কভিড সংক্রমণের পর ১২ সপ্তাহ পার হয়ে গেলেও অসুস্থতার লক্ষণ থাকলে, যার অন্য কোনো ব্যাখ্যা পাওয়া না গেলে ধরে নিতে হবে ‘লং কভিড’ হয়েছে। শরীরের রোগ প্রতিরোধব্যবস্থার ওপর দিয়ে ঝড় বয়ে যাওয়ার পর কারও কারও ক্ষেত্রে অনেক দিন তার প্রভাব রয়ে যায়। এই প্রভাবই হলো লং কভিড। যে রোগীদের নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে (আইসিইউ) থেকে চিকিৎসা নিতে হয়েছে, কিংবা জরুরি অক্সিজেনের প্রয়োজন পড়েছে, তাদের অনেকের ফুসফুসে পরবর্তী সময়ে পালমোনারি ফাইব্রোসিস দেখা দিতে পারে। এই রোগীরা তিন মাস বা তার বেশি শ্বাসকষ্ট বা ঘনঘন কাশির সমস্যায় ভুগতে পারেন। কভিড রোগীদের ৭৮ শতাংশ পরবর্তী সময়ে হƒদ্যন্ত্রের নানা জটিলতায় আক্রান্ত হতে পারেন। অনেকেরই বুকে ব্যথা, বুক ধড়ফড় করা, কিংবা হƒদ্যন্ত্রের প্রদাহজনিত সমস্যা মায়োকার্ডাইটিস হতে পারে। কভিডের কারণে রক্ত জমাট বাঁধার আশঙ্কা থাকায় হার্ট অ্যাটাকের ঝুঁকিও বেড়ে যায় কয়েক গুণ।
যারা দীর্ঘদিন ধরে কিডনি জটিলতায় ভুগছেন এবং নিয়মিত ডায়ালাইসিস করতে হয়, তারা কভিড থেকে সেরে ওঠার পরও বড় ধরনের ঝুঁকিতে থাকেন। কভিডে আক্রান্ত রোগীর যদি জটিলতা বেশি থাকে, তাহলে কভিডমুক্ত হওয়ার পর তার জন্ডিস ও লিভার ফেইলিওর হওয়ার ঝুঁকি বেড়ে যায়। অনেকে অগ্ন্যাশয়জনিত জটিলতায় আক্রান্ত হতে পারেন। এ কারণে রোগীর পেটে তীব্র ব্যথা হয়। কভিড-পরবর্তী সময়ে অ্যাসিডিটি, পাতলা পায়খানা বা ঘনঘন পায়খানা হওয়া, বদহজম প্রভৃতি হতে পারে।
কভিড থেকে সুস্থ হওয়ার পর অনেকের কিছুই করতে ইচ্ছা করে না, ভালো লাগে না, দম বন্ধ অনুভূতি হয়। ধৈর্য হারিয়ে ফেলা, বিষণœতা, খিটখিটে মেজাজ, রুক্ষ আচরণ, অমনোযোগিতা, উত্তেজনা ও বুক ধড়ফড় করার মতো সমস্যা হতে পারে। ঘুমের ওপর সাময়িক বা দীর্ঘমেয়াদি প্রভাব পড়তে পারে। অনেকে পোস্ট ট্রমাটিক স্ট্রেস ডিসঅর্ডার বা পিটিএসডি রোগে আক্রান্ত হতে পারেন। অনেকের অস্বাভাবিক হারে চুল পড়তে থাকে। এ ছাড়া চোখের নানা প্রদাহজনিত সমস্যায় আক্রান্তও হতে পারেন।
ডা. আরিফ যোবায়ের
প্রকল্প পরিচালক
সিনিয়র সিটিজেন হাসপাতাল