নিজস্ব প্রতিবেদক: দেশের উচ্চ মূল্যস্ফীতি কমাতে ব্যয় কাটছাঁট এবং সুদ ও ডলারের হার বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে সরকারকে পরামর্শ দিয়েছে গবেষণা প্রতিষ্ঠান পলিসি রিসার্চ ইনস্টিটিউট (পিআরআই)। গতকাল মঙ্গলবার প্রতিষ্ঠানটির কার্যালয়ে আয়োজিত বাজেট-পরবর্তী সংবাদ সম্মেলন ও আলোচনা সভায় এমনই জানান পিআরআইয়ের নির্বাহী পরিচালক ড. আহসান এইচ মনসুর।
আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিলের (আইএমএফ) সাবেক অর্থনীতিবিদ ও ব্র্যাক ব্যাংকের সাবেক চেয়ারম্যান আহসান এইচ মনসুর বলেন, এবারের বাজেটে সরকারের জন্য তিনটি প্রধান চ্যালেঞ্জ রয়েছেÑরাজস্বনীতি, মুদ্রানীতি ও বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ।
এক্ষেত্রে গবেষণা প্রতিষ্ঠানটির পক্ষ থেকে সরকারের প্রতি তিনটি পরামর্শ তুলে ধরে তিনি বলেন, বাজেটে ঘাটতি কমাতে সরকারি খরচ কাটছাঁট করতে হবে। দ্বিতীয়টি হলো মূল্যস্ফীতি। বাজেটে মূল্যস্ফীতি ছয় শতাংশে আনার যে পরিকল্পনা নিয়েছে সরকার, তা বাস্তবায়ন করতে ব্যাংক ঋণের সুদের হার বাড়াতে হবে। তৃতীয়টি বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ। রিজার্ভ ভালো রাখতে হলে ডলারের মূল্য বাজারের ওপর ছেড়ে দিতে হবে।
ড. আহসান এইচ মনসুর বলেন, বিশ্বের বিভিন্ন দেশ সুদের হার বাড়িয়ে মূল্যস্ফীতি কমিয়েছে। সাধারণত আন্তর্জাতিভাবে সুদের হার নির্ধারণ হয় অর্থনৈতিক পরিস্থিতির ওপর ভিত্তি করে, কিন্তু বাংলাদেশে নির্ধারণ হয় ব্যবসায়ী সমাজের সঙ্গে কথা বলে, এটি ঠিক নয়।
এছাড়া ব্যাংক খাত থেকে সরকারের ঋণ নেয়ার প্রবণতা বৃদ্ধি পাওয়ায় শঙ্কা প্রকাশ করে তিনি বলেন, গত বছর সরকার ব্যাংক খাত থেকে এত বেশি ঋণ নিয়েছে যে, গত ৫০ বছরেও এমনটা হয়নি। এক্ষেত্রে সরকার কম সুদ হারের সুযোগ নিচ্ছে। আবার পেনশন ও সেভিংস সার্টিফিকেটের হার সামাজিক নিরাপত্তার সঙ্গে যুক্ত করা ঠিক হবে না বলে মনে করেন তিনি। বর্তমানে মূল্যস্ফীতি যখন ১০ শতাংশ ছাড়িয়েছে এবং ভবিষ্যতে বাড়তে পারে, সে সময়ে নি¤œ আয়ের মানুষকে সুরক্ষা দিতে সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দের পরিমাণও বৃদ্ধি করা প্রয়োজন বলে মনে করেন তিনি।
এর আগে প্রেস ব্রিফিংয়ে বাজেটের ওপর একটি বিশ্লেষণধর্মী প্রতিবেদন তুলে ধরেন পিআরআইয়ের গবেষণা পরিচালক ড. এমএ রাজ্জাক। এ সময় তিনি বলেন, দেশের অর্থনীতির এমন চাপের মধ্যে আগামী অর্থবছরের জন্য বাজেটে প্রবৃদ্ধি এবং বিনিয়োগের যে লক্ষ্য নির্ধারণ করা হয়েছে, তা বাস্তবায়ন অত্যন্ত কঠিন।
তিনি আরও বলেন, চলতি অর্থবছরে বাজেটে ঘাটতি হবে ৫০ হাজার কোটি টাকা। ২০২৩-২৪ অর্থবছরের প্রস্তাবিত বাজেটে রাজস্ব আয়ের যে লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছে, তা অর্জন করা দুরূহ হয়ে পড়বে। এই বাজেটে ঘাটতি অনেক বেশি। বাজেট বাস্তবায়ন করতে হলে কাটছাঁট করতে হবে। আগামী বছর সরকারকে ঋণের সুদ বাবদ ৯৪০ বিলিয়ন টাকা পরিশোধ করতে হবে। ফলে দেশের অর্থনীতি আবার চাপে পড়বে।