কেবল উদরপূর্তি নয়, খাওয়াকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ভাবনা বরাবরই ছিল, আছে বাঙালির চিন্তায় ও রুচিতে। খাওয়ার পদবৈচিত্র্য তাই এ জনপদজুড়ে। দেশের নানা স্থানের বিশেষ বিশেষ খাবারের কথা জানাচ্ছেন মীর মাইনুল ইসলাম
আগ্রার কথা বললে চোখের সামনে ভেসে ওঠে তাজমহল। প্যারিসের বেলায় আইফেল টাওয়ার। ঠিক তেমনি কুমিল্লা প্রসঙ্গে মনের কোণে উঁকি দেয় রসমালাই। নাম শুনলে জিভে জল আসার মতো সুস্বাদু মিষ্টান্নটি। এ মিষ্টান্নের খ্যাতি কেবল দেশেই নয়, বহির্বিশ্বেও ছড়িয়ে পড়েছে। দেশের নানা স্থানে তৈরি হলেও কুমিল্লার রসমালাইয়ের স্বাদ অতুলনীয়।
কুমিল্লার কান্দিরপাড় মনোহরপুরের মাতৃভাণ্ডার, ভগবতী, জলযোগ, জেনিস, পোড়াবাড়ি প্রভৃতি দোকানে পাওয়া যায় রসমালাই। পুলিশ লাইনের পিয়াসা ও ঝাউতলার অমৃত সুইটসেও পাওয়া যায়। তবে সবচেয়ে ভালো রসমালাই পাবেন মাতৃভাণ্ডার ও ভগবতী দোকানে। আসলে মনোহরপুরের আনাচে কানাচে রসমালাইয়ের দোকান আছে। এসব দোকানে নেই কোনো চাকচিক্য। বেশিরভাগ দোকানে বসার ব্যবস্থাও নেই। তবে মানে ও স্বাদে সেরা।
কুমিল্লার রসমালাইয়ের ইতিহাস জেনে নেওয়া যেতে পারে। প্রায় ১০০ বছর আগে এখানে রসমালাই প্রস্তুত শুরু হয়। কুমিল্লার রসমালাইয়ের আদি উদ্ভাবক ত্রিপুরা রাজ্যের ঘোষ সম্প্রদায়। উনিশ শতকের প্রথমদিকে নানা পারিবারিক ও সামাজিক অনুষ্ঠানে তারা চাহিদা অনুযায়ী বাহারি মিষ্টি সরবরাহ করতেন। সেই সময় রসগোল্লার সঙ্গে মালাইকারির প্রলেপ দেওয়া এক প্রকার মিষ্টির প্রচলনও ছিল। একে মালাই রসগোল্লা বলতো অনেকে। পরে দুধ জ্বাল দিয়ে ক্ষীর বানিয়ে তার মধ্যে শুকনা রসগোল্লা ডুবিয়ে তৈরি করা হতো ক্ষীরসহ রসগোল্লা। এর নাম দেওয়া হয় ‘ক্ষীরভোগ’। রসমালাইর প্রথম নাম ক্ষীরভোগ।
ত্রিশের দশকে এ রসগোল্লার আকার ছোট করে দুধের ক্ষীরের মধ্যে ডুবিয়ে পরিবেশন শুরু হয়। নাম দেওয়া হয় রসমালাই। মূলত দুটি আলাদা মিষ্টান্নের সমন্বয়ে তৈরি করা হয় এটি। রসগোল্লা ও মালাইয়ের মিশ্রণে পরিপূর্ণতা পায় রসমালাই।
এক মণ দুধ জ্বাল দিয়ে ১০ থেকে ১২ কেজি মালাই তৈরি করা হয়। এ ঘনত্বের ওপরই রসমালাইয়ের স্বাদ নির্ভর করে। এ মালাই চুলা থেকে নামিয়ে ছোট ছোট দানার আকারে বড় গামলায় রাখা হয়। তারপর ঠাণ্ডা করা হয়। ভালোভাবে তৈরি রসমালাই ফ্রিজ ছাড়াই ৩৬ ঘণ্টা পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। প্রতিদিন ভোর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত এখানে প্রায় লাখ টাকার রসমালাই বিক্রি হয়। মনোহরপুরে ১ কেজি রসমালাইয়ের দাম ২৫০ থেকে ৩০০ টাকা।
Add Comment