Print Date & Time : 20 June 2025 Friday 3:00 am

লক্ষ্মীপুরে দাখিল পরীক্ষার্থীদের  নকল দিচ্ছেন শিক্ষকরা

 

জুনায়েদ আহম্মেদ, লক্ষ্মীপুর : লক্ষ্মীপুরে বশিকপুর ডিএসইউ কামিল মাদ্রাসা (লক্ষ্মী-০২) পরীক্ষা কেন্দ্রে দাখিল পরীক্ষা চলাকালীন নির্ধারিত ৩ ঘণ্টা পরেও পরীক্ষা নেয়ার অভিযোগ পাওয়া গেছে। গত ২২ ফেব্রুয়ারির সাধারণ গণিত পরীক্ষা ও ৩ মার্চ (রোববার) ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষা নির্দিষ্ট সময়ের পরও পরীক্ষা নিয়েছেন কর্তৃপক্ষ। এ সংক্রান্ত একটি সিসিটিভি ফুটেজ বৃহস্পতিবার বিকালে এ প্রতিবেদকের হাতে পৌঁছেছে।

সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, সদর উপজেলার বশিকপুর ইউনিয়নের বশিকপুর ডিএসইউ কামিল মাদ্রাসা কেন্দ্রে অতিরিক্ত সময়ে পরীক্ষা নেয়ার দৃশ্য। গত ২২ ফেব্রুয়ারির সাধারণ গণিত পরীক্ষা চলাকালীন নির্ধারিত সময় পার হলেও দরজা আটকিয়ে পরীক্ষা নিচ্ছেন কর্তৃপক্ষ। ৩ মার্চ (রোববার) ইংরেজি প্রথম পত্রের পরীক্ষা ১.১৫ মিনিটেও পরীক্ষা নিতে দেখা গেছে। অথচ পরীক্ষার সময় শেষ হওয়ার কথা দুপুর ১টায়। এছাড়া পরীক্ষার্থীদের হাতে হাতে নকল তুলে দিচ্ছেন শিক্ষকরা, এমন দৃশ্যও সিসিটিভি ফুটেজে দেখা মেলে।

সিসিটিভি ফুটেজে আরও দেখা মেলে, ওই কেন্দ্রের কয়েকটি পরীক্ষা কক্ষে শিক্ষকরা নিজ পকেট থেকে বের করে পরীক্ষার্থীদের হাতে হাতে তুলে দিচ্ছেন নকল। এমনকি মোবাইল ফোন দেখে দেখে শিক্ষার্থীদের নৈর্ব্যক্তিক প্রশ্নের উত্তর বলে দিচ্ছেন শিক্ষকরা। প্রাপ্ত সিসিটিভি ফুটেজে দেখা যায়, একজন শিক্ষক দরজায় দাঁড়িয়ে পাহারা দিচ্ছেন, আরেকজন শিক্ষক পরীক্ষা কক্ষে শিক্ষার্থীদের বলে দিচ্ছেন। আবার কোনো কোনো কক্ষে দেখা মেলে শিক্ষকরা ব্ল্যাক বোর্ডে উত্তর লিখে দিচ্ছেন।

বাংলাদেশ মাদ্রাসা শিক্ষা বোর্ড নীতিমালা অনুযায়ী দাখিল পরীক্ষার কেন্দ্র কমিটিতে ৫ জন সদস্যের কথা থাকলে বশিকপুর ডিএসইউ কামিল মাদ্রাসার কেন্দ্র সচিব হামিদুল ইসলাম নিজ ক্ষমতার অপব্যবহার করে বিভিন্ন পদ সৃষ্টি করে ওই পরীক্ষা কেন্দ্রে অংশ নেয়া বিভিন্ন মাদ্রাসার সুপার/অধ্যক্ষসহ ১০ জনকে নিয়ে কমিটি গঠন করেন। এই কমিটি নিজেরা তাদের মনগড়া সিদ্ধান্ত অনুযায়ী মাদ্রাসা বোর্ডের নীতিমালাকে উপেক্ষা করে পরীক্ষা কেন্দ্রে নকল সরবরাহসহ অনিয়মে সহযোগিতা করছেন, বলে অভিযোগ রয়েছে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বশিকপুর ডিএসইউ কামিল মাদ্রাসা (লক্ষ্মী-০২) কেন্দ্রে ১০টি মাদ্রাসার ছাত্র-ছাত্রীরা পরীক্ষা দিচ্ছে। ৮টি কক্ষে পরীক্ষা হলেও সিসিটিভির ক্যামেরা রয়েছে ৩টি কক্ষে। অপর ৫টি কক্ষে সিসিটিভি ক্যামেরা নেই, তবে সে কক্ষগুলোতেও একইভাবে অসুদপায় অবলম্বন করে পরীক্ষা নেয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে জানতে প্রতিষ্ঠানটির অধ্যক্ষ হামিদুল ইসলামের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে বিষয়টি এড়িয়ে যান। পরে দাম্ভিকতার সঙ্গে তিনি বলেন, প্রতিষ্ঠানটির সভাপতি ডিসি, কোনো কিছু জানতে হলে ডিসি মহোদয়ের সঙ্গে কথা বলেন, এ বলে ফোনের সংযোগ বিচ্ছিন করেন তিনি।

এদিকে এ বিষয়ে ক্যামেরার সামনে কোনো কথা বলতে রাজি হননি। অতিরিক্ত জেলা ম্যাজিস্ট্রেট ও জেলা প্রশাসকের চলতি দায়িত্বে থাকা প্রিয়াংকা দত্ত। তবে তিনি বলেন, বিষয়টি সম্পর্কে খোঁজ খবর নেয়া হবে।

পরীক্ষার কেন্দ্রে অতিরিক্ত সময়ের পরীক্ষা নেয়া ও নকল সরবরাহের সঙ্গে জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণের দাবি সচেতন মহলের।