নিজস্ব প্রতিবেদক: লঞ্চ ভাড়া দ্বিগুণ করার জন্য বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের (আইডব্লিউটিএ) কাছে প্রস্তাব দিয়েছে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌ-চলাচল (যাপ) সংস্থা। গতকাল শুক্রবার সংস্থাটির প্রেসিডেন্ট মাহবুব উদ্দিন বীর বিক্রম স্বাক্ষরিত এক চিঠিতে এ প্রস্তাব দেয়া হয়।
চিঠিতে বলা হয়, জ্বালানি তেলের মূল্য লিটারপ্রতি ১৫ টাকা বেড়েছে। এছাড়া এরই মধ্যে স্টিল ও অন্যান্য পণ্যের মূল্যও দ্বিগুণের বেশি বৃদ্ধি পেয়েছে।
সেজন্য সংস্থাটি ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে বর্তমান ভাড়া ১০০ কিলোমিটার পর্যন্ত এক টাকা ৭০ পয়সার পরিবর্তে তিন টাকা ৪০ পয়সা এবং ১০০ কিলোমিটারের ঊর্ধ্বে এক টাকা ৪০ পয়সার পরিবর্তে দুই টাকা ৮০ পয়সা নির্ধারণ করার জন্য আইডব্লিউটিএ চেয়ারম্যানের কাছে অনুরোধ জানিয়েছে।
এদিকে বরিশালে গতকাল থেকেই লঞ্চ ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন লঞ্চ মালিকরা। তেলের দাম বৃদ্ধির পর বরিশালে লঞ্চ চলাচল স্বাভাবিক থাকলেও বিভিন্ন রুটে ১০ থেকে ১০০ টাকা ভাড়া বেড়েছে বলে অভিযোগ এসেছে যাত্রীদের কাছ
থেকে। তবে লঞ্চ মালিকরা বলছেন, তারা সরকার-নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে কম ভাড়া নিতেন। এখন ডিজেলের দাম বাড়ায় সরকার-নির্ধারিত ভাড়াই নিচ্ছেন তারা।
সরকার বুধবার মধ্যরাত থেকে ডিজেল ও কেরোসিনের দাম লিটারে ১৫ টাকা বাড়ানোর পর বৃহস্পতিবার বিকালে ধর্মঘটে যাওয়ার ঘোষণা দেন পরিবহন মালিক-শ্রমিকরা। এতে বিপাকে পড়েন যাত্রীরা। এ সুযোগে অন্য বিভিন্ন পরিবহনে ভাড়া বাড়িয়ে দেয়া হয়। সব মিলিয়ে চরম ভোগান্তি পোহাতে হচ্ছে যাত্রীদের।
গতকাল সকালে এমভি কীর্তনখোলা লঞ্চে ঢাকা থেকে বরিশাল আসেন ব্যাংক কর্মকর্তা রফিকুল বারী। তিনি বলেন, ‘ডেকের ভাড়া ১৫০ টাকা থেকে বাড়িয়ে ২৫০ টাকা করা হয়েছে। তবে ক্যাবিনের ভাড়া আগের মতোই আছে।’
গতকাল ভোর ৫টা থেকে বরিশালের অভ্যন্তরীণ রুটের লঞ্চগুলো চলাচল করছে। ভোলা, ইলিশা, মজুচৌধুরীর হাট, লক্ষ্মীপুর, মেহেন্দিগঞ্জ, হিজলা ও মুলাদীর উদ্দেশে বরিশাল নৌবন্দর ছেড়ে গেছে বিভিন্ন লঞ্চ। রাতে ছাড়বে ঢাকা-বরিশাল রুটের বিলাসবহুল লঞ্চ। তবে সব রুটেই যাত্রীভাড়া বৃদ্ধি করেছে লঞ্চ কর্তৃপক্ষ।
লঞ্চে ভোলা থেকে সকালে বরিশাল ঘাটে আসা এক যাত্রী নিজেকে ইজাজ বৈরাগী নামে পরিচয় দিয়ে বলেন, ‘বৃহস্পতিবার লঞ্চের ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছে কর্তৃপক্ষ। ৮০ টাকার ভাড়া গুনতে হয়েছে ১২০ টাকায়।’
ভাড়া বাড়ানোর কারণ বললেন বরিশাল-ইলিশা-লক্ষ্মীপুর নৌপথে চলাচলকারী এমভি সম্পার সুপারভাইজার মো. রনি।
তিনি বলেন, ‘এক ব্যারেল তেলে তিন হাজার টাকা দাম বেড়েছে। তাই যাত্রীভাড়া বাড়াতেই হবে। ভাড়া না বাড়লে কোম্পানির লোকসান হবে। লোকসান দিয়ে কোনো কোম্পানিই ব্যবসা করবে না।’
তবে বরিশাল লঞ্চ মালিক সমিতির যুগ্ম আহ্বায়ক সাইদুর রহমান রিন্টু বলেন, ‘কোনো রুটেই ভাড়া বৃদ্ধি করা হয়নি। সরকার-নির্ধারিত ভাড়াই নেয়া হচ্ছে। আগে সরকার-নির্ধারিত ভাড়ার চেয়ে যাত্রীদের কাছ থেকে কম নেয়া হতো। এখন ডিজিলের দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় লোকসান কমিয়ে আনতে সরকার-নির্ধারিত ভাড়া নেয়া হচ্ছে।’
তিনি বলেন, ‘ঢাকা-বরিশাল নৌপথে ডেকের ভাড়া ছিল ২৫৫ টাকা। ২০১৩ সালে সরকার এই ভাড়া নির্ধারণ করে দেয়। কিন্তু এত দিন যাত্রীদের কাছ থেকে ১৫০ টাকা নেয়া হতো। প্রতিবার আসা-যাওয়ায় ৩৫ থেকে ৪০ ব্যারেল তেলে লাগে। তাই লোকসান এড়াতে শুক্রবার থেকে ২৫০ টাকা ভাড়া নেয়া হচ্ছে। পাশাপাশি ৬০ শতাংশ বৃদ্ধি করে ডেকের ভাড়া ৪০০ টাকা নির্ধারণের জন্য সরকারের কাছে আবেদন জানানো হয়েছে।’
সরকার দাবি না মানলে তারাও ধর্মঘটে যেতে পারেন বলে জানান রিন্টু। তবে বরিশালে বন্ধ রয়েছে বাস-ট্রাক চলাচল।
বৃহস্পতিবার রাতের সিদ্ধান্ত অনুযায়ী শুক্রবার ভোর ৬টা থেকে বরিশাল কেন্দ্রীয় বাস টার্মিনাল নথুল্লাবাদ ও রূপাতলী বাসস্ট্যান্ড থেকে অভ্যন্তরীণ ও দূরপাল্লার রুটের বাস চলাচল বন্ধ করে দেয়া হয়। ভোর ৬টার পর দেশের কোথাও থেকে কোনো বাস প্রবেশও করেনি বরিশাল জেলায়Ñএকথা জানিয়েছেন জেলা বাস মালিক গ্রুপের সাধারণ সম্পাদক গোলাম মাকসেদ বাবলু।
হঠাৎ করে বাস চলাচল বন্ধ হয়ে যাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন যাত্রীরা। নথুল্লাবাদ ও রূপাতলী বাসস্ট্যান্ডে ফুটে উঠেছে যাত্রীদের ভোগান্তির নানা চিত্র।
বরিশাল শহরের কাশিপুর এলাকার ইমতিয়ার আহম্মেদ বলেন, চাকরির খোঁজে তিনি ঢাকায় থাকেন। বিসিএস পরীক্ষায় অংশ নিতে বরিশালে এসেছিলেন তিনি। শুক্রবার বিকাল ৩টায় ঢাকায় একটি নিয়োগ পরীক্ষায় অংশ নেয়ার কথা তার। কিন্তু সকালে নথুল্লাবাদ বাস টার্মিনালে গিয়ে শোনেন বাস বন্ধ। তাই ঝুঁকি নিয়ে বিকল্প পথে ঢাকা যাওয়ার জন্য চেষ্টা করছেন তিনি।
বাস বন্ধ থাকার সুযোগে স্বল্প দূরত্বে ভাড়া বাড়িয়ে দিয়েছেন ছোট যানের চালকরা। যাত্রীদের অভিযোগ, অটোরিকশা চালকরা ১০ টাকার ভাড়া ৫০ টাকা চাচ্ছেন।
বাধ্য হয়েই তাদের চাপিয়ে দেয়া বর্ধিত ভাড়ায় যেতে হচ্ছে বলে জানান বরিশাল শের-ই বাংলা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে চিকিৎসাধীন স্বজনকে দেখতে আসা বানারীপাড়ার বাসিন্দা মাওলাদা মোতাহার উদ্দিন।
অতিরিক্ত ভাড়া নেয়ার কথা স্বীকার করেন অটোরিকশা চালক হারুন ব্যাপারী। তিনি বলেন, ‘বাস শ্রমিকরা আমাদের বাধা দেয়। কখনও কখনও লাঠি নিয়ে ধাওয়া করে। তাই ঝুঁকি নিয়ে চালানোর জন্য দুই-চার টাকা বেশি নিই।’
এদিকে বরিশাল ট্রাক শ্রমিক ইউনিয়নের সভাপতি আজাদ হোসেন কালাম মোল্লা বলেন, ডিজেলের দাম না কমানো পর্যন্ত তাদের ধর্মঘট চলবে। বিকালে তাদের বিক্ষোভ কর্মসূচি রয়েছে বলেও জানান তিনি।