খাদ্যের ছয় উপাদানের একটি। এটা খাবার সুস্বাদু করতে ব্যবহার করা হয়। লবণ ছাড়া রন্ধন করা খাবার মুখে রোচে না। খাদ্যে লবণের অপরিহার্যতা এত বেশি যে, ‘লবণের মতো ভালোবাসা’ গল্পও তৈরি হয়েছে। আধুনিক সময়ে আয়োডিনমিশ্রিত পরিমিত লবণ কিছু রোগ নিরাময়ে ভ‚মিকা রাখে। লবণ অনেক রোগের উৎসও বটে। তাই বলে লবণ পরিহার করাও সম্ভব নয়। এছাড়া চামড়া প্রক্রিয়াজাতকরণ, ফল-সবজি সংরক্ষণসহ নানাবিধ প্রয়োজনীয় কাজে লবণ ব্যবহার করা হয়। বর্তমান বাজারে প্যাকেটজাত এক কেজি লবণের দাম ৩৮ থেকে ৪৫ টাকা।
লবণের দাম বেশি নয়। এটি সাধারণ মানুষের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যেই থাকে। তবে মাঝেমধ্যে গণমাধ্যমে লবণের দাম নিয়ে কারসাজির খবর আসে। গতকালই শেয়ার বিজে প্রকাশিত হয়েছেÑ‘উৎপাদন বাড়লেও কমেনি দাম: মাঠের ৭ টাকার লবণ যেভাবে ভোক্তা পর্যায়ে ৪২ টাকা’ শীর্ষক প্রতিবেদন। প্রতিবেদনের তথ্য, দেশে অপরিশোধিত লবণের উৎপাদন বেড়েছে। ক্ষুদ্র ও কুটিরশিল্প করপোরেশনের (বিসিক) হিসাবে চলতি মৌসুমে ২৪ লাখ ৩৭ হাজার ৮৯০ টন লবণ উৎপাদিত হয়েছে, যা গত বছরের চেয়ে দুই লাখ আট হাজার টন বেশি। তবে এই বাড়তি উৎপাদনের সুফল মিলছে না।
খাওয়ার লবণ আর অন্য কাজে ব্যবহার্য (ডাইং শিল্পকারখানায় ও চামড়া সংরক্ষণে ব্যবহার্য এবং গবাদিপশুকে খাওয়ানোর আয়োডিনবিহীন সাদা) লবণ উভয় প্রকার লবণের দামই বেশি। এর সুফল পান না লবণচাষিরা। চট্টগ্রাম ও কক্সবাজারের লবণচাষি ও ব্যবসায়ীদের সিন্ডিকেটের কারণেও লবণের দামে অস্থিরতা বিরাজ করে। এ ছাড়া ঈদুল আজহায় কোরবানির পশুর চামড়া সংরক্ষণে লবণের চাহিদা বাড়ার অজুহাতে একশ্রেণির ব্যবসায়ী লবণের দাম আগেই বাড়িয়ে দেন।
দেশে লবণের উৎপাদন কমেছে। চাহিদার তুলনায় উৎপাদন কম হওয়ার কারণে লবণের দাম বাড়বে, এটি স্বাভাবিক। কিন্তু মাঠের সাত টাকার লবণ ভোক্তা পর্যায়ে ৪২ টাকাÑএটি কোনো যুক্তিতেই মেনে নেয়া যায় না। লবণের দাম বেড়ে যাওয়ায় দেশের প্রধান রপ্তানিমুখী খাত তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকেরা উৎপাদন খরচ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কায় রয়েছেন। ডাইংশিল্প ও ইটিপি পরিচালনায় ব্যবহার্য লবণের দাম বৃদ্ধিতে পোশাকপণ্য উৎপাদনের খরচ অস্বাভাবিক হারে বেড়ে যাচ্ছে। এতে রপ্তানিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। দেশে লবণের ঘাটতি থাকলে বাজার স্থিতিশীল রাখতে বিকল্প উদ্যোগ নিতে হবে। কিন্তু লবণের ন্যায্য দাম তো কৃষক পাচ্ছেন না। অপরিশোধিত লবণ বিক্রি করে প্রতি কেজি পাচ্ছেন সর্বোচ্চ সাত টাকায়। আঙিনায় মজুত করে তার ওপর পলিথিন বিছিয়ে সংরক্ষণ করেন। উৎপাদিত লবণ সপ্তাহের মধ্যে বিক্রি করতে না পারলে বড় বিপাকে পড়েন তারা। তাদের অসহায়ত্বের সুযোগ নেন ব্যবসায়ীরা। চাষি ও সাধারণ ভোক্তা যাতে ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেজন্য সরকার লবণের যৌক্তিক দাম নিশ্চিতের ব্যবস্থা নেবে বলেই প্রত্যাশা।