শেয়ার বিজ ডেস্ক: রাঙামাটির লংগদুতে স্থানীয় এক যুবলীগ নেতা নিহতের প্রতিবাদে বিক্ষোভ মিছিল থেকে পাহাড়িদের বাড়িঘরে আগুন দেওয়ার ঘটনায় মামলা হয়েছে। পুলিশ বাদী হয়ে গতকাল (শনিবার) লংগদু থানায় ৪০০ জনকে আসামি করে থানায় মামলা দায়ের করেছে। এদিকে লংগদু সদর ও তার আশেপাশের এলাকায় জারি করা ১৪৪ ধারা গতকাল দুপুরে প্রত্যাহার করা হয়েছে। খবর: বিডিনিউজ
লংগদু থানার ওসি মোমিনুল ইসলাম জানান, অগ্নিসংযোগ, হামলা ও পুলিশের ওপর আক্রমণের ঘটনায় দায়ের করা মামলায় ১৫ জনের নাম উল্লেখ করে অজ্ঞাত আরও ৪০০ জনকে আসামি করা হয়েছে। এ ঘটনায় জড়িত অভিযোগে পুলিশ সাতজনকে আটক করেছে।
গতকাল সকালে রাঙামাটি জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান ও পুলিশ সুপার সাঈদ তারিকুল হাসান ঘটনাস্থল পরিদর্শন করেন। পরে তারা উদ্ভূত পরিস্থিতি নিয়ে উপজেলা পরিষদ মিলনায়তনে স্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আইনশৃঙ্খলা বিষয়ে মতবিনিময় করেন। সেখানে জেলা প্রশাসক মানজারুল মান্নান এলাকার পরিস্থিতি স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে উল্লেখ করে ১৪৪ ধারা প্রত্যাহারের ঘোষণা দেন।
স্থানীয়রা জানান, গত বৃহস্পতিবার লংগদু উপজেলা থেকে ভাড়ায় মোটরসাইকেল চালক ও স্থানীয় সদর ইউনিয়ন যুবলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক নুরুল ইসলাম নয়ন দুজন যাত্রী নিয়ে দীঘিনালার উদ্দেশে রওনা হন। কিন্তু দুপুরের পর দীঘিনালার চারমাইল এলাকায় তার মৃতদেহ পড়ে থাকতে দেখে পুলিশকে খবর দেন স্থানীয়রা। পরে সন্ধ্যায় ফেসবুকে নয়নের মৃতদেহের ছবি দেখে শনাক্ত করেন পরিবার ও বন্ধুরা।
শুক্রবার সকালে নয়নের লাশ লংগদুতে তার গ্রামের বাড়ি বাইট্টাপাড়া আনা হয়। সেখান থেকে লংগদুবাসীর ব্যানারে কয়েক হাজার বাঙালির একটি বিশাল শোক মিছিল উপজেলা সদরের দিকে যাচ্ছিল জানাজার উদ্দেশে। একই সময় উপজেলার ঝর্ণাটিলা এলাকায় মারফত আলী নামের এক বাঙালির বাড়িতে দুর্বৃত্তরা আগুন দিয়েছে- এমন খবর পেয়ে এ মিছিল থেকেই প্রধান সড়কের পাশের লংগদু উপজেলা জনসংহতি সমিতির কার্যালয়সহ আশেপাশের পাহাড়িদের বাড়িঘরে ব্যাপক অগ্নিসংযোগ করা শুরু হয়। স্থানীয়দের ভাষ্যমতে, সেই সময় তিনটিলা পাড়া, বাত্যাপাড়া, উত্তর ও দক্ষিণ মানিকজুড় এবং বড়াদম এলাকায় পাহাড়িদের ঘরবাড়িতে আগুন দেওয়া হয়।
আগের দিন রাতেই স্থানীয় পাহাড়িরা সম্ভাব্য গোলযোগের শঙ্কায় নিরাপদ স্থানে চলে যাওয়ায় কোনো হতাহতের ঘটনা ঘটেনি। তবে পাহাড়ি অধ্যুষিত তিনটিলা পাড়ায় ব্যাপক অগ্নিসংযোগ করা হয়। ঘটনাস্থলে বিপুলসংখ্যক পুলিশ ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সদস্যরা থাকলেও তারাও নিরুপায় হয়ে পড়ে।
পরে উপজেলা পরিষদ মাঠে নয়নের জানাজা ও শোকসভা অনুষ্ঠিত হয়। শোকসভায় বক্তব্য দেন উপজেলা চেয়ারম্যান তোফাজ্জল হোসেন, ভাইস চেয়ারম্যান নাসিরউদ্দিন, জেলা পরিষদ সদস্য ও উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক মো. জানে আলম, পার্বত্য বাঙালি ছাত্র পরিষদের জেলা সভাপতি আলমগীর হোসেন, উপজেলা যুবলীগের সাধারণ সম্পাদক শফিকুল ইসলাম, সমাধিকার নেতা অ্যাডভোকেট আবছার আলী।
শোকসভায় বক্তব্য প্রদানকালে সেনাবাহিনীর লংগদু জোন কমান্ডার লেফটেন্যান্ট কর্নেল আ. আলীম চৌধুরী ও লংগদু থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) মোমিনুল ইসলাম সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানান এবং নয়নের খুনিদের গ্রেফতারের আশ্বাস দেন।
তিনটিলা এলাকার বাসিন্দা ও উপজেলা জনসংহতি সমিতির সাধারণ সম্পাদক মনিশংকর চাকমা বলেন, ‘আমাদের পাড়ার একটি ঘরও অবশিষ্ট নেই। দুই শতাধিক বাড়িঘর সম্পূর্ণ পুড়ে গেছে।’ তিনি আরও বলেন, ‘এ হত্যার ঘটনার সঙ্গে তো আমাদের কোনো সম্পৃক্ততা নেই, আমরা তো কিছুই জানি না। তবুও কেন আমাদের বাড়িঘর আগুনে পোড়ানো হলো, জানি না।’
লংগদু উপজেলা সমঅধিকার আন্দোলনের সভাপতি খলিলুর রহমান বলেন, ‘আমরা লংগদুবাসীর ব্যানারে সর্বদলীয়ভাবে নয়নের লাশ গোসল শেষে জানাজার জন্য উপজেলা সদরের মাঠের দিকে যাচ্ছিলাম। হঠাৎ খবর আসে, ঝর্ণাটিলায় একটি বাঙালি বাড়িতে অগ্নিসংযোগ করা হয়েছে। এ খবর আসায় মিছিলের উত্তেজিত লোকজন জনসংহতি সমিতির কার্যালয়ে ভাঙচুর ও অগ্নিসংযোগ করে, পরে পরিস্থিতি আমাদের নিয়ন্ত্রণের বাইরে চলে যায়।’
এদিকে, রাঙামাটির লংগদুতে আদিবাসীদের ওপর হামলার প্রতিবাদে ঢাকায় আজও বিক্ষোভ করেছেন পাহাড়িরা। শনিবার সকালে জাতীয় প্রেসক্লাবের সামনে বিক্ষোভ করে তারা। ঢাকাস্থ পার্বত্য আদিবাসীবৃন্দ সংগঠনের ব্যানারে বিক্ষোভে ঘটনায় জড়িতদের শাস্তি দাবি করা হয়। আদিবাসীরা অভিযোগ করে বলেন, যুবলীগ নেতা হত্যাকাণ্ডের সঙ্গে জড়িতদের শনাক্ত না করে পাহাড়িদের বাড়িঘরে অগ্নিসংযোগ করে বসতি স্থাপনকারীরা। পাহাড়িদের ওপর নির্যাতন বন্ধের দাবি জানান তারা। এ সময় বিভিন্ন সময়ে আদিবাসীদের ওপর নির্যাতনের বিচার দাবি করে, কঠোর আন্দোলনের হুশিয়ারি দেওয়া হয়।