Print Date & Time : 22 June 2025 Sunday 6:18 pm

লবণসহিষ্ণু ধান উৎপাদনে নীতিসহায়তা দিন

 

সাতক্ষীরায় চলতি বোরো মৌসুমে বিস্তীর্ণ চিংড়ি ঘেরে ৭৯ হাজার ৭৭৬ হেক্টর জমিতে বোরো লবণসহিষ্ণু ধান আবাদ হয়েছে। জেলার উপকূলীয় অঞ্চলে বেশিরভাগ জমি লবণাক্ত। এই জমিতে নদীর লোনা পানি তুলে বিগত প্রায় চার দশক ধরে চিংড়ি চাষ করছেন স্থানীয় কৃষক। বিগত বছরগুলোয় শুষ্ক মৌসুমে চিংড়ির উৎপাদন ভালো না হওয়ায় লবণসহিষ্ণু বোরো ধান চাষে ঝুঁকেছেন কৃষক। স্থানীয় কয়েকজন কৃষকের বরাত দিয়ে শেয়ার বিজ প্রতিনিধি জানান, এখানকার লবণাক্ত জমিতে বোরো ধান উৎপাদন করে লাভবান হচ্ছেন তারা। আশাশুনি উপজেলার কাদাকাটি গ্রামের চিংড়িচাষি আজমত আলী চলতি মৌসুমে তিনি ২৫ বিঘা জমিতে মাছের ঘেরে লবণসহিষ্ণু ২৬ জাতের বোরো ধান চাষ করেছেন। প্রাকৃতিক বিপর্যয় না ঘটলে ভালো ফলন পাওয়া যাবে। বিঘাপ্রতি তার ৭ হাজার টাকা হারে ২৫ বিঘায় এক লাখ ৭৫ হাজার টাকা খরচ হয়েছে। ২৫ বিঘায় ৬২৫-৬৩০ মণ ধান উৎপাদন হবে। এর বাজার মূল্য কমপক্ষে ৭ লাখ টাকা। খরচ বাদে পাঁচ লাখ টাকার বেশি লাভ হবে তার। এমন খবর আমাদের মনে আশা জোগায়। কেবল সাতক্ষীরা নয়, কক্সবাজার পর্যন্ত দেশের উপকূলীয় অঞ্চলে কমবেশি লবণসহিষ্ণু ধান উৎপাদন হয়।

দেশে প্রতি বছরই বিভিন্ন কারণে চাষাবাদের জমি কমছে। বর্তমানে জনসংখ্যা যে হারে বাড়ছে, এ বর্ধিত জনসংখ্যার খাবার নিশ্চিত করতে হবে। যেসব জমিগুলোয় চাষ করা যায় না বিশেষ করে দক্ষিণাঞ্চলের লবণাক্রান্ত, সুনামগঞ্জের জলাবদ্ধ ও উত্তরের খরাপ্রবণ জমিগুলোয় কীভাবে ধান উৎপাদন করা যায়, তা নিয়ে গবেষণাকার্যক্রম পরিচালনা করতে হবে। শাবিপ্রকির কয়েকজন গবেষক ইতোমধ্যে আংশিক লবণাক্তসহিষ্ণু ট্রান্সজেনিক ধানের চারা উদ্ভাবনে সক্ষম হয়েছেস। জলাবদ্ধতা সহনশীল ও খরা সহনশীল ধান উৎপাদনের কাজ চলছে। বোরো মৌসুমে ধান গাছ প্রচুর সূর্য কিরণ পায়, সার বেশি গ্রহণ করে অথচ গাছ ও পাতা হেলে পড়ে না, ফলবান কুশি বেশি হয় এবং পরিশেষে অধিক ফলন পাওয়া যায়। তাই এ মৌসুমে উচ্চফলনশীল জাতের বোরো ধানের চাষ সম্প্রসারণ করা প্রয়োজন।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর জমির প্রকৃতি লবণাক্তসহিষ্ণু ধান চাষে কৃষককে নির্বাচনে সহায়তা, জমি তৈরিতে করণীয়, বীজ ও সার ব্যবহার, সেচ ব্যবস্থাপনা, আগাছা দমন, কীটনাশক ব্যবহার, পোকামাকড় ও রোগবালাই দমনে নীতি সহায়তা দিলে ভালো ফলন লাভ সম্ভব। ধান তোলার সময়ও গুরুত্বপূর্ণ। সব ধানই যথাসময়ে কাটা ও মাড়াই করা উচিত। লবণাক্তসহিষ্ণু  ধান পাকে চৈত্র-বৈশাখ মাসে। পাকার সঙ্গে সঙ্গে ধান কেটে বাড়ি নিয়ে আসতে হয়। কারণ যে কোনো মুহূর্তে ঝড় ও শিলাবৃষ্টিতে বোরো ধান ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে। তাছাড়া হাওর অঞ্চলের নিচু জমিতে বোরো ধানের আবাদ করা হলে এবং কাটতে দেরি করলে বৃষ্টির পানিতে অনেক সময় পাকা ধান তলিয়ে যেতে পারে। তাই পাকা ধান মাঠে না রেখে সময়মতো কেটে নিলে ফলনের ক্ষয়ক্ষতি অনেকটা কমানো যায়। লবণসহিষ্ণু ধান উৎপাদনে সার্বিক নীতিসহায়তা দিলে দেশে ধানের ফলন বাড়ানো সম্ভব।