মীর কামরুজ্জামান মনি, যশোর:চামড়া সংগ্রহের সবচেয়ে বড় মৌসুম কোরবানির ঈদ। সারা বছর চামড়া ব্যবসায়ীরা অপেক্ষায় থাকেন এ সময়ের জন্য। এ সময় সংগৃহীত চামড়া সরক্ষণের জন্য দরকার হয় লবণের। কিন্তু আসন্ন কোরবানি ঈদে চামড়া কেনার পর বিক্রি করে লাভতো দূরের কথা উল্টো লসে পড়বেন কি না এমনই দুশ্চিন্তায় পড়েছেন যশোরের চামড়া ব্যবসায়ীরা। একদিকে বৈশ্বিক মন্দা ও রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে চামড়া ও চামড়াজাত পণ্যের অর্ডার কমতে শুরু করায় হয়েছে চামড়ার দরপতন; অন্যদিকে লবণের দাম বৃদ্ধিতে ব্যবসায়ীদের মাঝে নেমে এসেছে হতাশা।
চামড়া ব্যবসায়ীরা বলছেন, একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী সিন্ডিকেট প্রতি বছর কোরবানির আগে লবণের দাম বাড়িয়ে দেয়। এর ফলে পুরো চামড়ার বাজারে অস্থিরতা সৃষ্টি হয়। লবণ ব্যবসায়ীরা দাম বৃদ্ধির জন্য কক্সবাজারের সিন্ডিকেটকে দায়ী করছেন।
যশোরের রাজারহাট দেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের অন্যতম বৃহত্তম চামড়ার হাট। সপ্তাহের দুই দিন এ হাটে চামড়া বেচাকেনা হয়। এ হাটে যশোরসহ খুলনা বিভাগের ১০ জেলার ব্যবসায়ীদের পাশাপাশি গোপালগঞ্জ, ফরিদপুর, মাদারীপুর, ঝালকাঠি, রাজশাহী, পাবনা, ঈশ্বরদী ও নাটোরের বড় ব্যবসায়ীরা চামড়া বেচাকেনা করেন। এখানে ছোট-বড় মিলে ৩ শতাধিক চামড়ার আড়ত রয়েছে। সারা বছরই এ হাটে চামড়া বেচাকেনা হলেও কোরবানির ঈদের মৌসুমি বাজার ধরতে অপেক্ষায় থাকেন ব্যবসায়ীরা। তবে এবার ঈদের আগেই ব্যবসায়ীদের মাঝে হতাশা নেমেছে। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে ততই বৃদ্ধি পাচ্ছে চামড়া সংরক্ষণের প্রধান অনুষঙ্গ লবণের দাম।
রাজারহাটের চামড়া ব্যবসায়ীরা জানান, প্রতিটি গরু বা মহিষের চামড়া সংগ্রহ করে সংরক্ষণ করতে ৮ থেকে ১০ কেজি পর্যন্ত লবণের প্রয়োজন। গত বছর আমরা লবণ কিনেছি ৬ থেকে ৭শ টাকা বস্তা। আর এ বছর ১৪ থেকে ১৫শ টাকা বস্তা।
রাজারহাটের চামড়া ব্যবসায়ী মন্টু বিশ্বাস বলেন, ‘কিছুদিন আগেও যে মাল ৫শ টাকা বিক্রি হতো, বর্তমানে তার দাম ৩শ টাকা। আমাদের এক একটা চামড়ার পেছনে আমাদের দেড়শ-দুইশ টাকা খরচ হয়। এখন চামড়ার থেকে লবণের দাম বেশি।’
রাজারহাটের চামড়ার আড়তদার হাসানুজ্জামান হাসু বলেন, ৭০ কেজির এক বস্তা লবণ যদি ১৪শ টাকা দিয়ে কিনতে হয় তাহলে এই ব্যবসায় আমাদের খুব সমস্যায় পড়তে হবে। চামড়ার বাজার দিন দিন কমে যাচ্ছে।
বৃহত্তর যশোর জেলা চামড়া ব্যবসায়ী সমিতির সাধারণ সম্পাদক আলাউদ্দিন মুকুল বলেন, দিনমজুরদের মূল্য বৃদ্ধি এবং লবণের দামÑসব মিলিয়ে একটা খারাপ অবস্থার মধ্যে পার করছি আমরা। এবারে যে পরিমাণ গরম তার মধ্যে যদি কাঁচা চামড়া সংরক্ষণ করতে হয়, সেক্ষেত্রে সময় মতো কাঁচা চামড়ায় লবণ দিতে হবে।
রাজারহাট এলাকার পাইকারি লবণ বিক্রেতা ইমরান হোসেন পাপ্পু জানান, আমরা লবণ আনি কক্সবাজার থেকে। প্রতি বছরই আনি। লবণের দাম বস্তা প্রতি ৭শ টাকা থাকলে কোরবানির সময় ১২শ-১৩শ টাকা হয়ে যায়। কক্সবাজারে যারা লবণের সিন্ডিকেট আছে তারা লবণের দাম বাড়িয়ে দেয়।
যশোরের জেলা প্রশাসক মো. তমিজুল ইসলাম খান বলেন, আমরা বাজার মনিটর করব। বিসিকের তরফ থেকে আমরা যেটা জানি এই মুহূর্তে চাহিদার তুলনায় লবণের উৎপাদন বেশি আছে। বাজারে কোনো ক্রাইসিস হবে না। লবণের সরবরাহ পর্যাপ্ত আছে। বিসিকের কর্মকর্তা, ভোক্তা অধিকারের কর্মকর্তা এবং জেলা প্রশাসনের ম্যাজিস্ট্রেটবৃন্দ, উপজেলায় নির্বাহী অফিসার ও পুলিশ সবাই মিলে এটা মনিটর করব। আশা করি সমস্যা হবে না।