শুধু রসনাবিলাস নয়, খাদ্যগ্রহণকে শিল্পের পর্যায়ে নিয়ে যাওয়ার ভাবনা বরাবরই ছিল, আছে বাঙালির চিন্তা ও রুচিতে। খাবারের পদবৈচিত্র্য তাই এ জনপদজুড়ে। এবার নওগাঁর প্যারা সন্দেশের কথা জানাচ্ছেন মীর মাইনুল ইসলাম
বাংলাদেশের খাবার প্রসঙ্গে প্রথমেই আসে মিষ্টান্নের নাম। এ তালিকায় নওগাঁর প্যারা সন্দেশ তার সুনাম অক্ষুণœ রেখেছে অনেক বছর ধরে। আকারে দুই থেকে তিন ইঞ্চি। গুণগতমান ও স্বাদের কারণে এর সুখ্যাতি রয়েছে বিদেশেও।
ঐতিহ্যবাহী এ প্যারা সন্দেশের প্রচলন কবে নওগাঁয় শুরু হয়েছে তার কোনো সঠিক ইতিহাস কেউই জানে না। কে বা কারা প্রথম এ সন্দেশ তৈরির পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন তা জানা যায়নি। এ সন্দেশের বয়স প্রায় একশ বছর। নওগাঁ শহরের কালীতলা পূজামণ্ডপের প্রধান গেট সংলগ্ন এলাকায় রয়েছে ছোট ছোট বেশ কিছু মিষ্টির দোকান। শত বছর আগে এ দোকানিরাই প্যারা সন্দেশ তৈরি করেন বলে ধারণা করা হয়।
প্রথমদিকে এ প্যারা সন্দেশ নানা পূজামণ্ডপের দেব-দেবীর উপসনার উদ্দেশ্যে ব্যবহার করা হতো। পরে স্বাদ ও গুণগতমানের কারণে এর সুনাম ছড়িয়ে পড়তে থাকে। প্রচলিত ধারণা মতে, মহেন্দ্রী দাস নামে এক ব্যক্তি সর্বপ্রথম নওগাঁয় এর ব্যবসা শুরু করেন। পরে তার ছেলে ধীরেন্দ্রনাথ দাস দোকানের দায়িত্ব পান। সেই একই সময় বিমল মহন্ত নামে এক কারিগরের হাতের গুণে এ মিষ্টির সুনাম ছড়িয়ে পরে।
ধীরেন্দ্রনাথ দাস প্রায় ৩০ বছর ব্যবসার পর দোকানটি সুরেসচন্দ্র দাস মহন্তের কাছে বিক্রি করে দেন। সুরেশচন্দ্র দাস তার দোকানে নারায়ণচন্দ্র প্রামাণিককে নতুন কারিগর হিসেবে নিয়োগ দেন। দোকানের মালিকানা পরিবর্তন হলেও কারিগর হিসেবে নারায়ণ চন্দ্র প্রামাণিকই থেকে যান।
প্যারা সন্দেশ তৈরির সময় প্রথম ধাপে তরল দুধের সঙ্গে চিনি মিশিয়ে জাল দিয়ে ঘন করে তৈরি করা হয় ক্ষীর। ক্ষীর হাতায় জড়িয়ে এলে নামিয়ে রাখা হয়। তারপর উষ্ণ ক্ষীর দুই হাতের তালুতে নিয়ে রোল করে সামান্য চাপ দিলে তৈরি হয়ে যায় প্যারা সন্দেশ। স্বাভাবিকভাবে এ সন্দেশ রাখা যায় ১০ থেকে ১৫ দিন। রেফ্রিজারেটরে এক মাসেরও বেশি সময় সংরক্ষণ করা যায়। প্রতি কেজি সন্দেশ বিক্রি করা হয় ২৭০-২৮০ টাকায়।
নওগাঁর এ প্যারা সন্দেশ লালচে বাদামি রঙের হয়ে থাকে। এর কড়া আবরণের ভেতর ও বাইরে একই স্বাদ পাওয়া যায়।
Add Comment