মুস্তাফিজুর রহমান নাহিদ: পুঁজিবাজারে ২০১০ সালের ধসের পর অন্য সব খাত তুলনামূলক ঘুরে দাঁড়ালেও ব্যতিক্রম মিউচুয়াল ফান্ড। মাঝেমধ্যে এ খাতটিতে কিছু সম্ভাবনা তৈরি হলেও দ্যুতি ছড়ানোর আগেই তা বিলীন হয়ে গেছে। ফলে দীর্ঘ ছয় বছর কেটে গেলেও এ খাতের বিনিয়োগকারীদের গতি ফেরেনি। দিন দিন কমছে ফান্ডের ইউনিটের দর। অন্যদিকে ধারাবাহিকভাবে কমছে লভ্যাংশের হার। এক বছরের ব্যবধানে এ খাতের গড় লভ্যাংশ কমে গেছে ৬৭ শতাংশের বেশি। বিনিয়োগকারীরা যাকে লভ্যাংশে ধস বলে আখ্যায়িত করেছেন।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, ২০১৫ সালে তালিকাভুক্ত মিউচুয়াল ফান্ডের গড় লভ্যাংশের হার ছিল ৭৯ দশমিক ১৪ শতাংশ। ২০১৬ সালে তা উল্লেখযোগ্য হারে নেমে এসেছে ১২ দশমিক শূন্য চার শতাংশে। অর্থাৎ এক বছরের ব্যবধানে গড় লভ্যাংশ কমেছে ৬৭ দশমিক ৩৭ শতাংশ। লভ্যাংশ কমার দিক থেকে তালিকাভুক্ত অন্যান্য খাতের মধ্যে এটিই সর্বোচ্চ।
বিষয়টি নিয়ে আলাপ করলে বাজারসংশ্লিষ্টরা বলেন, মিউচুয়াল ফান্ডের একটি অংশ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করতে হয়। এখানে তাদের আয়ের সুযোগ থাকে। ফলে বাজারের অবস্থা বাড়া-কমার সঙ্গে সঙ্গে মিউচুয়াল ফান্ডের আর্থিক অবস্থার পরিবর্তন হয়। তাদের অভিমত, কয়েক বছর ধরে দেশের পুঁজিবাজারের সার্বিক পরিস্থিতি ভালো নয়। যে কারণে ফান্ডগুলো পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করে সুবিধা করতে পারছে না। যার প্রভাব পড়ছে এর ব্যবসায়। ফলে কমে যাচ্ছে লভ্যাংশ দেওয়ার হার। এদিকে ফান্ডগুলো সত্যি সত্যি পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছে কি না, তা নিয়েও সন্দেহ পোষণ করেন সংশ্লিষ্টরা। ফান্ডগুলো গতিবিধি সন্দেহজনক উল্লেখ করে তারা বলেন ফান্ডগুলোর জবাবদিহি কম। তারা সত্যি সত্যি পুঁজিবাজারে কী পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করছে তা খতিয়ে দেখা দরকার।
এ প্রসঙ্গে ডিএসইর সাবেক প্রেসিডেন্ট ও বর্তমান পরিচালক শাকিল রিজভী শেয়ার বিজকে বলেন, মিউচুয়াল ফান্ড ঘুরে না দাঁড়ানোর প্রধান কারণ হচ্ছে বিনিয়োগকারীদের অনাগ্রহ। আর এ অনাগ্রহের কারণ হচ্ছে তারা মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিট নিয়ে বড় ধরনের লোকসানে রয়েছেন। তিনি বলেন, ফান্ডগুলোতে বিনিয়োগ না করার আরেকটি কারণ হচ্ছে ফান্ডগুলোর জবাবদিহি না থাকা। ফান্ডগুলো তাদের অর্থ পুঁজিবাজারে বিনিয়োগ করছে নাকি অন্য কোথাও রেখে দিচ্ছে তা আমরা জানি না। ফলে এসব ফান্ডে বিনিয়োগ নিয়ে সব সময় একধরনের ধোঁয়াশা থেকেই যাচ্ছে। এর থেকে পরিত্রাণ পাওয়া দরকার।
একই প্রসঙ্গে নাম প্রকাশ না করার শর্তে ডিএসইর একজন সাবেক প্রেসিডেন্ট বলেন, এক বছরের ব্যবধানে লভ্যাংশের হার ৬০ শতাংশের বেশি কমে যেতে পারে, এটা বিশ্বাসযোগ্য নয়। বাজার ভালো নয়, এই দোহায় দিয়ে ফান্ডগুলো ইউনিট হোল্ডারদের ঠকিয়েছেন।
বাজারসংশ্লিষ্টদের মতে, ২০১০ সালের ধসে সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে মিউচুয়াল ফান্ডের বিনিয়োগকারীরা। ওই সময় মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের দর সবচেয়ে বেশি কমে যায়, যার রেশ এখনও কাটেনি। ফলে মিউচুয়াল ফান্ড থেকে তারা রিটার্ন পাচ্ছেন না।
প্রাপ্ত তথ্যমতে, পুঁজিবাজারে তালিকাভুক্ত ৩৫টি মিউচুয়াল ফান্ডের মধ্যে ৮৬ শতাংশ বা ২৭টির ইউনিট দর অবস্থান করছে অভিহিত মূল্যের নিচে। এ রকম মিউচুয়াল ফান্ডগুলো হচ্ছে, এআইবিএল প্রথম ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড, এশিয়ান টাইগার সন্ধানী লাইফ গ্রোথ ফান্ড, ডিবিএইচ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ইবিএল এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড, এক্সিম ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ফার্স্ট বাংলাদেশ ফিক্সড ইনকাম ফান্ড, গ্রামীণ ওয়ান স্কিম টু, গ্রিন ডেল্টা মিউচুয়াল ফান্ড, ফার্স্ট জনতা ব্যাংক মিউচুয়াল ফান্ড, প্রাইম ফাইন্যান্স মিউচুয়াল ফান্ড, এবি ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ও ইবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড।
এ তালিকায় আরও রয়েছে রিলায়েন্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান, সাউথইস্ট ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ট্রাস্ট ব্যাংক ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ও ভ্যানগার্ড এএমএল বিডি ফাইন্যান্স একইভাবে আইসিবি দ্বিতীয় এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড, আইসিবি তৃতীয় এনআরবি মিউচুয়াল ফান্ড, আইসিবি এএমসিএল দ্বিতীয় মিউচুয়াল ফান্ড, আইসিবি এমপ্লয়িজ প্রভিডেন্ট মিউচুয়াল ফান্ড। অন্যান্য ফান্ডের মধ্যে রয়েছে এনএলআই ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, ফিনিক্স ফাইন্যান্স ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, পিএইচপি মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান, পপুলার লাইফ ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, প্রাইম ব্যাংক ফার্স্ট আইসিবি এএমসিএল মিউচুয়াল ফান্ড।
এছাড়া আইসিবি এএমসিএল সোনালি ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, আইএফআইসি ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড, আইএফআইএল ইসলামিক মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান, এলআর গোবাল মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান, এমবিএল ফার্স্ট মিউচুয়াল ফান্ড ও এনসিসি ব্যাংক মিউচুয়াল ফান্ড ওয়ান এ তালিকায় রয়েছে। তবে বর্তমানে বাজার ঘুরে দাঁড়ানোতে মিউচুয়াল ফান্ডের ইউনিটের চাহিদা সৃষ্টি।
Add Comment