নিজস্ব প্রতিবেদক: জ্বালানি তেলের দাম বৃদ্ধির প্রেক্ষাপটে লঞ্চের ভাড়া বেড়ে কত হবে, তা নির্ধারণে গঠিত ওয়ার্কিং কমিটি আটটি ধাপ রেখে প্রস্তাব জমা দিয়েছে নৌপরিবহন মন্ত্রণালয়ে। কমিটির সদস্য সচিব বিআইডব্লিউটিএ পরিচালক মুহাম্মদ রফিকুল ইসলাম বৃহস্পতিবার বলেন, ‘সব কিছু বিবেচনা করে এ প্রস্তাব সচিবের দপ্তরে জমা দেয়া হয়েছে। ১৯.৫ থেকে ৫০ শতাংশের মধ্যে কোনো একটি ধাপ এখন বিবেচনা করতে পারে।
প্রস্তাবে বলা হয়েছে, বর্তমান পরিস্থিতিতে লঞ্চের ভাড়া ১৯.৫%, ২২%, ২৫%, ৩০%, ৩৫%, ৪০%, ৪২% কিংবা ৫০% বাড়ানো যেতে পারে।
আট ধরনের ভাড়ার হার কেন প্রস্তাব করা হলোÑজানতে চাইলে রফিকুল ইসলাম বলেন, ‘সড়ক পরিবহনের ভাড়া বেড়েছে ২২ শতাংশ, তেলের দাম বৃদ্ধি পেয়েছে ৪২ শতাংশ আর মালিক সমিতি ৫০ শতাংশ দাবি করেছে (যদিও মালিক সমিতি ১০০ শতাংশ বাড়ানোর প্রস্তাব দিয়েছিল)। এই তিন বিষয় পর্যালোচনা করে এই ধাপগুলো তৈরি করা হয়েছে। সরকার এখান থেকে উপযুক্ত একটি নির্ধারণ করে গেজেট প্রকাশ করবে।’
প্রস্তাবে বলা হয়, ১৯ দশমিক ৫ শতাংশ ভাড়া বৃদ্ধি পেলে প্রতি কিলোমিটারে লঞ্চ ভাড়া বাড়বে ৪৫ পয়সা। ২২ শতাংশে বাড়বে ৫১ পয়সা, ২৫ শতাংশে ৫৭ পয়সা, ৩০ শতাংশে ৬৯ পয়সা, ৩৫ শতাংশে ৮০ পয়সা, ৪০ শতাংশে ৯২ পয়সা, ৪২ শতাংশে ৯৬ পয়সা আর ৫০ শতাংশ হলে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বাড়বে ১ টাকা ১৫ পয়সা।
এতদিন ১০০ কিলোমিটারের কম দূরত্বে প্রতি কিলোমিটারের লঞ্চ ভাড়া ২ টাকা ৩০ পয়সা, আর দূরত্ব ১০০ কিলোমিটারের বেশি হলে ভাড়া ২ টাকা ছিল। লঞ্চের সর্বনি¤œ ভাড়া ছিল ৩০ টাকা।
গত বছরের নভেম্বরে ডিজেলের দাম ২৩ শতাংশ বাড়ানোর পর লঞ্চের ভাড়া ৩৫ শতাংশের বেশি বাড়িয়ে এই হার নির্ধারণ করে দেয়া হয়েছিল। ইউক্রেন যুদ্ধের জেরে ডলারের উচ্চ মূল্যকে কারণ দেখিয়ে গত শনিবার সরকার ডিজেলের দাম এক লাফে ৪২ শতাংশ বাড়িয়ে দিয়েছে। এর ধারাবাহিকতায় বাসের ভাড়া ২২ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানো হয়েছে। এই প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশ লঞ্চ মালিক সমিতি ভাড়া দ্বিগুণ করার একটি প্রস্তাব গত রোববার বিআইডব্লিউটিএতে পাঠায়।
সেখানে ১০০ কিলোমিটারের কম দূরত্বে প্রতি কিলোমিটারে ভাড়া বাড়িয়ে ৪ টাকা ৬০ পয়সা; ১০০ কিলোমিটারের বেশি দূরত্বে ৪ টাকা ভাড়া নির্ধারণের প্রস্তাব দিয়েছে মালিক পক্ষ।
তাদের প্রস্তাবে বলা হয়, সরকার কর্তৃক জ্বালানি তেলের (ডিজেল) মূল্য লিটারে ৩৪ টাকা বৃদ্ধি করায় এবং বিশ্ববাজারে ডলারের মূল্য বৃদ্ধি পাওয়ায় বাংলাদেশের খোলা বাজারে মবিলের মূল্য ৫০ শতাংশ, প্লেট, অ্যাঙ্গেল, ইঞ্জিনের খুচরা যন্ত্রাংশ, ওয়েল্ডিং রড ও গ্যাসসহ স্পেয়ার পার্টসের মূল্য প্রায় ২০০ গুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় এই হারে লঞ্চের ভাড়া নির্ধারণ করা প্রয়োজন।
সোমবার নৌ-মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে ওই প্রস্তাব নিয়ে আলোচনার পর নৌ সচিব মো. মোস্তফা কামাল সাংবাদিকদের বলেন, মালিকপক্ষের প্রস্তাব তারা ‘যৌক্তিক মনে করছেন না’। সে জন্যই ওয়ার্কিং কমিটি করা হয়েছে। মালিকদের প্রস্তাবিত ভাড়ার হার বেশি। কেউ যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হয় সে জন্য কাজ করবে ওয়ার্কিং কমিটি। প্রজ্ঞাপন হওয়ার আগ পর্যন্ত আগের ভাড়াতেই লঞ্চে যাত্রী পরিবহন করা হবে।
ডব্লিউটিসির এক বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, ঢাকা/বরিশাল ও চাঁদপুর গন্তব্যে আগের ভাড়ার ওপর ২২ শতাংশ যুক্ত হবে। দেশের অন্যান্য গন্তব্যে আগের ভাড়ার ওপর ১৫ শতাংশ যুক্ত হবে। লোকাল গন্তব্যে আপাতত বিবেচনাধীন থাকবে। এক মাস পর্যবেক্ষণের পর সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। ভাড়া বৃদ্ধির বিষয়টি গত ৬ আগস্ট থেকে কার্যকর হবে।
সরকার জ্বালানি তেলের মূল্য কমালে আনুপাতিক হারে সমন্বয় করা এই পরিবহন দর হ্রাস করা হবে বলে উল্লেখ করা হয়েছে বিজ্ঞপ্তিতে।