লজ্জার রেকর্ড গড়ল শ্রীলঙ্কা

ক্রীড়া প্রতিবেদক: শ্রীলঙ্কাকে ৩০২ রানের বিশাল ব্যবধানে হারালেন ভারতের রোহিত শর্মারা। ভারতের ব্যাটিং এবং বোলিংয়ের সামনে দাঁড়াতেই পারল না শ্রীলঙ্কা। পয়েন্ট তালিকায় আবার শীর্ষে চলে এলো ভারত। আর লজ্জার রেকর্ড গড়ল শ্রীলঙ্কা, ৫৫ রানে থেমে গেল তাদের লড়াই।

ভারত ও শ্রীলঙ্কার খেলা দেখে বিশ্বকাপের আঁচ পাওয়া গেল না। সেমিফাইনালে জায়গা নিশ্চিত করল ভারতের ব্যাটাররা, বোলাররা আয়েশ করে অনুশীলন সেরে নিলেন।

ওয়াংখেড়ের ২২ গজে খেলা শুরু হওয়ার আগে বিরাট কোহলির নাচ দেখা গিয়েছিল। তিনি বিরাট জয়ের আগাম পূর্বাভাস পেয়ে গিয়েছিলেন। ২০১১ সালের বিশ্বকাপ ফাইনালে এই মাঠে এই শ্রীলঙ্কাকে হারিয়েই বিশ্বচ্যাম্পিয়ন হয়েছিল মহেন্দ্র সিংহ ধোনির ভারত। তবে এই শ্রীলঙ্কার সঙ্গে সেই দলের মিল নেই। মুথাইয়া মুরালিধরন, কুমার সাঙ্গাকারা, লাসিথ মালিঙ্গা, তিলকারতেœ দিলশান, অজন্তা মেন্ডিসরা ছিলেন সেই দলে। সেই দলে ছিলেন মাহেলা জয়বর্ধনে এবং অ্যাঞ্জেলো ম্যাথিউজ। এবারও তারা রয়েছেন। জয়বর্ধনে রয়েছেন দলের ব্যাটিং পরামর্শদাতা হিসেবে। চোট জর্জর শ্রীলঙ্কা শিবির প্রতিযোগিতার মাঝপথে উড়িয়ে এনেছে ম্যাথুজকে। তা দিয়ে ফর্মে থাকা ভারতীয় দলকে আটকানো সম্ভব ছিল না। শ্রীলঙ্কা পারলও না।

শ্রীলঙ্কা ভারতের সেমিফাইনাল যাত্রায় বিঘœ ঘটাবে, এমন হয়তো ভাবেননি অধিনায়ক কুশল মেন্ডিসও। তাই বলে এমন অসহায় আত্মসমর্পণ! যে দলের হয়ে এক সময় খেলেছেন অর্জুন রানাতুঙ্গা, অরবিন্দ ডি’সিলভা, সনৎ জয়াসূরিয়ার মতো ক্রিকেটাররা।

টস জিতে ভারতকে প্রথমে ব্যাট করার আমন্ত্রণ জানিয়েছিলেন মেন্ডিস। ঘরের মাঠে রান পেলেন না রোহিত শর্মা (৪)। অধিনায়ক ম্যাচের দ্বিতীয় বলেই আউট হওয়ায় ওয়াংখেড়ের গ্যালারিতে গুমোট নেমে এসেছিল। তা দ্রæত কাটিয়ে দিলেন বিরাট কোহলি, শুভমন গিলরা। শ্রীলঙ্কার ফিল্ডারদের কার্যত দাঁড় করিয়ে রেখে তাদের শট ছুটল বাউন্ডারির দিকে। দর্শক হয়ে দেখতে হলো প্রতিপক্ষের বোলারদের। ২২ গজের কোথায় বল ফেললে কোহলি, শুভমনের আগ্রাসনে রাশ টানা যাবে, তা ঠাওর করতেই পারলেন না তারা। দ্বিতীয় উইকেটের জুটিতে কোহলি-শুভমন তুললেন ১৮৯ রান। কোহলি করলেন ৮৮ রান। ৯৪ বলের ইনিংসে মারলেন ১১টি ছয়। উইকেটের অন্য প্রান্তে শুভমনের ব্যাট থেকে এলো ৯২ বলে ৯২ রানের ইনিংস। ১১টি চার এবং ২টি ছয় দিয়ে সাজালেন নিজের ইনিংসটি। দু’জনকেই শতরান পেতে দিলেন না শ্রীলঙ্কার জোরে বোলার দিলশান মদুশঙ্ক। তিনিই আউট করেছিলেন রোহিতকে। এক দিনের ক্রিকেটে ৪৯তম শতরান পেলেন না কোহলি।

তবে শুভমন শতরান হাতছাড়া করায় হতাশ হয়েছেন শচিনকন্যা সারা। টেলিভিশনের ক্যামেরায় ধরা পড়েছে তার হতাশার ছবি।

ভারতীয় ব্যাটারদের মধ্যে একমাত্র শ্রেয়স আয়ার রান পাচ্ছিলেন না। তবে ঘরের চেনা মাঠে চেনা মেজাজে দেখা গেল কলকাতা নাইট রাইডার্সের অধিনায়ককে। ওয়াংখেড়ের ২২ গজে শ্রেয়সের সামনেও ভোঁতা হয়ে গেল শ্রীলঙ্কার বোলিং আক্রমণ। ৩টি চার এবং ৬টি ছক্কার সাহায্যে তার ৫৬ বলে ৮১ রানের ইনিংস ভারতের রানকে নিয়ে চলে গেল শ্রীলঙ্কার ধরাছোঁয়ার বাইরে। তাকেও আউট করলেন মদুশঙ্ক। রোহিতের মতোই ঘরের মাঠে রান পেলেন না সূর্যকুমার যাদবও (১২)। তাকেও আউট করলেন মদুশঙ্ক। ভারতীয় ব্যাটারদের দাপটের মধ্যেও ৫ উইকেট শ্রীলঙ্কার জোরে বোলারের। যদিও খরচ করতে হলো ৮০ রান। তাতেই নির্বিষ হয়ে গেল তার ৫ উইকেটের কৃতিত্ব। ভারতীয় ইনিংসের শেষ দিকে কেকের ওপর চেরি বিছিয়ে দিল রবীন্দ্র জাদেজার ২৪ বলে ৩৫ রানের ইনিংস। ৮ উইকেটে ৩৫৭ রান তুলে শ্রীলঙ্কাকে দান ছাড়ল রোহিতের দল।

ব্যাটাররা তবু উইকেট উপহার দিয়েছেন শ্রীলঙ্কাকে। ভারতের বোলাররা আরও নির্মম আচরণ করলেন। ১৪ রানে ৬ উইকেট! ২০ ওভারের ম্যাচেও এমন স্কোর বোর্ড দেখা যায় না। যাতপ্রিত বুমরা, মুহম্মদ সিরাজ, মুহম্মদ শামিÑতিনজন আউট করলেন শ্রীলঙ্কার ব্যাটারদের। পাথুম নিশঙ্ক (০), দিমুথ করুণারতেœ (০), মেন্ডিস (১), সাদিরা সমরবিক্রম (০), চরিথ আশালঙ্ক (১), দাসুন হেমন্ত (০), দুষ্মন্ত চামিরারা (০) নিয়মরক্ষা করতে ব্যাট হাতে ২২ গজে এলেন। এটুকুই অবদান তাদের।

শ্রীলঙ্কার ইনিংসের প্রথম বলেই উইকেট তুললেন বুমরা। দ্বিতীয় ওভারে আক্রমণে এসে প্রথম বলেই উইকেট তুললেন সিরাজও। আবার নবম ওভারে বল করতে এসে প্রথম ওভারেই দুটি উইকেট তুলে নিলেন শামি। ভারতের বোলাররা ওয়াংখেড়ের লালচে উইকেটে এমন একটা আবহ তৈরি করে দিলেন, যে বলের কাছে ব্যাট নিয়ে যেতেই ভরসা পাচ্ছিলেন না শ্রীলঙ্কার ব্যাটাররা।

৩৫৭ রানের জবাবে ২২ রানে ৭ উইকেট পড়ে যাওয়ার পর শ্রীলঙ্কার জয়ের আর কোনো আশা ছিল না। তারও আগে ৩ রানে শ্রীলঙ্কার ৪ উইকেট পড়ার পরেই বোঝা গিয়েছিল এবারের বিশ্বকাপের সব থেকে একপেশে ম্যাচ উপহার দিতে চলেছেন রোহিতরা। ম্যাচের বাকিটা ছিল শুধুই আনুষ্ঠানিকতা।

বিশ্বকাপের ম্যাচে আবার ৫ উইকেট নিলেন শামি।

বিষয় ➧

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০