নিজস্ব প্রতিবেদক: জনস্বাস্থ্যকে প্রাধান্য দিয়ে প্রধানমন্ত্রী ২০৪০ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে তামাকমুক্ত করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন এবং জাতিসংঘ ঘোষিত এফসিটিসির সঙ্গে সামঞ্জস্য করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনকে সংশোধনের অঙ্গীকার করেছেন। প্রধানমন্ত্রীর এ ঘোষণাকে সর্বাধিক গুরুত্ব দিয়ে সম্প্রতি বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থা ডেভেলপমেন্ট অরগানাইজেশন অব দ্য রুরাল পুয়র (ডরপ) এবং লক্ষ্মীপুর সাংবাদিক ফোরাম যৌথভাবে ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণে নীতি-নির্ধারকদের কাছে প্রত্যাশা’ শীর্ষক একটি আলোচনা সভা আয়োজন করে।
সিরডাপ মিলনায়তনে আলোচনা সভায় নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী প্রধান অতিথি ছিলেন। অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন স্বাস্থ্যসেবা বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মো. হেলাল উদ্দিন, জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ সেল সমন্বয়কারী হোসেন আলী খোন্দকার প্রমুখ। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন ডরপের চেয়ারম্যান মো. আজহার আলী তালুকদার।
অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য এবং তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণে প্রস্তাবসমূহ উপস্থাপন করেন ডরপের পরিচালক যোবায়ের হাসান। অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণকারী সাংবাদিক, সুশীল সমাজের সদস্য, বিড়ি শ্রমিক ও নেতা এবং যুব ফোরামের সদস্যরা তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালীকরণে ছয়টি সংশোধনী প্রস্তাবের ওপর আলোচনায় অংশ নেন।
বিদ্যমান তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের ছয়টি দুর্বলতা চিহ্নিত করে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার প্রস্তাব যথা: সব ধরনের পাবলিক প্লেস এবং গণপরিবহনে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান বিলুপ্ত করা, তামাক কোম্পানির সামাজিক দায়বদ্ধতা কার্যক্রম নিষিদ্ধ করা, বিক্রয় কেন্দ্রে তামাক দ্রব্যের প্রদর্শনী নিষিদ্ধ করা, ই-সিগারেট বা ইমার্জিং হিটেড টোব্যাকো প্রডাক্ট আমদানি, উৎপাদন, ব্যবহার ও বাজারজাতকরণ নিষিদ্ধ করা, তামাকপণ্যের সব ধরনের খুচরা ও খোলা বিক্রয় বন্ধ করা ও সচিত্র স্বাস্থ্য সতর্কবার্তার আকার ৫০ শতাংশ থেকে বাড়িয়ে ৯০ শতাংশ করা এবং তামাকজাত দ্রব্যের প্যাকেট বা কৌটায় ন্যূনতম পরিমাণ নির্ধারণসহ মোড়কীকরণে কঠোর নিয়ম আরোপ করা তথা প্লেইন প্যাকেজিং বাস্তবায়ন করা।
প্রধান অতিথির বক্তব্যে নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ গড়তে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশ বাস্তবায়ন আমাদের পবিত্র দায়িত্ব। উপস্থাপিত ছয়টি সংশোধনী প্রস্তাব খুবই সময়োপযোগী। আমি মনে করি, সরকারের প্রত্যেকটি মন্ত্রণালয় এ সংশোধনী প্রস্তাবের পক্ষে সমর্থন দেবেন ও তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনটি সংশোধনে ভূমিকা রাখবেন। আমি আমার মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে লঞ্চে ধূমপানের জন্য নির্ধারিত স্থান নিষিদ্ধ ও তামাকজাত দ্রব্য বিক্রি বন্ধ করতে উদ্যোগ নেব।’
হোসেন আলী খোন্দকার বলেন, ‘স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয় এ আলোচনা সভায় প্রস্তাবিত ছয়টি দাবির সঙ্গে একমত। স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের নতুন যে খসড়া তৈরি হয়েছে তাতে ডরপের দাবির সবগুলো বিষয়ই অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এটি সফল হয়েছে সম্মিলিত তামাকবিরোধী ক্যাম্পেইনের কারণে।’
মো. হেলাল উদ্দিন বলেন, ‘তামাক নিয়ন্ত্রণ আইনের প্রতি সরকার খুবই আন্তরিক। বিদ্যমান আইন শক্তিশালীকরণে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা আমাদের শক্তির জায়গা। আলোচনা সভায় যুবসমাজের সদস্য এবং সুশীল সমাজের সদস্যরা খুচরা শলাকা বিক্রি বন্ধসহ আরও যে পাঁচটি দাবি কথা বলেছেন তা অত্যন্ত যৌক্তিক। এ বিষয়টি আইনে অন্তর্ভুক্ত হলে আমরা একটা শক্তিশালী তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন পাব।
ক্যাম্পেইন ফর টোব্যাকো ফ্রি কিডসের (সিটিএফকে) সিনিয়র পলিসি অ্যাডভাইজার মো. আতাউর রহমান বলেন, বিদ্যমান আইনের বেশ কিছু ফাঁকফোকরের কারণে প্রধানমন্ত্রীর ঘোষণা ‘২০৪০ সালের মধ্যে তামাকমুক্ত বাংলাদেশ’ বাস্তবায়ন বড় বাধার সম্মুখীন হচ্ছে। তিনি আরও বলেন, আমি মন্ত্রী ও সংসদ সদস্যদের সংসদে এ বিষয়গুলো উত্থাপন করতে অনুরোধ জানাব।
অনুষ্ঠানে উপস্থাপিত ছয়টি সংশোধনীর প্রতি একাত্মতা ঘোষণা করে উপস্থিত যুব সদস্য, বিড়ি শ্রমিক, সুশীল সমাজের সদস্য, সাংবাদিক, সংসদ সদস্য ও নীতিনির্ধারককে তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন শক্তিশালী করার প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়।