চারদিকে পানি আর পানি। মাঝে হিজল আর করচের বাগান। সেখানে পশু-পাখির বিচরণ। এমনই একটি নৈসর্গিক সৌন্দর্যের জায়গা হবিগঞ্জের বানিয়াচং উপজেলার লক্ষ্মীবাঁওড় জলাবন। সিলেটের রাতারগুলের চেয়ে আয়তনে বড়, বৈচিত্র্যে ভরপুর ও দেশের সর্ববৃহৎ এই জলাবন। পর্যটকদের কাছে নতুন আকর্ষণও এটি।
প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পূর্ণতায় লক্ষ্মীবাঁওড় জলাবন (সোয়াম্প ফরেস্ট) যেন এক সৌন্দর্যের লীলাভূমি। এখানে বর্ষায় স্বচ্ছ পানির সঙ্গে মিতালি গড়েছে বাহারি প্রজাতির বৃক্ষলতার সবুজ গালিচা। হেমন্তে মনে হয় ছোট ছোট পাহাড়ের মেলবন্ধন। শীতে দেশি-বিদেশি পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে ওঠে নির্জন এই জলাবন। দূর থেকে জঙ্গলটিকে দেখে মনে হবে যেন পানির ওপর ভাসছে। হিজল, বরুণ, কাকুরা, খাগড়া প্রভৃতি গাছ ও গুল্মে পরিপূর্ণ এই জলাবন সব ঋতুতে বৈচিত্র্যময় পর্যটকদের জন্য।
পরিবেশবিদদের মতে, পৃথিবীতে ২২টি জলাবন রয়েছে। বাংলাদেশের একমাত্র জলাবন হচ্ছে সিলেটের রাতারগুল। রাতারগুলের মতোই বানিয়াচঙ্গের লক্ষ্মীবাঁওড় জলাবন। তবে লক্ষ্মীবাঁওড় জলাবনের আকার ও আয়তনের ব্যাপ্তি অনেক। এ জলাবন নিয়ে গবেষণা করলে এনে দিতে পারে দেশের সবচেয়ে বড় জলাবনের স্বীকৃতি।
বানিয়াচংয়ের উত্তরের নিভৃত হাওরের অথৈ জলরাশির মধ্যে অপূর্ব রূপ নিয়ে ভেসে আছে লক্ষ্মীবাঁওড় জলাবন। এর দক্ষিণ দিকে লোহাচূড়া, উত্তরে খড়তি আর পশ্চিমে নলাই নদী। পূর্ব পাশে গঙ্গাজলের হাওর। জলাবনের আয়তন সাড়ে তিন কিলোমিটার। দৈর্ঘ্য ও প্রস্থে প্রায় সমান। কয়েকশ বছর আগে প্রকৃতিগতভাবেই এর সৃষ্টি বলে স্থানীয়রা জানান। স্থানীয়দের কাছে লক্ষ্মীবাঁওড় ‘খড়তির জঙ্গল’ নামে পরিচিত।
যেভাবে যাবেন
হবিগঞ্জ শহর থেকে ১২ মাইল পর বানিয়াচং আদর্শবাজার থেকে মাত্র পাঁচ কিলোমিটারের পথ লক্ষ্মীবাঁওড় জলাবনের। পানির মধ্যে বনের অনাবিল সৌন্দর্য উপভোগ করতে বর্ষায় নৌকা, হেমন্তে মোটরসাইকেল, ট্রলি কিংবা পায়ে হেঁটে যেতে হয়। হেমন্তে ভোগান্তি একটু বেশি। বর্ষায় স্বচ্ছ পানিতেই বনটি বেশি উপভোগ্য।
কাজল সরকার