লক্ষীপুরে শসার দামে খুশি কৃষক

জুনায়েদ আহম্মেদ, লক্ষীপুর: লক্ষীপুরে চলতি মৌসুমে শসার ভালো ফলন হয়েছে। ভালো দাম পাওয়ায় কৃষকের মুখে হাসি ফুটে উঠেছে। ক্ষেত থেকে শসা তোলা ও বাজারজাতকরণে ব্যস্ত সময় পার করছেন জেলার কৃষক।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্রে জানা যায়, লক্ষীপুরে শীত-গ্রীষ্ম দুই মৌসুমে শসার আবাদ হয়। চলতি মৌসুমে জেলায় ১৬৩ হেক্টর জমিতে শসার আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে সদর উপজেলায় সবচেয়ে বেশি শসার আবাদ করা হয়েছে। চলতি মৌসুমে আবহাওয়া অনুক‚লে থাকায় এবং সময়মতো বীজ রোপণ ও সুষম সারের ব্যবহারের ফলে বিগত বছরের তুলনায় এ অঞ্চলে এবার শসার বাম্পার ফলন হয়েছে। উৎপাদন খরচের তুলনায় বাজারদর বেশি হওয়ায় খুশি কৃষক। তাছাড়া লাভ বেশি হওয়ায় দিন দিন শসা চাষেও আগ্রহী হয়ে উঠছেন তারা।

সদর উপজেলার মিয়ার বেড়ি, শুটকির সাঁকো, চরভ‚তা, পিয়ারাপুর, চরমনসা, চররমনী ও ভবানীগঞ্জ এলাকাসহ উপজেলার বিভিন্ন এলাকায় মাঠের পর মাঠ শসা ক্ষেতে ছেয়ে আছে। ফসলের মাঠে সারি সারি শোভা পাচ্ছে শসা। জেলার কৃষকরা উন্নত জাতের শসার বীজ রোপণের পর ৩০-৩৫ দিনের মধ্যে গাছে ফল পেতে শুরু করেন। এ জাতের শসা গাছে ভাদ্র মাসের মাঝামাঝি থেকে আশ্বিন মাসের শেষ পর্যন্ত ফল পাওয়া যায়। অপেক্ষাকৃত দেশি জাতের শসার উৎপাদন কম হওয়ায় উন্নত জাতের শসা চাষের দিকে ঝুঁকছেন এ অঞ্চলের কৃষক।

সদর উপজেলার ভবানীগঞ্জ গ্রামের শসাচাষি মাকছুদ আলম জানান, তিনি ২০ শতক জমিতে শসা চাষ করেন। এতে তার খরচ হয়েছে প্রায় ২৫ হাজার টাকা। মৌসুমের শুরুতে লোকসানে বিক্রি করলেও চলতি সপ্তাহে তিনি প্রায় ৭০ হাজার টাকার শসা বিক্রি করেছেন।

সদর উপজেলার চরভ‚তা গ্রামের কয়েকজন শসাচাষি জানান, প্রতি মণ শসা উৎপাদনে তাদের খরচ হয় ২০০ থেকে ২৫০ টাকা। কিন্তু গত কয়েক সপ্তাহ চাহিদার তুলনায় সরবরাহ বেশি হওয়ায় শসা বিক্রি করে উৎপাদন খরচও পাওয়া যায়নি। বাজারে শসার চাহিদা বেশি হওয়ায় চলতি মৌসুমে প্রতিমণ শসা এখন বিক্রি হচ্ছে এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায়। এতে কয়েক গুণ বেশি লাভ হওয়ায় বেজায় খুশি শসাচাষিরা। এ অঞ্চলের উৎপাদিত শসা সুস্বাদু হওয়ায় জেলাবাসীর চাহিদা মিটিয়ে তা সরবরাহ করা হচ্ছে ঢাকা, চট্টগ্রাম, কুমিল্লাসহ দেশের বিভিন্ন জেলায়। খরচের তুলনায় বাজারদর বেশি এবং ফলন ভালো হওয়ায় এ অঞ্চলে শসা চাষ দিন দিন জনপ্রিয় হয়ে উঠছে বলে জানিয়েছেন তারা।

শসা কিনতে আসা কুমিল্লার পাইকারি ব্যবসায়ী নাজির আহম্মেদ জানান, চলতি সপ্তাহে শসার চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় কৃষকও ভালো দাম পাচ্ছেন। চলতি সপ্তাহে তিনি দুবারে ২০০ মণ করে শসা কিনে কুমিল্লার স্থানীয় বাজারগুলোতে সরবরাহ করেছেন। প্রতি মণ কিনেছেন এক হাজার ১০০ থেকে এক হাজার ২০০ টাকায়। আর সড়কের বেহাল দশার কারণে যাতায়াত ভাড়া গুনতে হয়েছে আট হাজার টাকা করে। একই শসা গত দুই সপ্তাহ আগে কিনেছেন ১৫০ থেকে ২০০ টাকায়। ফলে কৃষককে যেমন লোকসান দিতে হয়েছে, তেমনি আমাদেরও লোকসানে পড়তে হয়েছে। এখন বাজারদর ভালো হওয়ায় কৃষকও ভালো দাম পাচ্ছেন, আমরাও লোকসান পুষিয়ে নিতে পারছি।

জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কর্মকর্তা আবুল হোসেন জানান, উন্নত জাতের শসার চাষ করে ভালো ফলন হওয়ায় লাভবান হচ্ছে কৃষক। এখানকার কৃষকরা শসা উৎপাদনে খুবই পারদর্শী এবং ধৈর্যশীল হওয়ায় সফল হচ্ছেন। ফলে এ অঞ্চলে দিন দিন শসার উৎপাদন বাড়ছে।

Add Comment

Click here to post a comment

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০