Print Date & Time : 24 June 2025 Tuesday 3:01 am

লভ্যাংশের পর মডার্ন ডায়িংয়ের দরপতন

নিজস্ব প্রতিবেদক: সাধারণত লভ্যাংশ ঘোষণার পর অধিকাংশ ক্ষেত্রেই কোম্পানির শেয়ারদরে ইতিবাচক প্রভাব পড়ে। লভ্যাংশ ঘোষণার কারণে সংশ্লিষ্ট কোম্পানির শেয়ারের প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ বেড়ে যায়। যে কারণে ওই কোম্পানির শেয়ারদর কিছুটা বাড়ে। কিন্তু মডার্ন ডায়িংয়ের ক্ষেত্রে এর বিপরীত চিত্র লক্ষ করা যাচ্ছে। লভ্যাংশ ঘোষণার পরও কোম্পানিটির শেয়ারদর নিম্নমুখী। আশানুুরূপ লভ্যাংশ না পাওয়ায় দরপতনের মূল কারণ বলে মনে করছেন বাজারসংশ্লিষ্টরা।

তথ্যমতে, গতকাল মডার্ন ডায়িং লিমিটেডের শেয়ারদর গতকাল মঙ্গলবার সর্বশেষ ২০৫ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে। কোম্পানিটির শেয়ার আগের দিনের চেয়ে আট টাকা ৯০ পয়সা কমেছে। গত এক বছরে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বনিম্ন ১৪৫ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ২৯৬ টাকা বেচাকেনা হয়েছে। গত সেপ্টেম্বরে কোম্পানিটির শেয়ার সর্বোচ্চ ২৮৪ টাকা বেচাকেনা হয়েছে। এর পর থেকে অধিকাংশ সময় কোম্পানির শেয়ারদর পতন হতে দেখা গেছে। এতে গত ১৬ অক্টোবর কোম্পানির শেয়ার ১৭৬ টাকা ৬০ পয়সায় লেনদেন হয়। পরবর্তী সময়ে লভ্যাংশকে কেন্দ্র করে কোম্পানির শেয়ার ফের বাড়ে, যা সর্বোচ্চ ২৪২ টাকা ৩০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। এর মধ্যে কোম্পানিটি আট শতাংশ নগদ লভ্যাংশ ঘোষণা করে। এতে গতকাল পর্যন্ত কোম্পানির শেয়ারদরে নিম্নমুখী ধারা অব্যাহত রয়েছে।

বাজারসংশ্লিষ্টরা বলছেন, বাজারে বেশ কিছুদিন ব্যাংকের শেয়ারদরে উত্থান ধারা অব্যাহত ছিল। এর ফলে বাজার চাঙা ছিল। কিন্তু জুন ক্লোজিং বিভিন্ন কোম্পানির ডিক্লারেশন এলেও বাজারের লেনদেনে তেমন কোনো প্রভাব পড়ছে না। তবে বিভিন্ন কোম্পানির লভ্যাংশ সামনে রেখে ওই কোম্পানির দর বাড়তে দেখা যায়। কিন্তু আশানুরূপ লভ্যাংশ না পাওয়ায় পরবর্তী সময়ে বিনিয়োগকারীরা আগ্রহ হারায়। এতে ওই কোম্পানির দর হারাতে দেখা যায়।

এ সম্পর্কে পুঁজিবাজার বিশ্লেষক অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, ‘জুন ক্লোজিং কোম্পানিগুলো লভ্যাংশ ঘোষণা করছে। কিছু কোম্পানি ভালো লভ্যাংশ দিচ্ছে। আবার কিছু কোম্পানির লভ্যাংশ কম দেওয়ায় সেগুলোর প্রতি বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ কমছে।’

মডার্ন ডায়িংয়ের লভ্যাংশের ইতিহাস পর্যালোচনায় দেখা গেছে, কোম্পানিটি ২০১২ সালে শেয়ারহোল্ডারদের জন্য সাত শতাংশ লভ্যাংশ দেয়। পরের দুই বছর আট শতাংশ করে লভ্যাংশ দিয়েছিল। ২০১৫ সালে কোম্পানিটি ১০ শতাংশ লভ্যাংশ দিলেও পরের বছর আট শতাংশে নেমে আসে, যা গত সমাপ্ত বছরেও অব্যাহত ছিল।

পুঁজিবাজারে ১৯৮৮ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন তিন কোটি ৫০ লাখ টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন এক কোটি ৩৬ লাখ টাকা। কোম্পানির শেয়ারসংখ্যা ১৩ লাখ ৬৮ হাজার। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ৬৪ দশমিক ৯৬ শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে পাঁচ দশমিক ১১ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ২৯ দশমিক ৯৩ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।

এদিকে কে অ্যান্ড কিউ লভ্যাংশ না দিলেও কোম্পানিটির শেয়ারদরে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ ছিল বেশ। কোম্পানিটির শেয়ার গতকাল ১১৬ টাকায় বেচাকেনা হয়েছে। আগের দিনের চেয়ে কোম্পানির শেয়ার ১৮ টাকা বেড়েছে। অথচ কোম্পানি গত পাঁচ বছরে লভ্যাংশ দেওয়ার কোনো ধরনের ইতিহাস নেই। কোম্পানিটির শেয়ার গত এক বছরে সর্বনি¤œ ২৪ টাকা থেকে সর্বোচ্চ ১৭০ টাকায় লেনদেন হয়েছে। লভ্যাংশকে সামনে রেখে কোম্পানিটির শেয়ারদর না বাড়লেও নো-ডিভিডেন্ডে প্রতিষ্ঠানটির শেয়ারে ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে। চলতি বছরের শুরু থেকে কোম্পানিটির শেয়ারদর বাড়তে থাকে। গত আগস্টের শেষ দিন কোম্পানির শেয়ার সর্বোচ্চ ১৫৮ টাকা ৮০ পয়সায় লেনদেন হয়েছে। এর পর থেকে কোম্পানির শেয়ার বেশিরভাগ সময়ই কমতে দেখা গেছে। এতে গত সোমবার কোম্পানির শেয়ার ৯৮ টাকায় লেনদেন হয়েছে। কিন্তু নো-ডিভিডেন্ডেও শেয়ারটিতে বিনিয়োগকারীদের আগ্রহ দেখা গেছে।

পুঁজিবাজারে ১৯৯৬ সালে তালিকাভুক্ত হওয়া কোম্পানিটির অনুমোদিত মূলধন ১০ কোটি টাকা এবং পরিশোধিত মূলধন চার কোটি ৯০ লাখ টাকা। কোম্পানির শেয়ারসংখ্যা ৪৯ লাখ দুই হাজার ৫৩০টি। এর মধ্যে উদ্যোক্তা পরিচালকদের কাছে ২৪ দশমিক শূন্য ছয় শতাংশ, প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের কাছে তিন দশমিক ৮৪ শতাংশ এবং সাধারণ বিনিয়োগকারীদের কাছে ৭২ দশমিক ১০ শতাংশ শেয়ার রয়েছে।