উচ্চ রক্তচাপ ও ডায়াবেটিসের রোগীদের ধারণা, স্যালাইন খেলে রক্তচাপ ও সুগার বাড়ে, তাই খাওয়া যাবে না। কিন্তু মনে রাখবেন, যেকোনো মানুষেরই বমি বা ডায়রিয়া হলে পর্যাপ্ত স্যালাইন খেতে হবে। এতে সিদ্ধান্তহীনতার কিছু নেই। প্রাথমিক ও জরুরি চিকিৎসার ক্ষেত্রে সবার জন্য একই নিয়ম।
প্রাথমিক চিকিৎসা বাড়িতে হলেও এরপর চিকিৎসকের কাছে বা হাসপাতালে নিতে হবে। কারও ক্ষেত্রে মুখে খাবার লবণ, বড়ি, আবার কারও ক্ষেত্রে ভর্তি করে শিরায় স্যালাইন দিতে হতে পারে। আবার লবণ কমে যাওয়ার লক্ষণ অনেক সময় স্ট্রোক ও মস্তিষ্কের রোগের সঙ্গে মিলে যায়। তাই নিশ্চিত হতে পরীক্ষা করা দরকার।
বয়স্ক ব্যক্তি ও দীর্ঘমেয়াদি রোগ কিংবা প্রস্রাব বাড়ানোর ওষুধ সেবনের ক্ষেত্রে বারবার সোডিয়াম কমে যাওয়ার প্রবণতা দেখা যায়। এসব ক্ষেত্রে চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে হবে কীভাবে এই বারবার লবণের ঘাটতি এড়ানো যায়। কারণ দূর করা গেলে চিকিৎসা সহজ।
সোডিয়াম কমার চিকিৎসা নিজে নিজে করা যায় না। সোডিয়ামের ঘাটতি পূরণের চিকিৎসা নির্ভর করে সোডিয়ামের মাত্রা, রোগীর শরীরে পানির মাত্রা এবং কতটুকু সময়ের মধ্যে ঘাটতি হয়েছে প্রভৃতির ওপর। দ্রুত সোডিয়ামের মাত্রা বাড়াতে গেলে হিতে বিপরীত হতে পারে।
জটিলতা: রক্তে লবণ কমে যাওয়ার পর সঠিক সময়ে চিকিৎসা না করলে স্নায়ু ও মস্তিষ্কের কার্যক্ষমতা একেবারে থেমে যেতে পারে। অর্থাৎ যেসব স্নায়বিক সমস্যা সৃষ্টি হয়, সেগুলো আর কখনোই স্বাভাবিক অবস্থায় আর ফিরে নাও আসতে পারে। রোগী কোমায় চলে যেতে পারেন।
লবণের ঘাটতি প্রতিরোধে করণীয়: অত্যধিক উষ্ণ তাপমাত্রার স্থানে গেলে বা রোদে কাজ করার জন্য খুব ঘাম হলে ওরস্যালাইন মেশানো পানি পান করতে হবে। জ্বর হলে বা অসুস্থতার জন্য কিছু না খেতে পারলে অন্তত ওরস্যালাইন মেশানো পানি পান করা চাই। বমি ও পাতলা পায়খানা হলে অবশ্যই প্রতিবার ওরস্যালাইন খাবেন। বমির জন্য স্যালাইন রাখতে না পারলে শিরায় স্যালাইন নিতে হবে।
দীর্ঘমেয়াদি রোগে ভুগলে চিকিৎসকের পরামর্শমতো পানি ও লবণ গ্রহণ করা আবশ্যক। জেনে নিতে হবে কখন স্যালাইন সেবন করা যাবে বা যাবে না। বয়স্ক ব্যক্তিরা যারা খুব কম খাদ্য গ্রহণ করেন বা নাকে নল দিয়ে বা তরল খাদ্য ছাড়া কিছু খেতে পারেন না, তাদের দৈনিক চাহিদা পূরণে তরল খাবারে লবণ দিতে হবে।
বারবার লবণ কমলে কিডনি রোগ, কোনো ওষুধের প্রভাব, হরমোনের ভারসাম্যহীনতা প্রভৃতি আছে কি না জানতে পরীক্ষা-নিরীক্ষা করতে হবে।
ডা. মো. মতলেবুর রহমান
সহযোগী অধ্যাপক, মেডিসিন বিভাগ ঢাকা মেডিকেল কলেজ