লবণ উৎপাদনে বিনিয়োগ বৃদ্ধির যে প্রতিবেদন গতকালের শেয়ার বিজে প্রকাশিত হয়েছে তা যেমন সুসংবাদ, তেমনি চিন্তা উদ্রেককারী। এতে দেশে জরুরি পণ্যটির উৎপাদন বাড়বে নিঃসন্দেহে। ফলে অভ্যন্তরীণ চাহিদা মেটানোর জন্য আমদানি করতে হবে না। চিন্তার বিষয়, সহযোগী দৈনিকের প্রতিবেদনে দেখা যাচ্ছে, চলতি মৌসুমে লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নাকি নির্ধারণ করা হয়নি এখনও। প্রশ্ন হলো, এমন পরিস্থিতিতে পণ্যটি উৎপাদনে বিনিয়োগ বাড়ানোর সিদ্ধান্ত কি সুবিবেচনাপ্রসূত? অনেকেরই হয়তো জানা, লবণ উৎপাদনে বাংলাদেশ মোটামুটি স্বয়ংসম্পূর্ণ। এ অবস্থায় অপরিকল্পিতভাবে উৎপাদন বাড়ালে তা পণ্যটির জোগান পরিস্থিতিতে প্রভাব ফেলবে অবশ্যই। সমান্তরালে চাহিদা না বাড়লে তাতে এর দাম কমে আসার শঙ্কা থাকে বাজারের নিয়মেই। চলতি মৌসুমে যে হারে উৎপাদন শুরু হয়েছে, সে হারে চাহিদা বৃদ্ধির তেমন ইঙ্গিত নেই। প্রশ্ন ওঠে, দ্বিগুণেরও বেশি দামে কক্সবাজারের যেসব লবণচাষি এবার জমি ইজারা নিয়েছেনÑভরা মৌসুমে বাজারে পণ্যটির দামে অস্থিতিশীলতা দেখা দিলে তাদের পরিণতি কী হবে?
নিকট অতীতে লবণে উচ্চ মুনাফাই যে সংশ্লিষ্টদের এ কাজে উৎসাহিত করেছে, সে ব্যাপারে সন্দেহ নেই। নিজস্ব উৎপাদন সামগ্রিক বাজার পরিস্থিতিতে কী প্রভাব ফেলতে পারে, ব্যক্তি বা ব্যক্তিমালিকানাধীন প্রতিষ্ঠান পর্যায়ে এটা কারও ভাবনায় থাকার কথা নয়। লবণ উৎপাদনে বিনিয়োগ নিবন্ধনকারী প্রতিষ্ঠান এ ব্যাপারে সচেতন থাকলে এমন অবস্থা সৃষ্টি হতো না হয়তো। আমরা মনে করি, অভ্যন্তরীণ বাজারে ভোক্তা ও শিল্প চাহিদা বিবেচনায় রেখে শিগগিরই লবণ উৎপাদনের লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ দরকার। তাহলে উৎপাদনসংশ্লিষ্টরা এ ব্যাপারে ভাবনা ও উপযুক্ত সিদ্ধান্ত নেওয়ার সুযোগ পাবেন।
দেশের লবণচাষিরা যে উৎসাহব্যঞ্জক দাম পাচ্ছেন না, সে অভিযোগ আমরা শুনে আসছি দীর্ঘ সময় ধরে। ভোক্তাদের পক্ষ থেকেও অভিযোগ, চাষি পর্যায়ে যে পণ্যটির কেজি মাত্র দুই টাকা বা তারও কম, প্যাকেটজাতের পর তার দাম ৩৫-৩৮ টাকা হবে কেন? প্রক্রিয়াকরণ ও বাজারজাতকরণে সংশ্লিষ্টদের মুনাফাসচেতনতা থাকাটা স্বাভাবিক। তাই বলে কোনো পণ্যে এত চড়া মুনাফা মেনে নেওয়া যায় না। আমরা মনে করি, এর যুক্তিসংগত সমাধান দরকার। নইলে বিনিয়োগ বৃদ্ধি শুধু এ খাতের মধ্যস্বত্বভোগীদের জন্যই পৌষ মাস হবে। নিকট অতীতে কয়েকটি করপোরেট প্রতিষ্ঠানকে আমরা দেখেছি লবণ প্রক্রিয়াকরণে বড় বিনিয়োগ করতে। বাজারে অপরিশোধিত লবণের জোগান বৃদ্ধি অবশ্য তাদের জন্য কোনো শঙ্কার কারণ নয়। নানা কারণে এটাকে বরং ইতিবাচক হিসেবে দেখবে তারা। আমরা চাই লবণ উৎপাদনে বিনিয়োগ বৃদ্ধিতে সাধারণ চাষিরা যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হন, সেটা নিশ্চিত হোক। ভোক্তারা যেন অপেক্ষাকৃত কম দামে এ নিত্যপণ্য কিনতে পারেন, নিশ্চিত করা হোক সেটাও।
Add Comment