সিদ্ধান্ত পর্যালোচনার জন্য দেশটির পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেনকে চিঠি পাঠিয়েছেন পররাষ্ট্রমন্ত্রী এ কে আব্দুল মোমেন।

গতকাল সিলেটে সাংবাদিকদের প্রশ্নে পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন জানান, ব্লিংকেনের সঙ্গে গত মাসের মাঝামাঝিতে হওয়া ফোনালাপের বিষয়গুলো ‘পুনর্ব্যক্ত’ করে এ চিঠি লিখেছেন তিনি।

তিনি বলেন, ‘উনাকে বললাম, এই বিষয়টা পরীক্ষা-নিরীক্ষার সুযোগ রয়েছে। আমরা সেই কথাটাই চিঠিতে লিখেছি, যে জিনিসটা উনার সঙ্গে আলাপ হয়েছে, সেটা নিয়ে।’

আন্তর্জাতিক মানবাধিকার দিবস উপলক্ষে ১০ ডিসেম্বর যুক্তরাষ্ট্রের অর্থ দপ্তর ‘গুরুতর মানবাধিকার লঙ্ঘনের’ অভিযোগে বিভিন্ন দেশের ১৫ ব্যক্তি ও ১০ প্রতিষ্ঠানের সম্পদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপের ঘোষণা দেয়।

এ তালিকায় র‌্যাবের সাবেক মহাপরিচালক ও পুলিশের বর্তমান আইজিপি বেনজীর আহমদের সঙ্গে কক্সবাজারে র‌্যাব-৭ এর সাবেক অধিনায়ক মিফতা উদ্দিন আহমেদের নাম এসেছে।

এছাড়া আলাদাভাবে বিভিন্ন দেশের ১২ কর্মকর্তার নাম যুক্তরাষ্ট্রের ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞার তালিকায় যুক্ত করার কথা বলেছে সে দেশের পররাষ্ট্র দপ্তর।

সেখানে রাখা হয়েছে বাংলাদেশের এলিট ফোর্স র‌্যাব, এর সাবেক মহাপরিচালক বেনজীর আহমেদ এবং সাবেক ও বর্তমান আরও পাঁচ কর্মকর্তার নাম।

নিষেধাজ্ঞা আরোপের প্রতিক্রিয়ায় ঢাকায় যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূত আর্ল মিলারকে তলব করে সরকারের অবস্থান জানায় পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। এ বার্তা তাকে ওয়াশিংটনে পৌঁছে দিতে বলা হয়।

নিষেধাজ্ঞার বিষয়ে ঢাকার অসন্তোষের মধ্যে ১৫ ডিসেম্বর পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেনের সঙ্গে ফোনালাপ হয় মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী ব্লিংকেনের।

মোমেন সাংবাদিকদের জানান, ওই ফোনালাপের পরপরই চিঠিটি তৈরি করা হয়েছিল। এরপর বছরের শেষ নাগাদ তা পাঠানো হয়।

সেই আলাপের বিষয়গুলো ‘পুনর্ব্যক্ত’ করে ওয়াশিংটনে চিঠি পাঠানোর কথা জানিয়ে গতকাল তিনি বলেন, ‘আমাদের আলাপটা পজিটিভ ছিল। উনি বলেছেন, অনেক ল মেকার এটা ম্যানডেট করেছে, পরে সিদ্ধান্তটা হয়েছে। আমরা বললাম, বিভিন্ন ব্যাপারে আপনাদের সঙ্গে আমাদের ৫০ বছরের সম্পর্ক। বেশ উত্তম সম্পর্ক। বিভিন্ন ডায়ালগের সুযোগ আছে। আমরা কোনো কিছু না জেনে হঠাৎ করে অপ্রত্যাশিত এই সিদ্ধান্ত জেনে আমরা বিস্মিত হয়েছি।’

পররাষ্ট্রমন্ত্রী মোমেন বলেন, ‘এটাও বললাম, র‌্যাব একটি ক্রেডিবল অর্গানাইজেশন, এদের কারণে সন্ত্রাস কমেছে। এদের কারণে ড্রাগ মোটামুটি নিয়ন্ত্রিত, মানব পাচারও নিয়ন্ত্রিত যেটা তাদেরও নীতি।’

দু’দেশেই বিচারবহির্ভূত হত্যাকাণ্ড ঘটার কথা ব্লিংকেনের কাছে ফোনালাপে তুলে ধরার কথা জানিয়ে তিনি বলেন, ‘এখানেও পুলিশ মেরে ফেলে। ওখানেও মারে। আপনার দেশে তো হাজারখানেক লোক মেরে ফেলে, আর আপনারা বলেছেন যে, ১০ বছরে কয়েকশ’ লোক, ৪০০ লোক মেরে ফেলেছে। অনেকটা মনে হচ্ছে ওদের জিনিসটা ঠিক হয় নাই।’

মানবাধিকার প্রশ্নে সরকারের সোচ্চার থাকার কথা চিঠিতে তুলে ধরার কথা জানিয়ে মোমেন বলেন, ‘এ ব্যাপারে আমাদের কোনো ছাড় নাই। এমনকি র‌্যাবের যারা কিছু বাজে কাজ করেছে, তাদের শাস্তি হয়েছে। শক্তিশালীদের ক্ষেত্রেও আইন ছিল অন্ধ। আমরা সে কথাই লিখেছি উনাকে।’

আরেক প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘তারা নিষেধাজ্ঞা প্রত্যাহার করবে কি-না, সেটা তাদের বিষয়। আমরা সরাসরি বলিনি, প্রত্যাহার করো। আমরা বলেছি র‌্যাব ভালো প্রতিষ্ঠান, তারা তাদের সিদ্ধান্ত পুনঃপরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে পারে।’