প্রতিনিধি, শেরপুর : লঘু অপরাধে সামাজিক কাজ করিয়ে নেওয়ার মধ্য দিয়ে মামলা থেকে দেড় শতাধিক অভিযুক্ত অপরাধীরা মুক্তির অপেক্ষায় রয়েছে। বিচারকের এই দন্ডকে আইনজীবি, অভিযুক্তদের পরিবার ও সাধারণ মানুষ অভিনব মজার দন্ড বলছেন।
উচ্চ আদালতের নির্দেশনায় জেলা জজের অনুমতি নিয়ে এই অভিনব দন্ড দিয়ে অভিযুক্তকে মুক্তির ব্যবস্থা কার্যক্রম শুরু করেছেন শেরপুর জেলা আদালতের চীফ জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট এস এম হুমায়ুন কবির ও সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আলমগীর আল মামুন।
অদালত সূত্র জানায়, শেরপুরে বছর খানেক ধরে এই কার্যক্রম শুরু হয়েছে। অভিযুক্তকে গাছ লাগানো, মাস্ক বিতরণ, মা-বাবার সেবা, ধর্ম পালন, মানুষের সাথে ভাল আচরণ, নেশার বিরুদ্ধে প্রচারণা মত কাজে এক বছর নিয়োজিত রেখে এবং পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে মামলা থেকে অব্যহতির দেওয়ায় প্রক্রিয়া চলছে। এ বছর জেলায় শতাধিক মামলার দেড় শতাধিত অভিযুক্ত এই প্রক্রিয়ার মধ্যে আসবে। ফলে কমবে মামলার জট আর অভিযুক্তদের পরিবারও স্বস্তি পাচ্ছে। সেইসাথে তাদের দিয়ে পরিবেশ ও সামাজসেবা সংক্রান্ত কাজও হচ্ছে। তবে সম্প্রতিক বন্যায় কিছু গাছ নষ্ঠ হওয়াতে মন খারাপ হয়েছে এর সাথে সংশ্লিষ্ঠদের।
সূত্র আরো জানায়, সে সব অভিযুক্ত সর্বোচ্চ ৭/৮ টি ইয়াবা, সামান্য গাঁজা ও হালকা নেশা সেবনের মত লঘু অপরাধি তারা এই দন্ডের মধ্যে পড়বে। তবে এসব মামলার অভিযুক্তদের আদালতে স্বেচ্ছায় দোষ স্বীকার করতে হবে এবং আদালতের দেওয়া শর্ত মানতে হবে। অন্য কোন জটিল নেশা নিয়ে ধরা পড়া অভিযুক্তরা এই শান্তির আওতায় আসবে না। এই শাস্তির আওতায় আসা অভিযুক্তরা জীবনে আর কোন নেশা খাবে না, আদালতের কাছে এমন অঙ্গিকার করলে আদালত এক বছর বিষয়টি পর্যবেক্ষণ করবে। আর এই পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব দেওয়া হয় জেলার প্রবেশন কর্মকর্তাকে (পরীক্ষাকাল কর্মকর্তা)। এ কর্মকর্তা অপরাধীদের অপরাধ চরিত্র সংশোধনের কাজে নিয়োজিত থাকে।
এই শাস্তির আওতায় অভিযুক্তকে এক বছর নিজ খরচে গাছ লাগানো, মার্ক্স বিতরণসহ আতœ সংশোধন মূলক উপরোক্ত সামাজিক কর্ম গুলো করবে।আদালত অরপাধের ধরন বিবেচনায় শাস্তির পরিমান নির্ধারণ করে। অভিযুক্তের এই সামাজিক সেবার কাজটি কঠিন ভাবে নিয়ন্ত্রণ করে আদালত কর্তৃক নিয়োজিত কম্পিউটার ও মুদ্্রাক্ষরিক আব্দুর রউফ নামে একজন কর্মচারি। অভিযুক্তদের চলাফেরা ও আদালতের দেওয়া নির্দেশ পালন করছে কিনা এ সংক্রান্ত রিপোর্ট প্রতিমাসেই ওই প্রবেশন কর্মকর্তা আদালতে জমা দেন। তবে এক বছর পরে এই বিষয়ে চূড়ান্ত রিপোর্টের মধ্য দিয়ে নির্ধারিত হবে ওদের ভাগ্য। এমন বাৎসরিক শতাধিক জনের রিপোর্ট কিছু দিনের মধ্যেই আদালতে পাঠানো হবে বলে সূত্র জানিয়েছে।
মুদ্্রাক্ষরিক আব্দুর রউফ জানিয়েছে, প্রতিদিন বিচারককে অভিযুক্তদের বিষয়ে আপডেট দিতে হয়। এমন দায়িত্ব পালন কষ্ট হলেও আনন্দ আছে। সংশ্লিষ্ট আদালতের নাজির সাইফুল ইসলাম জানিয়েছে, এই ব্যবস্থাও এক ধরনের শাস্তি। এই শাস্তিটি অভিযুক্তকে জেলখানার মধ্যে না রেখে পারিবারের সাথে রেখে কঠিন পর্যবেক্ষণে রাখা হয়।
এমন একাধিক মামলার বিবাদি পক্ষের আইনজীবি এডভোকেট আলমগীর কিবরিয়া কামরুল জানিয়েছে, আদালতের এই ব্যবস্থায় অসংখ্য অভিযুক্ত নানা সামজিক কাজের মধ্য দিয়ে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসছে এবং আমি সর্বচ্চো প্রবেশন নিয়েছি।
জেলা আইনজীবি সমিতির সাধারণ সম্পাদক এডভোকেট তারিকুল ইসলাম ভাসানী বলেছেন, আইনের মধ্যেই অভিযুক্তদের স্বাভাবিক জীবনে ফিসে আসার এই উদ্যোগ বেশ প্রশসংনীয় হয়েছে। আমার জানা মতে এই সুযোগ অনেকেই গ্রহণ করেছে।
দায়িত্ব প্রাপ্ত প্রবেশন কর্মকর্তা মোঃ হাসান কিবরিয়া জানিয়েছেন, এ সংক্রান্ত আইন প্রবেশন অফ অফেন্ডারস অর্ডিন্যান্সটি ১৯৬০ থাকলেও কার্যক্রম ছিলো না। এখন আইনটি জনপ্রিয় হচ্ছে। এই আইনের মাধ্যমে লঘু অপরাধের জন্য কঠোর ও ভীতিপ্রদ শাস্তি না দিয়ে সমাজের কাছাকাছি রেখে সামাজিক ও মনস্তাাত্ত্বিক চিকিৎসার মাধ্যমে অপরাধীকে সংশোধনের ব্যবস্থা করা হয়। এই কর্মকর্তার মতে এই ব্যবস্থায় অনেকেই স্বাভাবিক অবস্থায় ফিরে আসছে। তবে লোক বল সংকটের কারণে পর্যবেক্ষণ করা বেশ জটিল হয়ে উঠছে।

Print Date & Time : 18 June 2025 Wednesday 11:50 pm
লঘু অপরাধে বিচারকের অভিনব দন্ড!
আইন-আদালত ও অপরাধ,সারা বাংলা ♦ প্রকাশ: