লভ্যাংশের মৌসুমে পুঁজিবাজারে উল্টো চিত্র

মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: ক্রমেই দীর্ঘ হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের প্রতীক্ষার প্রহর। বাজার ঘুরে দাঁড়াবে এমন প্রত্যাশা থাকলেও প্রতিদিনই এর উল্টো চিত্র দেখছেন তারা। ঘুরে দাঁড়ানোর বদলে প্রতিনিয়ত নাজুক হচ্ছে সার্বিক বাজার পরিস্থিতি। বিষয়টি ভাবিয়ে তুলছে সাধারণ বিনিয়োগকারী থেকে শুরু করে সংশ্লিষ্ট সবাইকে। তাদের অভিমত, এখন লভ্যাংশের মৌসুম চলছে। এ সময় বাজার পরিস্থিতি ভালো থাকার কথা, কিন্তু অজ্ঞাত কারণে পুঁজিবাজারে পতন অব্যাহত রয়েছে।

বাজার-সংশ্লিষ্টদের মতে, লভ্যাংশ মৌসুমে বাজার এমনিতেই ভালো থাকার কথা। বিশেষ করে সামনে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ আসবে। বিনিয়োগকারীরা সব সময় এসব কোম্পানি থেকে সন্তোষজনক লভ্যাংশ আশা করেন। সে কারণে এসব শেয়ারের প্রতি তাদের আগ্রহ বেশি থাকে। ফলে বাজারের প্রতি তাদের আগ্রহ বাড়ে। কিন্তু এখন তার উল্টো চিত্র দেখা যাচ্ছে। অবশ্য এর কোনো বিশেষ কারণ খুঁজে পাচ্ছেন না সংশ্লিষ্টরা।

প্রাপ্ত তথ্যমতে, নতুন বছরে এ পর্যন্ত ডিএসইর প্রধান সূচকের পতন হয়েছে ৪১২ পয়েন্ট। গত বছরের শেষ দিনে ডিএসইর সূচক ছিল ছয় হাজার ২৪৪ পয়েন্ট, গতকাল যা স্থির হয়েছে পাঁচ হাজার ৮৩২ পয়েন্টে। গতকালও ডিএসইর প্রধান সূচক কমেছে প্রায় ৭৫ পয়েন্ট। এর পাশাপাশি তালিকাভুক্ত ২৪৩ কোম্পানির শেয়ারের দর কমেছে, যা অস্বাভাবিক বাজারচিত্র বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।

এ প্রসঙ্গে বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ অধ্যাপক আবু আহমেদ বলেন, বর্তমানে বাজারে যে পতন চলছে তা অস্বাভাবিক। আমার মনে হয় এর বিশেষ কোনো কারণ নেই। তিনি বলেন, সামনে ব্যাংক ও আর্থিক প্রতিষ্ঠানের লভ্যাংশ ঘোষণার সময় আসছে। এসব কোম্পানি থেকে বিনিয়োগকারীরা ভালো রিটার্ন আশা করেন। এই ইস্যুতেই বাজার ভালো থাকার কথা। তবে বাজার ঘুরে দাঁড়াবে বলে আশাবাদ ব্যক্ত করেন তিনি।

বিভিন্ন ইস্যুতে গত বছরের শেষ দিক থেকে বাজারে পতন শুরু হয়। নতুন বছরে আরও খারাপ হয় পরিস্থিতি। বছরের প্রথম দিকেই শুরু হয় ব্যাংক শেয়ারের দরপতন। বাজারের শক্তিশালী খাত হওয়ায় এর প্রভাব পড়ে সার্বিক বাজারে। এ কারণে অন্য শেয়ারের দরপতন শুরু হয়। এরপর মুদ্রানীতি নিয়ে নতুন আতঙ্কে পড়েন বিনিয়োগকারীরা। ফলে শেয়ারের দরপতন হতে শুরু করে। পরে সামনে চলে আসে বেগম খালেদা জিয়ার জিয়া অরফানেজ ট্রাস্ট মামলার রায়। সব মিলে অস্থির হয়ে পড়ে পুঁজিবাজার। ভয়ে পেয়ে স্বল্প দরে শেয়ার ছেড়ে দেন অনেক বিনিয়োগকারী। এরপর বাজার পরিস্থিতি কিছুটা অনুকূলে এলেও তা দীর্ঘমেয়াদি হয়নি।

এদিকে বাজার পরিস্থিতি ভালো রাখার জন্য তৎপর হয়ে উঠেছে সংশ্লিষ্ট সব প্রতিষ্ঠান। এর আলোকে বাজার স্থিতিশীল রাখার জন্য অর্থমন্ত্রীর কাছে কয়েকটি প্রস্তাব পাঠিয়েছে চট্টগ্রাম স্টক এক্সচেঞ্জ (সিএসই)। বাজার কীভাবে ভালো করা যায় তা নিয়ে বৈঠক করেছেন মাচেন্ট ব্যাংক কর্তৃপক্ষ ও শীর্ষ ব্রোকারেজ হাউজের মালিকরা। বিএসই-ও বাজারের দিকে সতর্ক দৃষ্টি রেখেছে। অন্যদিকে প্রাতিষ্ঠানিক বিনিয়োগকারীদের অংশগ্রহণ আগের চেয়ে বেড়েছে। কিন্তু এরপরও বাজারে তা আসল রূপে ফিরছে না।

এ প্রসঙ্গে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী বলেন, এ কথা ঠিক যে এখন বাজার পরিস্থিতি কিছুটা নাজুক। কিন্তু এই পরিস্থিতি দীর্ঘমেয়াদি হবে বলে মনে হয়। এতে বিনিয়োগকারীদের ভয় পাওয়ার কেছু নেই।

 

 

 

আর্কাইভ

রবি সোম মঙ্গল বুধ বৃহ শুক্র শনি
১০১১১২১৩১৪
১৫১৬১৭১৮১৯২০২১
২২২৩২৪২৫২৬২৭২৮
২৯৩০