Print Date & Time : 21 June 2025 Saturday 11:49 am

লঙ্কানদের হোয়াইটওয়াশের স্বাদ দিতে পারল না বাংলাদেশ

ক্রীড়া ডেস্ক: শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে প্রথমবারের মতো ওয়ানডে সিরিজ জয় তিন দিন আগেই নিশ্চিত করেছিল বাংলাদেশ। সেদিনেই টাইগাররা উঠেছিল আইসিসি ওয়ানডে সুপার লিগের চূড়ায়। গতকাল স্বাগতিকদের সামনে হাতছানি ছিল লঙ্কানদের প্রথমবার হোয়াইটওয়াশের স্বাদ দেয়ার। কিন্তু সিরিজের তৃতীয় ও শেষ ওয়ানডেতে প্রত্যাশিত পারফর্ম না করায় নিজেদের চাওয়া পূরণ হয়নি তামিম ইকবালদের। তাই প্রথমবার লঙ্কানদের বিপক্ষে সিরিজ জিতলেও রাসেল ডেমিঙ্গোর শিষ্যদের আক্ষেপ কিছুটা থেকেই গেল।

সিরিজের শেষ ম্যাচে গতকাল বাংলাদেশ হারে ৯৭ রানে। এদিন টস ভাগ্য থেকে শুরু করে কোনো কিছুই আসেনি বাংলাদেশের পক্ষে, যে কারণে মিরপুর শের-ই-বাংলা জাতীয় ক্রিকেট স্টেডিয়ামে আগে ব্যাট করতে নেমে ৬ উইকেটে ২৮৬ রান করে শ্রীলঙ্কা। জবাব দিতে নেমে টপ অর্ডারের ব্যর্থতায় শুরু থেকেই বিপদে পড়ে স্বাগতিকরা। মাঝে অবশ্য মোসাদ্দেক হোসেন একপ্রান্ত আগলে চেষ্টা করেছিলেন প্রাণপণে। শেষ পর্যন্ত লড়াই চালিয়ে যান মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। তারপরও লঙ্কান বোলারদের নিয়ন্ত্রিত বোলিংয়ের কাছে তারা মাথা নত করতে বাধ্য হন, যে কারণে ৪২.৩ ওভারে ১৮৯ রানে গুটিয়ে যায় টাইগাররা। তারপরও তিন ম্যাচের সিরি ২-১ ব্যবধানে জিতেছে দলটি।

২৮৭ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে শুক্রবার শুরুটা মোটেই ভালো হয়নি বাংলাদেশের। ৯ রানের মধ্যে নাইম শেখ ও সাকিব আল হাসানকে হারায় বাংলাদেশ। পেসার দুষ্মন্ত চামিরার করা দ্বিতীয় ওভারের প্রথম বলে কুশল মেন্ডিসকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন নাইম। এরপর একই বোলারের করা চতুর্থ ওভারের দ্বিতীয় বলে স্কয়ার লেগে মেন্ডিসকে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন সাকিব। এবার এ বাঁহাতি করেন ৪ রান। দলের বিপদে হাল ধরার চেষ্টা অবশ্য তামিম ইকবাল করেছিলেন। কিন্তু আম্পায়ারের প্রশ্নবিদ্ধ সিদ্ধান্তে আউট হন তিনি। দশম ওভারে ব্যক্তিগত ২৮ রানে ফেরেন তিনি। চামিরার সেøায়ার বলটা তামিমের ব্যাট ছুঁয়ে উইকেটের পেছনে ডিকভেলার হাতে যেতেই শ্রীলঙ্কানদের আবেদন। আম্পায়ার আঙুল তোলেন। কিন্তু তামিম সঙ্গে সঙ্গেই রিভিউ নেন। নেয়ার কারণও ছিল, তামিমের ব্যাট বলে

লাগার সময়ে মাটিতেও লেগেছিল। রিভিউতেও দেখা যায়, ব্যাটে যখন বল লেগেছে বলে স্নিকোমিটারে মৃদু ওঠানামা চলছে, ঠিক সে সময়টাতেই ব্যাট মাটিতে লাগে। তৃতীয় আম্পায়ার তাই আউটই দেন। কিন্তু তামিমের সিদ্ধান্তটা মানতে অনেক কষ্ট হচ্ছিল।

তামিম ফিরে গেলে মুশফিক ও মোসাদ্দেক মিলে ইনিংস মেরামতের কাজ করেন। চতুর্থ উইকেটে দুজন ৮৩ বলে ৫৬ রানও এনে দিয়েছিলেন। কিন্তু রান তোলার চাপটা পেয়ে বসেছিল মুশফিককে। ২৪তম ওভারের দ্বিতীয় বলে রমেশ মেন্ডিসকে উড়িয়ে মারতে গিয়ে তিনি ধরা পড়লেন লং-অনে। ফেরার আগে ২৮ রান করেন ৫৪ বলে।

আগের ম্যাচের নায়ক মুশফিক ফেরার সঙ্গে সঙ্গে বাংলাদেশের জয়ের সম্ভাবনা বেশ ক্ষীণ হয়ে পড়ে। তবে অল্প সময়ের জন্য কিছুটা আশা জাগিয়েছিলেন মোসাদ্দেক হোসেন ও মাহমুদউল্লাহ রিয়াদের পঞ্চম উইকেট জুটি। সে সময় তারা দলীয় স্কোর বোর্ডে যোগ করেছিলেন ৫০ বলে ৪১ রান। এর মধ্যে আবার দুই বছর পর হাফসেঞ্চুরির দেখা পান মোসাদ্দেক। কিন্তু তারপরেই রমেশ মেন্ডিসকে রিভার্স সুইপ করতে গিয়ে শর্ট থার্ডম্যানে আউট হন মোসাদ্দেক। ৭২ বলে ৫১ রান করে ফিরেন এই অলরাউন্ডার। সে সময় ১২৫ রানে পঞ্চম উইকেট হারায় বাংলাদেশ। ম্যাচ থেকেই ছিটকে যায় দলটি। তবে এক প্রান্ত বেশ দেখে শুনে খেলছিলেন মাহমুদউল্লাহ রিয়াদ। কিন্তু যোগ্য সঙ্গীর অভাব বোধ করছেলেন এ ডানহাতি। তাই চাপটা হু-হু করেই বাড়ছিল তার ওপর। শেষ পর্যন্ত সেটাকে আর জয় করতে পারেননি তিনি। ঠিকই হাফসেঞ্চুরির পর ফার্নান্দোর বলে উইকেটের পেছনে ধরা পড়েন থামেন। তার বিদায়ে গুটিয়ে যায় টিম বাংলাদেশ। ফেরার আগে মাহমুদউল্লাহর ব্যাট থেকে আসে ৬৩ বলে ২ চার ও ১ ছয়ে ৫৩ রান।

বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের গতকাল সবচেয়ে বেশি ভুগিয়েছেন দুশমন্ত চামিরা। এ স্পিনার ৯ ওভারে মাত্র ১৬ রান খরচায় নেন ৫ উইকেট। এদিকে হাসারাঙ্গা ও রমেস মেন্ডিস নেন ২টি করে উইকেট।

এর আগে সিরিজের শেষ ম্যাচে তিনবার জীবন পান কুশল পেরেরা। সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে তিনি তুলে নেন সেঞ্চুরি। শেষ পর্যন্ত ফিরেন ১২২ বলে ১২০ রানে। তার অধিনায়কোচিত ইনিংসে ১১টি চারের পাশে একটি ছক্কা। এর আগে তার সঙ্গে দানুশকা গুনাথিলাকার উদ্বোধনী জুটিতে উড়ন্ত সূচনা পায় শ্রীলঙ্কা।

৪০ বলে দলটির রান স্পর্শ করে পঞ্চাশ। এদিকে পাওয়ার প্লেতে ১০ ওভারে লঙ্কানরা তুলে ফেলে ৭৭ রান। দুই ওপেনার এগোচ্ছিলেন প্রায় এক তালে। দ্বাদশ ওভারে জোড়া আঘাতে বাংলাদেশকে খেলায় ফেরান তাসকিন। শুরুতে এ পেসারের বলে বোল্ড হন গুনাথিলাকা। তার বিদায়ে ভাঙে সফরকারীদের ৮২ রানের প্রথম জুটি। ওই ওভারের শেষ বলে খোঁচা মেরে কট বিহাইন্ড হন পাথুম নিসানকা। তারপরও স্বস্তি ফেরেনি টাইগার শিবিরে। সহ-অধিনায়ক কুশল মেন্ডিসের সঙ্গে মিলে দলকে এগিয়ে নেন পেরেরা। একপর্যায়ে সাকিব আল হাসানের বলে রিভার্স সুইপ করার চেষ্টায় মোস্তাফিজুর রহমানকে কঠিন ক্যাচ দিয়ে প্রথমবার বেঁচে যান পেরেরা। সে সময় তার রান ছিল ৬৬। সাকিবের ওভারেই পরে ৭৯ রানে পেরেরার ক্যাচ ছাড়েন আফিফ হোসেন। পরের ওভারে বোলিং ফিরে প্রথম বলেই ৬৯ রানের জুটি ভাঙেন তাসকিন। মিড অফে ধরা পড়েন মেন্ডিস। এদিকে ক্যারিয়ারের ষষ্ঠ সেঞ্চুরির আগে আরেকবার জীবন পান কুশল। এবার তার ক্যাচ ছাড়েন মাহমুদউল্লাহ। হতভাগ্য বোলার ছিলেন মোস্তাফিজ।

সেঞ্চুরির পর অবশ্য কুশলের ব্যাটকে চওড়া হতে দেয়নি বাংলাদেশি বোলারররা।  তবে সেই তিনিই ধনাঞ্জয়া ডি সিলভার সঙ্গে গড়ে তোলেন ৬৫ রানের আরেকটি ভালো জুটি। শেষ পর্যন্ত শরিফুলের বলে চমৎকার এক ক্যাচে পেরেরাকে থামান মাহমুদউল্লাহই। এর পরই নিরোশান ডিকভেলাকে রান আউটের ফাঁদে ফেলে স্বাগতিকরা। এদিকে শুক্রবার ভানিন্দু হাসারাঙ্গাকে প্রত্যাশিত ঝড় তুলতে দেননি তাসকিন। দায়িত্বশীল ব্যাটিংয়ে একপ্রান্ত আগলে রাখা ধনাঞ্জয়া দলকে নিয়ে যান তিনশ রানের কাছে। ৭০ বলে চারটি চারে ৫৫ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি।

বাংলাদেশের বোলারদের মধ্যে সবচেয়ে সফল তাসকিন। ৪৫ রানে ৪ উইকেট নেন তিনি। শরিফুল ৫৬ রানে নিয়েছেন ১টি উইকেট।

সংক্ষিপ্ত স্কোর

শ্রীলঙ্কা: ৫০ ওভারে ২৮৬/৬ (গুনাথিলাকা ৩৯, পেরেরা ১২০, নিসানকা ০, মেন্ডিস ২২, ধনাঞ্জয়া ৫৫*, ডিকভেলা ৭, হাসারাঙ্গা ১৮, রমেশ ৮*; শরিফুল ৮-০-৫৬-১, মিরাজ ১০-০-৪৮-০, মোসাদ্দেক ৩-০-৩২-০, তাসকিন ৯-০-৪৬-৩,মোস্তাফিজ ১০-০-৪৭-০, সাকিব ১০-০-৪৮-০)।

বাংলাদেশ: ৪২.৩ ওভারে ১৮৯ (তামিম ১৭, নাইম ১, সাকিব ৪, মুশফিক ২৮, মোসাদ্দেক ৫১, মাহমুদউল্লাহ ৫৩, আফিফ ১৬, মোস্তাফিজ ০*;  ধনাঞ্জয়া ৪-০-১৪-০, চামিরা ৯-১-১৬-৫, ফার্নেন্দো, ৬.৩-০-৩৩-১, রামেস, ৭-০-৪০-২, হাসারাঙ্গা ১০-০-৪৭-২)।

ফল: শ্রীলঙ্কা ৯৭ রানে জয়ী।

সিরিজ: তিন ম্যাচের সিরিজ ২-১ ব্যবধানে জয়ী বাংলাদেশ।