Print Date & Time : 19 June 2025 Thursday 3:38 pm

লটকনে লাখপতি

এক সময়ের অজনপ্রিয় ফল কালের আবর্তে এখন চাহিদাসম্পন্ন ও অর্থকরী ফল হিসেবে পরিচিত। স্থানীয় নাম তার ‘ভুবি’। বলছি লটকনের কথা।
কৃষিনির্ভর শেরপুর সদরের নকলা, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদীর বিভিন্ন এলাকার শতাধিক কৃষক প্রকৃতি প্রদত্ত এই লটকনের বাণিজ্যিক উৎপাদন করছেন। বাণিজ্যিকভাবে বাগান তৈরি করে লাখপতি হয়েছেন তাদের অনেকেই। বাগানমালিকরা কয়েক বছর ধরে প্রতি মৌসুমে শুধু লটকন বিক্রি করে ঘরে তুলছেন লাখ টাকা। আর ওইসব বাগান থেকে লটকন কিনে নিয়ে বিভিন্ন বিভাগীয় ও জেলা শহরে পাইকারি ও স্থানীয় বাজারে খুচরা বিক্রি করে অনেক মৌসুমি ফল বিক্রেতা আর্থিকভাবে সচ্ছল হয়েছেন। মোদ্দা কথা, ভাগ্য খুলেছে জেলার লটকন বাগান মালিক ও শতাধিক মৌসুমি ফল বিক্রেতার।
শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতর সূত্র জানায়, লটকন চাষের শুরুতে গাছের চারা কেনা ও রোপণ ছাড়া আর কোনো খরচ নেই। নামমাত্র শ্রম ও কোনো পরিচর্যা ছাড়া কম খরচে লাভ বেশি পাওয়ায় জেলার পাহাড়ি এলাকা ও মাঝারি উঁচু জমিতে প্রতিনিয়ত বাড়ছে এ ফলের চাষ। সাধারণত বেলে বা বেলে-দোআঁশ মাটিতে এর ফলন ভালো হয়। পরিত্যক্ত জমিতে লটকন বাগান করে কৃষক ও ফল বিক্রেতারা আর্থিকভাবে লাভবান হচ্ছেন। অনেক চাষি তাদের বাড়ির আঙিনা ও বিভিন্ন কাঠের বাগানে লটকন চাষের চেষ্টা করছেন।
নকলার চন্দ্রকোনা ইউনিয়নের বন্দটেকী গ্রামে বাণিজ্যিকভাবে লটকন চাষি মুনসেফ আলী ও খোকন মিয়া জানান, বীজের গাছে ফলন আসতে আট থেকে ১০ বছর সময় লাগে। কিন্তু কলম করা গাছে ফলন আসতে সময় লাগে মাত্র দুই থেকে তিন বছর। প্রতিবছর মাঘ থেকে ফাল্গ–ন লটকন গাছে ফুল আসা শুরু হয়। জ্যৈষ্ঠের শেষে ফল পাকা শুরু হয়।
চাষি শহিদুল ইসলাম জানান, ২০০০ সাল থেকে ২০০৫ সাল পর্যন্ত নার্সারির ব্যবসা করেছি। ২০০৫ সালে লটকন বাগান করে স্বাবলম্বী হওয়ার সংবাদ পত্রিকায় পড়ে ২০টি লটকন গাছ বাড়ির আঙিনার পরিত্যক্ত জমিতে রোপণ করি। পরের বছর ২৭ শতাংশ জমিতে ৭৫টি ও ৩৫ শতাংশ জমিতে ৫৬টি লটকন গাছ রোপণ করি। ২০১৫ সালে ওই গাছগুলোয় ফল আসে। ওই বছর সাত হাজার টাকার লটকন বিক্রি করি। এরপর থেকে প্রতিবছর ফলন বাড়তে থাকে। আয়ের পরিমাণও বাড়ে। চলতি মৌসুমে ওই দুই বাগানের লটকন পাইকারদের কাছে অগ্রিম ৭৮ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। তিনি বলেন, অগ্রিম বিক্রি না করলে লক্ষাধিক টাকার লটকন বিক্রি করা যেত।
চাষি শরীফ হোসেন জানান, ১৪৫টি গাছের ফল অগ্রিম এক লাখ ৪৫ হাজার টাকায় বিক্রি করেছি। সদর উপজেলার মোছারচর এলাকার চাষি ছাইদুল ইসলাম, আক্কাস আলী, ইন্তাজ মিয়া ও আবদুল হাই জানান, বিনাশ্রম ও বিনা ব্যয়ে লটকন ফল চাষে যে লাভ হয়, তা অন্য কোনো ফল-ফসল বা শাকসবজি চাষে কল্পনা করা যায় না। এই ফল চাষ করে জেলা সদরসহ নকলা, নালিতাবাড়ী, ঝিনাইগাতী ও শ্রীবরদীর বিভিন্ন এলাকার শতাধিক কৃষক লাখপতি হয়েছেন।
কৃষি সম্প্রসারণ কর্মকর্তা কৃষিবিদ আবদুল ওয়াদুদ জানান, এক একর জমিতে লটকন চাষ করার পর প্রথম বছরই লাখ টাকা আয় করা সম্ভব।
শেরপুর জেলা কৃষি সম্প্রসারণ অধিদফতরের উপপরিচালক আশরাফ উদ্দীন বলেন, বাড়ির আঙিনা ও যে কোনো কাঠ বা ফলবাগানেও লটকন চাষ কার সম্ভব। ছায়াযুক্ত স্থানের লটকন মিষ্টি স্বাদের। তাই এটি চাষ করতে বাড়তি জমির দরকার হয় না। তাছাড়া অন্য ফল বা ফসলের চেয়ে লটকনের রোগবালাই ও পোকার আক্রমণ কম হয়। তাই ঝুঁকিমুক্ত এই ফলের আবাদ বাড়াতে কৃষকদের পরামর্শ দেওয়া হচ্ছে বলে জানান তিনি।

এমএ রফিক