প্রতিনিধি, লক্ষ্মীপুর: বিশুদ্ধ পানির সংকট ও তীব্র গরমের কারণে হঠাৎ লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলায় ডায়রিয়ার প্রকোপ দেখা দিয়েছে। এতে করে হাসপাতালে ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা প্রতিদিনই আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে। গেল এক সপ্তাহে প্রায় ৫০০ নারী ও শিশু ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে ভর্তি হয়ে চিকিৎসা নিয়েছেন।
পর্যাপ্ত শয্যা না থাকায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত এসব রোগীকে মেঝেতে বিছানা পেতে চিকিৎসা দেয়া হচ্ছে। এতে হিমশিম খেতে হচ্ছে কর্তব্যরত চিকিৎসক ও সেবিকাদের। তবে চিকিৎসকরা বলছেন, গরম বেড়ে যাওয়া ও ফুড পয়জোনিংয়ের কারণে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে, এ বিষয়ে আতঙ্কিত হওয়ার কিছু নেই।
কমলনগর উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, উপজেলার ৯টি ইউনিয়নের বিভিন্ন এলাকা থেকে গেল ১৬ থেকে ২৩ এপ্রিল দুপুর ১২টা পর্যন্ত এক সপ্তাহে প্রায় সাড়ে ৪০০ জন ডায়রিয়ায় আক্রান্ত হয়ে হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন। তাদের বেশিরভাগ নারী ও শিশু। শুধু বৃহস্পতিবার সকাল থেকে শুক্রবার দুপুর ১২টা পর্যন্ত ভর্তি হন ৩৩ জন ডায়রিয়া রোগী। এতো হলো সরকারি হিসাব। বেসরকারি তথ্য অনুযায়ী এর সংখ্যা আরও বেশি বলে জানা গেছে।
খোঁজ নিয়ে জানা যায়, উপজেলার চরমার্টিন, চরকালকিনি, চরবসু, চরকাদিরা, চরলরেঞ্জ, সাহেবের হাট ও চর জগবন্ধু এলাকায় ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা তুলনামূলক বেশি। হাসপাতালটিতে শয্যা সংকুলান না হওয়ায় রোগীরা ফ্লোরে বিছানা পেতে চিকিৎসা নিচ্ছেন। এতে করে একসঙ্গে এত রোগীর চাপ সামলাতে হিমশিম খাচ্ছেন চিকিৎসক ও সেবিকারা। তবে রোগীর চাপ বেড়ে গেলেও ঠিকমতো চিকিৎসাসেবা দেয়া হচ্ছে বলে জানালেন হাসপাতালে কর্তব্যরত সেবিকারা।
হাসপাতালটির আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. মীর আমিনুল ইসলাম মঞ্জু জানালেন, জনবল ও শয্যা সংকটের মধ্যেও সর্বোচ্চ সেবা নিশ্চিতের চেষ্টা চলছে। গরম বেড়ে যাওয়া ও ফুড পয়জনিংয়ের কারণে ডায়রিয়ার প্রাদুর্ভাব বেড়েছে। আতঙ্কিত না হয়ে সবাইকে সচেতন হওয়ার পরামর্শ দেন তিনি।
উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ডা. আবু তাহের পাটোয়ারী বলেন, ডায়রিয়ায় আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য হাসপাতালে পর্যাপ্ত ওষুধ-স্যালাইন সরবরাহ রয়েছে। রোগীর তুলনায় অবকাঠামো ও জনবল সংকটে কিছুটা হিমশিম খেতে হচ্ছে। তবে ডায়রিয়া প্রাদুর্ভাব এড়াতে আপাতত বাইরের খাবার না খাওয়ার পরামর্শ দিলেন এ চিকিৎসক।
কমলনগর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) কামরুজ্জামান জানান, একদিকে কভিড-১৯ সংক্রমণের মহামারি, এর মধ্যে এখন আবার ডায়রিয়ার প্রকোপ বেড়ে যাওয়ায় পরিস্থিতি সামাল দেয়া চ্যালেঞ্জ হয়ে দাঁড়িয়েছে। তবে আতঙ্কিত না হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, প্রয়োজনে সিভিল সার্জনের সঙ্গে কথা বলে একজন বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক সার্বক্ষণিক হাসপাতালে রাখা হবে।