জুনায়েদ আহম্মেদ, লক্ষ্মীপুর: কয়েক দিনের টানা বৃষ্টিতে লক্ষ্মীপুরে রবি ফসল নিয়ে শঙ্কায় দিন কাটছে অধিকাংশ কৃষকের। বৈশাখের শুরুতেই বৃষ্টি ও বজ্রপাতে কৃষকের মনে দেখা দেয় দুর্যোগ আতঙ্ক। কৃষকদের সেই শঙ্কা যেন বাস্তবে রূপ নেয় গত শুক্রবার। প্রায় আধঘণ্টার শিলাবৃষ্টিতে অধিকাংশ জমির রবিশস্য নষ্ট হয়ে গেছে।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর থেকে পাওয়া তথ্যমতে, জেলার পাঁচ উপজেলায় চলতি মৌসুমে ৮২ হাজার ২১৪ হেক্টর জমিতে রবিশস্যের আবাদ হয়েছে। এর মধ্যে ২৮ হাজার ১০৫ হেক্টর জমিতে বোরো ধান ও চীনাবাদাম দুই হাজার ৭৩০ হেক্টর, শীতকালীন শাকসবজি চার হাজার ৪০০ হেক্টর, মরিচ এক হাজার ৪১৫ হেক্টর, মুগ এক হাজার ১২০ হেক্টর, সরিষা ২০০ হেক্টর, মসুর ২৯৮ হেক্টর, খেসারি ৫৭০ হেক্টর, মিষ্টিআলু ৫১৫ হেক্টর, ইক্ষু ২২০ হেক্টর, আলু ১৬৬ হেক্টর, গম ১৪ হেক্টর, মাষকলাই ৫০ হেক্টর, মটর ২৮ হেক্টর, পেঁয়াজ ৭৮ হেক্টর, রসুন ১৩৩ হেক্টর, ধনিয়া ১৭০ হেক্টর, তরমুজ ১৬৬ হেক্টর, ক্ষীরা ৩০২ হেক্টর, বাঙ্গী ১৬ হেক্টর, ছোলা পাঁচ হেক্টর ও তিল ছয় হেক্টর জমিতে আবাদ হয়েছে।
জানা যায়, গত শুক্রবার শিলাবৃষ্টিতে ব্যাপক ক্ষতির সম্মুখীন হয়েছেন জেলার কমলনগর ও রামগতি উপজেলার রবিচাষিরা। এর মধ্যে কমলনগর উপজেলার চরমার্টিন, চরলরেঞ্চ, তোরাবগঞ্জ, হাজিরহাট, চরফলকন, সাহেবেরহাট ও চরকালকিনি এবং রামগতি উপজেলার চরবাদাম, আলেকজান্ডার, চররমিজসহ প্রায় সব কয়টি ইউনিয়নে রবিশস্যের ব্যাপক ক্ষতি হয়েছে। টানা ঝড়বৃষ্টি, বজ্রপাত ও শিলাবর্ষণে অধিকাংশ বোরো ধান ক্ষেতেই ঝরে গেছে। আর শসা, চীনাবাদাম, মরিচসহ অধিকাংশ রবিশস্য নষ্ট হয়ে গেছে।
কমলনগর উপজেলার উত্তর চরলরেঞ্চ গ্রামের কৃষক আবদুল হাই জানান, তিনি এক একর জমিতে হাইব্রিড পারটেক্স-৬ জাতের বোরো আবাদ করেছেন। এতে তার ৩০ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ফলনও হয়েছে আশানুরূপ। বৈশাখের শুরুতেই আগাম বৃষ্টির কারণে ধান কাটতে পারেননি। শুক্রবারের শিলাবৃষ্টিতে ক্ষেতেই ধান ঝরে গেছে।
রামগতি উপজেলার চররমিজ গ্রামের শসাচাষি মনির হোসেন জানান, রমজান উপলক্ষে তিনি তিন একর জমিতে সাড়ে তিন লাখ টাকা খরচ করে শসা আবাদ করেছেন। কিন্তু ফসল কাটার আগেই হঠাৎ শিলাবৃষ্টিতে শসাসহ গাছ নষ্ট হয়ে গেছে। চলতি মৌসুমে তিনি সোনালী ব্যাংকের আলেকজান্ডার শাখা থেকে দুই লাখ টাকা ঋণ নিয়ে আবাদ করেছেন। ফসল নষ্ট হয়ে যাওয়ায় কীভাবে ঋণ পরিশোধ করবেন তা নিয়ে চিন্তায় আছেন তিনি।
জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপ-সহকারী কৃষি কর্মকর্তা আবুল হোসেন জানান, অতিবৃষ্টির কারণে রবি ফসলের ক্ষতি এখনও নির্ধারণ করা সম্ভব হয়নি। তবে জমে থাকা পানি দ্রুত নিষ্কাশনের জন্য কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।

Print Date & Time : 27 June 2025 Friday 9:55 pm
লক্ষ্মীপুরে শিলাবৃষ্টিতে রবি ফসলের ব্যাপক ক্ষতি
সারা বাংলা ♦ প্রকাশ: