Print Date & Time : 26 June 2025 Thursday 3:40 am

লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে দুই হাজার কোটি টাকা কম রাজস্ব আদায়

সাইদ সবুজ, চট্টগ্রাম: জাতীয় রাজস্ব খাতে প্রায় ৩৩ শতাংশ অর্থের জোগানদাতা চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ। সদ্যবিদায়ী ২০১৭-১৮ অর্থবছরে এ হাউজের সংশোধিত রাজস্বের লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪৪ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। কিন্তু অর্থবছরের শেষদিন পর্যন্ত চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজ রাজস্ব আহরণ করতে পেরেছে ৪২ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা, যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে এক হাজার ৯৩৭ কোটি টাকা কম। তবে ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে রাজস্ব আহরণ বেড়েছে ছয় হাজার ২৯০ কোটি টাকা।
এদিকে ২০১৬-১৭ অর্থবছর থেকে বিদায়ী অর্থবছরে রাজস্ব আহরণে প্রবৃদ্ধি হার কমেছে এক দশমিক ছয় শতাংশ পয়েন্ট। ওই অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টমস প্রবৃদ্ধি অর্জন হয়েছিল ১৭ দশমিক ১২ শতাংশ। কিন্তু ২০১৭-১৮ অর্থবছরে তারা প্রবৃদ্ধি অর্জন করেছে ১৫ দশমিক ৫২ শতাংশ, যা লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে।
চট্টগ্রাম কাস্টমস সূত্রে জানা যায়, ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের ৯টি সেকশন ও পাঁচটি সাবসেকশন মিলে রাজস্ব আহরণের প্রথম লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল ৪৮ হাজার ৭৮৫ কোটি টাকা। এর পর জাতীয় রাজস্ব বোর্ড (এনবিআর) রাজস্ব আহরণের লক্ষ্যমাত্রা আবার সংশোধন করে। এতে লক্ষ্যমাত্রা কমিয়ে ৪৪ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা করা হয়। এ সংশোধনে খাতওয়ারি লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল, কাস্টমস ডিউটি থেকে ১৭ হাজার ৯৩ কোটি টাকা, রফতানি শুল্ক থেকে ২৭ কোটি টাকা, সম্পূরক শুল্ক থেকে পাঁচ হাজার ৬৫৩ কোটি টাকা ও ভ্যাট থেকে ২১ হাজার ৯০৩ কোটি টাকা। সর্বমোট ৪৪ হাজার ৬৭৭ কোটি টাকা। তবে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস রাজস্ব আহরণ করতে পেরেছে ৪২ হাজার ৭৪০ কোটি টাকা।
এদিকে ২০১৭-১৮ অর্থবছরে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজে সর্বোচ্চ রাজস্ব আদায় হয়েছে সেকশন-২ থেকে। চট্টগ্রাম কাস্টমসের এ সেকশন তেল আমদানির বিপরীতে রাজস্ব আহরণ করে ৯ হাজার ৪৬৫ কোটি টাকা। এর পরের স্থানে আছে ভোগ্যপণ্য আমদানির সেকশন-১। এ সেকশন থেকে রাজস্ব আহরিত হয় ছয় হাজার ৫৭১ কোটি টাকা। এর পর তৃতীয় সর্বোচ্চ রাজস্ব আহরণ হয় গাড়ি আমদানির সেকশন ৯-বি থেকে। এ সেকশন দিয়ে গাড়ি আমদানি বিপরীতে রাজস্ব আহরণ করে চট্টগ্রাম কাস্টমস পাঁচ হাজার ১৬৯ কোটি টাকা। এছাড়া সেকশন ৮-এর এ ও বি থেকে যথাক্রমে চার হাজার ৮০০ কোটি ও চার হাজার ৩৬ কোটি টাকা রাজস্ব আহরণ করা হয়। এর পর বাদবাকি রাজস্ব আহরণ হয় ৯টি সেকশন মিলে।
উল্লেখ্য ২০১৪-১৫ অর্থবছর থেকে পর্যায়ক্রমে রাজস্ব আহরণের প্রবৃদ্ধির পরিমাণ কমেছে। ২০১৪-১৫ অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি হয়েছিল ১৭ দশমিক ২৪ শতাংশ। এর পরে ২০১৫-১৬ অর্থবছরে কমে দাঁড়ায় ১৪ দশমিক ৮৯ শতাংশে। তবে এরপর ২০১৬-১৭ অর্থবছরে আবার বেড়ে ১৭ দশমিক ১২ শতাংশে আসে। কিন্তু বিদায়ী অর্থবছরে ১৫ দশমিক ৫২ শতাংশ অর্জন করে লক্ষ্যমাত্রা থেকে পিছিয়ে পরে এক দশমিক ৬ শতাংশীয় পয়েন্ট।
২০১৬-১৭ অর্থবছারের তুলনায় বিদায়ী অর্থবছরে প্রবৃদ্ধি কম অর্জন হওয়ার বিষয়ে জানতে চাইলে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউজের কমিশনার ড. একেএম নুরুজ্জমান শেয়ার বিজকে বলেন, ‘বিদায়ী অর্থবছরে রাজস্ব প্রবৃদ্ধি প্রায় ১৬ শতাংশ। অর্থবছরটিতে কয়েকটি কারণে আগের অর্থবছরের তুলনায় রাজস্ব প্রবৃদ্ধি কমেছে। বিদায়ী অর্থবছরে বিভিন্ন শিল্প-প্রতিষ্ঠান রেয়াতি সুবিদা গ্রহণের কারণে প্রায় এক হাজার কোটি টাকা কম রাজস্ব আহরণ হয়েছে। তা না হলে প্রবৃদ্ধি আরও তিন শতাংশের মতো বাড়তো। এছাড়া ২০১৭-১৮ অর্থবছরের মাঝামাঝি সময়ে চাল আমদানিতে ধার্য শুল্ক কমানো হয়। এতে প্রায় ৭০০ কোটি টাকার মতো রাজস্ব হারায় কাস্টমস। তা না হলে আরও দুই শতাংশ রাজস্ব আহরণ বেড়ে যেত। অন্যদিকে অর্থবছরের শেষ মাসের মাঝামাঝি সময়ে ঈদের কারণে কিছুটা রাজস্ব আদায় কম হযেছে।’