নিজস্ব প্রতিবেদক: কভিড-১৯ সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে ‘কঠোর লকডাউনের’ দ্বিতীয় দিন বৃষ্টি ও সাপ্তাহিক ছুটির মধ্যে রাস্তাঘাট ছিল অনেকটাই ফাঁকা। গতকাল শুক্রবার সকালে ঢাকার মিরপুর, ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, টিএসসি, পলাশী, আজিমপুর ও শাহবাগ এলাকা ঘুরে অলিগলিতে লোকজনের উপস্থিতি দেখা গেলেও প্রধান সড়ক ছিল অনেকটাই ফাঁকা।
নিউমার্কেট, সায়েন্স ল্যাব, নীলক্ষেত ও হাতিরপুল এলাকায় নিত্যপণ্যের কিছু দোকানপাট ও কাঁচাবাজার খোলা থাকলেও ক্রেতার উপস্থিতি একেবারেই কম ছিল।
রাজধানীতে আগের দিনের মতোই বিভিন্ন মোড়ে ছিল আইন শৃঙ্খলাবাহিনীর চেকপোস্ট। পুলিশ ও র্যাবের পাশাপাশি সেনাবাহিনীর জিপ টহল দিচ্ছিল রাস্তায়।
লকডাউনে জরুরি সেবার গাড়ি ছাড়া সব ধরনের যান্ত্রিক যানবাহন চলাচলে নিষেধাজ্ঞা রয়েছে। ফাঁকা রাস্তায় মাঝেমধ্যে ছুটে যাচ্ছিল অ্যাম্বুলেন্স কিংবা পণ্যবাহী গাড়ি। ব্যক্তিগত গাড়ি বা মোটরসাইকেলের সংখ্যা আগের দিনের তুলনায় কম ছিল। তবে বৃষ্টির মধ্যেও রিকশা চলেছে।
আমির হোসেন নামের এক রিকশাচালক বললেন, ‘খুব বেশি ভাড়া দিচ্ছে না। ৩০ টাকার ভাড়া ৪০ টাকা দিচ্ছে। খুব বেশি ভাড়া দেয় না।’
তবে বৃহস্পতিবার যতটা কড়াকড়ি ছিল, শুক্রবার টিএসসি, পলাশী ও শাহবাগ এলাকা ঘুরে ততটা চোখে পড়েনি। আজিমপুর ছাপড়া মসজিদ এলাকায় রাস্তার পাশে মাছ ও সবজি বিক্রি হচ্ছিল, মুদি দোকানও ছিল খোলা। প্রধান সড়কে পুলিশের ব্যারিকেড থাকলেও লকডাউনের প্রথম দিনের মতো তল্লাশি ছিল না।
এ বিষয়ে দৃষ্টি আকর্ষণ করলে আজিমপুর পুলিশ ফাঁড়ির এসআই দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘রাত থেকে বৃষ্টি হচ্ছে। আজিমপুর চৌরাস্তায় পানি রয়েছে। রাস্তাঘাটে চলাচল কম, বৃষ্টিতে কাজ সামান্য ব্যাহত হলেও আমাদের অবস্থান রয়েছে।’
ধানমণ্ডির শংকর মোড়ে সড়কের পাশের দোকানি আরিফ বললেন, ‘আমি সকাল ৮টায় বসেছি। লোকজন আসেনি তেমন। ছুটি তো, আবার বৃষ্টি। রাস্তায় ধরাধরিও আজ কম।’
সকালে মিরপুরের পল্লবী ও কালশী এলাকায় জনব্যস্ততা একেবারেই ছিল না। প্রধান সড়কগুলোয়ও যানবাহনের চলাচল ছিল হাতেগোনা। তবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর কড়াকড়ি চোখে পড়েনি সেভাবে।
কালশী মোড়ে কিছু পণ্যবাহী গাড়ি ও প্রাইভেটকার দেখা গেলেও বৃষ্টির কারণে রিকশা কম বেরিয়েছে।
পল্লবীর মুদি দোকানি শরীফ হাসান বললেন, ‘শুক্রবার তো কাস্টমার ভালো আসে। কিন্তু বৃষ্টির কারণে আজকে তেমন বিক্রি নেই।’
কালশীর বিহারি ক্যাম্প বাজারেও ক্রেতা ছিল হাতেগোনা। এ বাজারের সবজি বিক্রেতা আলমগীর বলেন, ‘কালকে অনেক বিক্রি হয়েছে। কিন্তু আজকে মনে হয় বৃষ্টিতে মানুষ বের হতে পারছে না। জুমার নামাজের আগে-পরে বিক্রি হতে পারে।’
এ বাজারে কেনাকাটা করতে আসা ইয়াসীন আহমেদ বলেন, ‘গতকাল দেখলাম অনেককে আটক করা হয়েছে। সেজন্য একটু টেনশন নিয়েই বের হয়েছি। আর জরুরি জিনিস তো কিনতেই হবে।’
লকডাউনের মধ্যে খাবার দোকানে বসে খাওয়া নিষেধ, কেবল বিক্রি করা বা অনলাইন ডেলিভারির অনুমতি আছে। মিরপুর ১২ নম্বর ডি ব্লকের রাজু হোটেলের কর্মী
মনীর জানালেন, তারা ওই নিয়ম মেনে চলছেন। তবে শুক্রবার সকালে ক্রেতা ছিল না তেমন।
সংক্রমণ উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় বৃহস্পতিবার থেকে এক সপ্তাহের জন্য এই কঠোর লকডাউন শুরু হয়।
সরকারি বিধিনিষেধ বাস্তবায়নে বেসামরিক প্রশাসনকে সহায়তা করতে সারাদেশেই সেনা মোতায়েন করা হয়েছে। ভ্রাম্যমাণ আদালত পরিচালনায় ১০৬ নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটকে মাঠে রাখা হয়েছে।
অফিস-আদালত, গণপরিবহন ও শপিং মল বন্ধ রাখা হয়েছে। জনসাধারণকে অনুরোধ জানানো হয়েছে ঘরে থাকার। এই বিধিনিষেধের মধ্যে জরুরি কারণ ছাড়া ঘরের বাইরে বের হলে কঠোর শাস্তির মুখে পড়তে হবে বলে হুশিয়ার করা হয়েছে।
লকডাউনের প্রথম দিন বৃহস্পতিবার ঢাকার রাস্তায় গ্রেপ্তার হয়েছেন ৫৫০ জন। তারা ‘অপ্রয়োজনে’ ঘর থেকে বের হয়েছেন বলে পুলিশের ভাষ্য।
সাত দিনের লকডাউনের প্রথম দিনেও বৃষ্টি ছিল এবং গতকাল শুক্রবারেও ছিল। আবহাওয়া অধিদপ্তর জানিয়েছে, রাজশাহী, ময়মনসিংহ, ঢাকা, চট্টগ্রাম, বরিশাল ও সিলেট বিভাগের অধিকাংশ জায়গায় এবং রংপুর ও খুলনা বিভাগের অনেক জায়গায় অস্থায়ীভাবে দমকা হাওয়াসহ হালকা থেকে মাঝারি ধরনের বৃষ্টি/বজ্রসহ বৃষ্টি হতে পারে। সেইসঙ্গে দেশের কোথাও কোথাও ভারী বর্ষণ হতে পারে।